ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মভিটায় চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন কবি আল মাহমুদ

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জন্মভিটায় চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন কবি আল মাহমুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার রাতেই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন কবি। আর শনিবার বিদায় যাত্রায় নিয়ে গেলেন ভক্ত-অনুরাগী ও শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসা। পুষ্পাঞ্জলি অর্পিত সেই ভালবাসাকে সঙ্গী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্মভূমিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। বাংলা একাডেমি ও জাতীয় প্রেসক্লাবে দুই দফা শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ‘সোনালি কাবিন’-এর এই কবিকে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি প্রেসক্লাবে জানাজায় বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি জানাজা। এরপর কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌড়াইলের জন্মভিটা মোল্লাবাড়ির উদ্দেশে। কবির ছেলে মীর মোহাম্মদ মনির জনকণ্ঠকে জানান, শনিবার রাতে মরদেহ রাখা হবে জেলা শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। আজ রবিবার সেখানেই কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন এলাকাবাসী। এরপর সেখানে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে কবিকে। শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কবি আল মাহমুদ। এর পর ধানমণ্ডির তাকওয়া মসজিদে কবিকে গোসল করিয়ে বিশেষ এ্যাম্বুলেন্স করে রাতে রাজধানীর মগবাজারের বাসভবনের সামনে রাখা হয় মরদেহ। সেখান থেকে শনিবার বেলা পৌনে বারোটায় আল মাহমুদের মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব। একাডেমির নজরুল মঞ্চে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শুরুতেই বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, একাডেমির সচিব মোঃ আবদুল মান্নান ইলিয়াসসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাঁওজাল, কবি-সাংবাদিক সোহরাব হাসান, লিটল ম্যাগাজিন নিসর্গ-এর সম্পাদক সরকার আশরাফ, কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক সুমন রহমান, অনুবাদক আলীম আজিজ, কবি হাসান মাহমুদ, কবি জাকির আবু জাফর, ড. ফজলুল হক তুহিন, কবি সরকার আমিন, কবি জাফর আহমদ রাশেদ, অলকা নন্দিতা, শিল্পী শাহীনুর রহমান, কবি সালেহীন শিপ্রা, কবি পিয়াস মজিদ, আলতাফ শাহনেওয়াজ, আবিদ আজমসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, সাতচল্লিশের দেশভাগের পর বাংলা কবিতায় যারা নতুন স্বপ্নের বীজ বুনেছিলেন তাদের একজন আল মাহমুদ। তিনি বাংলা কবিতায় নতুন ধারা নির্মাণ করেছিলেন। ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য কবিদের একজন। সোনালি কাবিনের মতোই তার কবিতা বাংলা কাব্যভুবনে এঁকেছে সোনালি দিগন্ত। রাষ্ট্রীয় সম্মাননার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ যখন কাউকে কবি হিসেবে মেনে নেন, তখন রাষ্ট্রও তাকে কবি হিসেবে মেনে নেয়। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালীয়ানা এবং এর সঙ্গে যা কিছু মঙ্গলময় সেদিক থেকে কবি আল মাহমুদকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে। তৃণমূলে তার জন্ম, সেই তৃণমূলেই তিনি ফিরে যাবেন- এটাই আমার কাম্য। নগর জীবনেও তিনি কবিতার মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনকে তুলে এনেছেন। তিনি পরবর্তীতে প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবেন। বাংলা একাডেমি থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে। সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে-একাংশ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে-একাংশ)। বিএনপির পক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আজম খান শ্রদ্ধা জানান। আরও শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি জাকির আবু জাফর, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ প্রমুখ। পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলে মীর মোহাম্মদ মনির বলেন, আব্বার ইচ্ছা ছিল, শুক্রবারে যেন তার মৃত্যু হয়। তার সেই চাওয়াটাই পূর্ণ হয়েছে। এ সময় তিনি তার পিতার অজান্তে কোন ভুল-ত্রুটি হলে তার জন্য ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানান। এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিষয়ে সবসময় সোচ্চার ছিলেন আল মাহমুদ। নিজেদের স্বার্থেই আমরা তাকে বাঁচিয়ে রাখব এবং বারবার তার কাছে ফিরে যাব। এ সমাজ নিয়ে তার দেখা স্বপ্নের বাস্তবায়ন হোক- এটাই আমার প্রত্যাশা।
×