ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাণীশংকৈলে পানকৌড়ির নিরাপদ আবাস

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাণীশংকৈলে পানকৌড়ির নিরাপদ আবাস

জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় কেউটান গ্রামে দুটি শিমুল গাছ পাঁচশতাধিক পানকৌড়ি অস্থায়ীভাবে বাস করছে। শীত থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলবদ্ধভাবে আশ্রয় নিয়েছে মাছ শিকারি এই পাখিগুলো। শীতের শুরুতে একই গাছে প্রতি বছর আশ্রয় ন্যায় পাখিগুলো। সকাল হলে বেরিয়ে পড়ে আহারে। আর বিকেল হলেই ফিরতে শুরু করে কালো বর্ণের এই পাখিগুলো। এলাকার মানুষও তাদের দেখভালে কিছুটা দায়িত্বও নিয়েছেন। কারণ পাখি শিকারিদের আনাগোনাও এই এলাকায় বেশ। কেউ আসে বন্দুক নিয়ে আবার কেউবা তীরধনুক। স্থানীয়রা জানায়, পানকৌড়ি পাখির অভয়াশ্রম গড়ে উঠেছে, তাই শীত আসার আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে এই পাখিগুলো। পাখিগুলো কার্তিক মাসের শেষে আসে আর ফাল্গুনের মাসে চলে যেতে শুরু করে। রাণীশংকৈল-কাঁঠালডাঙ্গী সড়কে কেউটান নামক গ্রামে যাদব রায়ের শিমুল গাছে একদশক ধরে বসবাস করছে এই পানকৌড়ি পাখি। এ বছর পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাশে সাদেক আলীর আরও একটি শিমুল গাছে ঠাঁই নিয়েছে। গাছের চারপাশের ডাল ঘিরে পানকৌড়ি পাখি। ব্যস্ত সড়কের পাশেই শিমুল গাছ দুটি লোকালয়ে প্রকৃতির শোভা ছড়িয়ে আছে। সারাদিন লোক সমাগম থাকলেও এটিকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে পাখিগুলো। শিমুল গাছের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে কুলিক নদী। এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিরাজ করছে এখানে। আহার করে পাখিগুলো যখন গাছে এসে আবার এক সঙ্গে মিশে যায়। তখন একত্রিত হওয়ার আনন্দ যেন তাদের বিমোহিত করে তোলে। নিজেদের ভাষায় ডাকাডাকি করতে থাকে। তাদের ডাক শুনে এলাকাবাসী সত্যি খুব আনন্দ পায়। মুগ্ধ হয়ে যায় সকলে। এলাকাবাসীর কাছে পাখিগুলো মৌসুমি অতিথি পাখি নয়, যেন তাদের পরিবারের সদস্য হয়ে পড়েছে। নিজ পরিবারের সদস্যদের মতো এরাও এলাকার প্রতিটি মানুষের কাছে আপনজন হয়ে উঠেছে। কেউটান গ্রামের ফারুক জানায়, প্রতি বছর পাখিগুলো এখানে আসে। সারাদিন আহার শেষে শিমুল গাছে আশ্রয় নিয়ে রাত কাটায়। পাখিগুলো এলাকার মানুষের কাছে খুব প্রিয় হয়ে গেছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু শিকারি বন্দুক দিয়ে দূর থেকে গুলি করে। এতে পাখিগুলো খুব ভয় পায়। গাছের মালিক যাদব রায় জানান, দশ বছর ধরে পাখিগুলো তার গাছে আশ্রয় নিয়েছে। এজন্য কিছুটা ক্ষতি হলেও তা স্বীকার করে নিয়েছি। ১০ বছর আগে এই শিমুল গাছ থেকে প্রতি বছর তুলা বিক্রি করে আয় হতো ৮-১০ হাজার টাকা। এখন আর এক টাকাও হয় না। বরং আশপাশের ফসল অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পরেও ক্ষতি মনে হয় না। পাখিগুলোর ভাল বাসায় আমি মুগ্ধ। যাদবের স্ত্রী দয়া রাণী বলেন, পাখিগুলো যখন প্রথমে আসে খুব খারাপ লাগছিল মনে হচ্ছিল এগুলো কখন যাবে। কিন্তু এখন পাখিগুলো না থাকলে ভাল লাগে না। পাখিগুলো ৩ মাস আমাদের গাছে থাকে খুব ভাল লাগে চলে গেলে খুব কষ্ট লাগে। এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রায়হান আলী জানান, শীতকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পাখিগুলোর মাধ্যমে যেন এলাকায় পশুপাখির রোগ জীবানু না ছড়ায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ সেজন্য সজাগ আছে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমি আফরিদা বলেন, পাখি শিকার বন্ধে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কেউ যদি আইন অমান্য করে তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। -এস এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও থেকে
×