ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারী পালাকার বিউটি

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 নারী পালাকার বিউটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রা বাংলাদেশের লোকনাট্য সম্পদ। অজস্র শিল্পী কুশলীর সঙ্গে জড়িত। যাত্রা দলের সংখ্যা কম নয়। সরকারী হিসাব মতে নিবন্ধন নিয়েছে ১০৬টি দল। একটি করে দলে পালা থাকে ১৪-১৫টি করে। তাতে বিপুল পরিমাণে পালার প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশীয় পালাকারের পালায় এত সংখ্যক দলের চাহিদা মেটে না। ফলে পেশাদার দল মালিকেরা বরাবরই দল সাজান কলকাতার পালায়। আর এই সব পালার গল্প থাকে কলকাতার। ভাব-ভাষা-ছন্দ ধরতে দর্শকের কষ্ট হয়। তারপরও যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই ধারা। আর পালা সঙ্কট উপলদ্ধি করে যারা পালা রচনা করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছেন প্রিন্সেস বিউটি। তিনি একজন ভাল অভিনেত্রীও। চেহারাতেও তার ছাপ রয়েছে। অভিনয় নৈপুণ্যও প্রশংসনীয়। দর্শকের কাছে তিনি প্রিন্সেস হিসেবেই খ্যাত। তবে নৃত্যের প্রিন্সেস নয়। আর সেই প্রিন্সেস অভিধাটি তিনি জুড়ে দিয়েছেন পালাকার অভিধায়। প্রিন্সেস বিউটি বাংলাদেশের একজন নারী পালাকার। চলমান নারী পালাকারের মধ্যে তিনি প্রথম যদিও অভিনেত্রী জ্যোৎস্না বিশ্বাস একটি পালা লিখে নিজের দলে কয়েকটি মঞ্চায়ন করেছিলেন কিন্তু সেই পালার সন্ধান আর যেমন পাওয়া যায় না, তেমনি আর কোন পালা লিখেছেন বলে জানাও যায় না। ফলে প্রিন্সেস বিউটিকে দেশের একমাত্র নারী পালাকার হিসেবে গণ্য করা যায়। পালা লেখার আগে বিউটি অভিনয় করেছেন দেশের পেশাদার যাত্রার দলে। এখনও করছেন এ্যামেচার শিল্পী হিসেবে। পেশাদার যাত্রার খ্যাতিমান নট-নির্দেশক জাকির হাসানের হাত ধরে প্রথম সুকল্যাণ বসুর নাট্য মঞ্জুরি অপেরাতে যান বিউটি। পরে অতুল সরকারের চৈতালী অপেরাতে। নৃত্য-গীত অভিনয়ে পূর্ব দক্ষতার দরুন দলে তিনি শুরু থেকেই সহনায়িকা। বর্তমানে হালের হিট নায়িকার তালিকায়। এর পর ‘বৈকালী অপেরা’ নামে আরেকটি দলে মাঝ মৌসুম পর্যন্ত ছিলেন তিনি। শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর অনিয়মিত বেতন ব্যবস্থার কারণে আর পেশাদার দলে যান না বিউটি। বর্তমানে পালা লেখাতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি। রক্ষণশীলতা আর রুচিবোধ তাকে পেশাদার দলে থাকার মানসিকতা গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর পালা সঙ্কট তাকে ব্যথিত করে। ফলে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা আর কষ্ট স্বীকার করেও অব্যাহতভাবে পালা যাচ্ছেন তিনি। দেশের গিন্ডি পেরিয়ে কলকাতার নাছিরনগর আর গুজরাটে তার পালাভিনয়ের খবর পাওয়া গেছে। পালাকার প্রিন্সেস বিউটির পুরো নাম প্রিয়াংকা তাজমীম বিউটি। থাকেন নেত্রকোনার সাতপাই পালপাড়ায়। বাবার চাকরি সূত্রে জন্ম চট্টগ্রামের ডবলমুড়িং। পিতৃদত্ত বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও। প্রচন্ড তেজস্বী ও আত্ম সম্মানবোধের অধিকারী অভিনেত্রী-পালাকার প্রিন্সেস বিউটি। পালা রচনায় স্বতন্ত্রী ধারার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন- এমনটি যাত্রার অনেকেই স্বীকার করেন। বর্তমান তার তিনটি প্রকাশিত পালা ‘মা কেন পতিতা’, ‘রাজ নর্তকী‘, ‘ছেলের রায়ে মায়ের ফাঁসি’। তাতে দেখা গেছে তিনখানা পালাই উৎকৃষ্ট মানের। গল্প যেমন জটিল হয়েও সরল, ভাষাও তেমনি গতিশীল-প্রাণবন্ত। অভিনয়ে যেমন শিল্পসত্ত্বার দ্রোহ চেতনা থেকে তিনি প্রচলিত গন্ডি ভাঙতে চেষ্টা করেছেন- পালা রচনার ক্ষেত্রেও তেমনি সমকালীন চিন্তা চেতনার প্রয়োগ ঘটিয়ে সফলতা পেয়েছেন। তার সকল শিল্পকর্মে আধুনিক মনস্কতা, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সমন্বয় ঘটেছে। দেশীয় যাত্রাভিনয় এবং পালার মানোন্নয়নে তার অবদান গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকার করতে হবে পালাকার বিউটিও বলেন, আমরা যারা পালা লিখি বা অভিনয় করি, আমাদের সমকালীন চিন্তা চেতনা ও জীবন ঘনিষ্ঠ উপলব্ধি থাকতে হবে। তবেই সার্থক অভিনেতা কিংবা ভাল পালাকার হওয়া সম্ভব।
×