ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিশনের কাজে আগ্রহ বাড়ছে

শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরতরা এনেছেন ৪ হাজার ১০১ কোটি

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরতরা এনেছেন ৪ হাজার ১০১ কোটি

শংকর কুমার দে ॥ প্রতিবছর বাড়ছে জাতিসংঘ মিশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কর্মরতের সংখ্যা। ৩০ বছরে জাতিসংঘে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে অর্জন করেছেন ৪ হাজার ১০১ কোটি একলাখ ৫৪ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। সৎভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন একটি আকর্ষণীয় চাকরি। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে অনেক প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার আগ্রহ এখন প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ মিশনে কাজ করার সুযোগকে অনেকেই সৎভাবে অতিরিক্ত উপার্জনের একটি মাধ্যম মনে করার কারণে চাতক পাখির মতোই প্রত্যাশায় থাকেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যেকোন বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণের দেশের জন্য সুনাম অর্জন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সামলম্বী হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। এ লক্ষ্যে সেই শুরু থেকেই শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন সশস্ত্র বাহিনীর পর পরই পুলিশ সদস্যরাও। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের যোগদানের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ। এর পরের বছর ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পুলিশও। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ছয়টি মিশন নিয়োজিত। বর্তমানে এসব মিশনে ৮০৬ পুলিশ সদস্য কর্মরত। ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত হয় পুলিশ। এর পর থেকে গত ৩০ বছরে এ পর্যন্ত পুলিশের ১৮ হাজার ৮৪৬ সদস্য মিশন শেষ করেছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে নিয়োজিত জনবল ও সরঞ্জামের ভাতা বাবদ পুলিশ এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১০১ কোটি একলাখ ৫৪ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা মিশন এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দেয়া, দাঙ্গা দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সহায়তা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২০ সদস্য শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে এসেছেন এমন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে গেলে তারা দেশে যে বেতন-ভাতা পেতেন সেটাও পেয়ে থাকেন। সঙ্গে মিশনে কাজ করার জন্য জাতিসংঘ থেকে আলাদা ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই ভাতার ২০ শতাংশ মিশনে থাকা অবস্থায়ই দেয়া হয়ে থাকে। দেশে ফিরে আসার পর বাকি অর্থ পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়ে থাকে। সর্বশেষ গত ২ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুদানের দারফুর ও কঙ্গো মিশন শেষ করে দেশে আসা পুলিশ সদস্যদের অর্থ পরিশোধ করে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ইউএন এ্যাফেয়ার্স) নাসিয়ান ওয়াজেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। জাতিসংঘ থেকে পাওয়া এই অর্থের ১০ ভাগ পেয়ে থাকে সরকার।
×