ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেলার বই ॥ হাওয়ানগরে পারুলফুল

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মেলার বই ॥ হাওয়ানগরে পারুলফুল

কবি মারুফ রায়হান আশির দশক থেকে কবিতা লিখছেন। এ পর্যন্ত তাঁর ১৮টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর বইমেলার প্রথম দিনই এসেছে তাঁর নতুন কবিতার বই ‘হাওয়ানগরে পারুলফুল’। প্রকাশ করেছে চিত্রা প্রকাশনী (মেলায় স্টল নং ৫৬৮)। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সোহেল আশরাফ। মূল্য ১২০ টাকা। উল্লেখ্য, চিত্রা প্রকাশনী থেকে এর আগে বেরিয়েছে লেখকের উপন্যাস- রানী ও কেরানি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ‘ধ্বনি আর ধ্যানী’। উপন্যাস-প্রবন্ধ-কবিতা- এই তিনটি গ্রন্থ একসঙ্গে একটি মোড়কে পাওয়া যাচ্ছে মেলায়- ‘তিন রকম তিন বই’ শিরোনামে। বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্য রাখা হয়েছে ৩০০ টাকা। হাওয়ানগরে পারুলফুল কবিতাগ্রন্থে রয়েছে চৌত্রিশটি কবিতা। ছয়টি কবিতার সঙ্গে রয়েছে চিত্রকর্ম। বহুবর্ণিল প্রেমের ছন্দোবদ্ধ পঙক্তিমালা এবং সময়ের কণ্ঠস্বর ধারণ করেছে এই কবিতার বই। নিকট অতীতের সামাজিক অন্যায় ও পাপাচার এবং বিশ্বের রক্তপায়ী তৃষ্ণার কথা যেমন ফুটে উঠেছে গ্রন্থের নানা কবিতায়, তেমনি ব্যক্তির স্বপ্ন, সাহস ও সংগ্রামের চিত্রও রয়েছে। হাওয়ানগর এক প্রতীকী জনপদ, যেখানে বইছে তীব্র হাওয়া, হাওয়ায় দুলছে সব, বুঝি লণ্ড ভণ্ড হয়ে যাবে মানববসতি ও নিসর্গ। কবির হৃদয় সবচেয়ে রক্তাক্ত। হাওয়াকে সে জাপটে ধরতে চায় যাতে আর কোন পারুলফুল এই জনপদে নিষ্পৃষ্ট না হতে পারে। উল্লেখ্য, গ্রন্থে সদ্যপ্রয়াত দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি ও কাঁকন বিবি স্মরণে রয়েছে শোকার্ত পঙ্ক্তিমালা। শোভনা নির্ভীক সাংবাদিক শোভনা ইসলাম এ উপন্যাসের মূল চরিত্র। তাকে ঘিরে রয়েছে ভাল-মন্দ আরও ক’জন কুশীলব। সহসা একদিন এক সুন্দর সকালে একখানা পোস্টকার্ড পায় সে। ই-মেইল/ এসএমএসের যুগে এ রকম পোস্টকার্ডে লেখা চিঠি বিস্ময় জাগায় শোভনার মনে, সঙ্গে একচিমটি রহস্যবোধ। ধীরে ধীরে পোস্টকার্ডটি ওর ওপর ছায়া ফেলতে শুরু করে এবং এক সময় সে আবিষ্কার করে ওর আশপাশের চেনা-জানা মানুষগুলোর অবয়ব আমূল বদলে যাচ্ছে। এ পরিবর্তনে ওর নিজেরও তেমন কোন হাত নেই। কিন্তু অকুতোভয়, আত্মবিশ্বাসী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দৃপ্ত শোভনা নিজের সংগ্রামটুকু ঠিকই চালিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ উপন্যাসটি ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে বের করেছে বিভাস প্রকাশনী। দাম ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। এর লেখক মণীষ রায় আশির দশকে বেড়ে ওঠা গল্পকার। তার জন্মদিন ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল। জন্মশহর তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে বর্তমানে চাকরি করছেন বেসরকারী এক বিমা কোম্পানিতে। গল্প লেখায় হাতেখড়ি তার স্কুল জীবন থেকে। জাতীয় পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয় ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায়, আশির দশকের একেবারে গোড়ার দিকে। তারপর থেকে নিয়মিত লিখে চলেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাহিত্য পাতা ও সাময়িকীপত্রে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়’, মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে বের হয় নব্বই দশকের গোড়ায়। কাচের মেয়ে চানক্য বাড়ৈর ‘কাচের মেয়ে’ উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে বর্ণনা করা হয়েছে। উত্তম পুরুষে যিনি ঘটনাটি বলছেন; তিনি একজন নারী। তার নাম সানিয়া মেহজাবীন। তিনি উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন রাজধানীতে। শুরু হয় তার অন্য এক জীবন সংগ্রাম। মা হারা সানিয়া সবসময় যেন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যত বেড়েছে, আমার পেছনে বাবার খরচও তত বেড়েছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মফস্বলের কলেজ রেখে আমি যখন একটা বিশ^বিদ্যালয়ের বারান্দায় পা রাখব, খরচ তখন যে আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, এটাও সত্য।’ ফলে পড়তে এসে তার আশ্রয় হয় দুঃসম্পর্কের এক ফুপুর বাসায়। সেই রেহানা ফুপুর বড় ছেলে সালাউদ্দীন। একটা বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেন। বিয়ে করেছিলেন দীর্ঘ চার বছরের বনিবনাহীন দিন গুজরানের পরিণতিতে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সংসার টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টাস্বরূপ একটা সন্তানের প্রত্যাশাও অপূর্ণ থেকে যায় তাদের। ফুপুর ছোট ছেলে আলাউদ্দীন থাকেন ওমান। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার দ- হিসেবে প্রায় আড়াই বছর আগে তাকে প্রবাসজীবন মেনে নিতে হয়েছে। যদিও এখন পরিবারের সবাই মনে করছে, আলাউদ্দীন পাস করে দেশে রয়ে গেলে বরং পরিবারের বোঝা হয়েই তাকে থাকতে হতো। এমন একটি পরিবারে আশ্রয় নেয়া সানিয়ার জন্য চরম অস্বস্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বইটি প্রকাশ করেছে ভাষা চিত্র, প্রচ্ছদ করেছেন: কুশল ভট্টাচার্য, মূল : ৩৯৮ টাকা ইচ্ছেরা উড়ে গেছে গ্রামীণ অনুষঙ্গ এবং সাধারণ মানুষের যাপন ও অভিঘাতকে উপজীব্য করে গল্প লিখেন কাদের পলাশ। তার গল্পের শরীরজুড়ে প্রেম অথবা দ্রোহ, বেদনা অথবা প্রতিবাদ কিংবা তীব্র সমালোচনাÑ যা-ই থাকুক না কেন, কাদের পলাশ গল্পটি নিজস্ব ঢঙে বলতে চান। তার গল্প বলার ঢং চঞ্চল কোন তরুণীর মতো মুহূর্তেই পাঠকের মনে অপার মুগ্ধতা ছড়াতে পারে। এই মুগ্ধতা কখনও কখনও পাঠক-হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছায়াপাতেরও সূচনা করে। ‘ইচ্ছেরা উড়ে গেছে’ কাদের পলাশের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ। এ গ্রন্থে পরিচিত শব্দ ও স্বভাবসুলভ ঝরঝরে ভাষায় ১৮টি গল্প উপস্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি গল্পই প্রেমের, যদিও গল্পগুলো বহু বিচিত্র, আনন্দ-বেদনার রঙে সিক্ত ও স্বতন্ত্র্য। আশা করছি গ্রন্থটি পাঠপূর্বক পাঠক বহুবর্ণিল এবং একই সঙ্গে মধ্যবিত্ত জীবনের ছুটে চলা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে চৈতন্য। প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান। ১০৪ পৃষ্ঠার মূল্য রাখা হয়েছে ২২০ টাকা। স্টল নং ৫৩৫-৫৩৬। জলসংসার ছোটগল্প তো মানব জীবনের নানা খ-চিত্রেরই শিল্পরূপ। সে সব খ-চিত্র আমাদের চেনা-জানা। কিন্তু সেগুলো যে একেকটি অসাধারণ গল্প হয়ে উঠতে পারে, তা অনেকেরই অজানা থাকে। গল্পকার সেই জানা বিষয়গুলোকেই গল্পের আঙ্গিকে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেন। গল্পকার মঈনুল হাসানও তাই করেছেন। জীবনের বহুবৈচিত্র্যপূর্ণ খ-চিত্র নিয়েই তার গল্পের জগত। সার্থকভাবেই তিনি তার গল্পে সেগুলোকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। এই বইয়ের প্রতিটি গল্পের শরীরে চিন্তা আছে, প্রশ্ন আছে, বহুমাত্রিক বার্তা আছে। বিষয়বৈচিত্র্যের দিক থেকে তার প্রতিটি গল্পই আলাদা। বিষয়কে নান্দনিক উপায়ে বর্ণনার যে কৌশলের প্রয়োজন, সেই কৌশল মঈনুল হাসান সার্থকভাবেই প্রয়োগ করতে পেরেছেন। সেই কৌশলের কারণেই তার গল্পকে আলাদাভাবে চিনে নেয়া যাবে। গল্পগুলো পড়ার সময় পাঠকদের মনে হবে, একজন গল্পকারের যে অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা থাকা দরকার, মঈনুল হাসানের তা আছে। তিনি তার দেখা জীবন, সমাজ ও সময়চিত্রকে গ্রন্থভুক্ত নয়টি গল্পে সাজিয়েছেন। আর গল্প বলার জন্য যে নান্দনিক ভাষা সৃষ্টি করেছেন, সেই ভাষা বানানো নয়, স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাণের গভীর থেকে উঠে আসা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘জলসংসার’ প্রকাশ করেছে চৈতন্য। প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান। ১০৪ পৃষ্ঠার মূল্য রাখা হয়েছে ২২০ টাকা। স্টল নং ৫৩৫-৫৩৬। নদী পাঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে/সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।’ সহজ করে কবিতা লেখার এমন কঠিন কাজটি দীর্ঘদিন নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন কবি ইকবাল পারভেজ। তিনি কবিতা লিখেন অতি পরিচিত শব্দসহযোগে। সরল বাক্যে তিনি পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তি সাজান। তার অধিকাংশ কবিতার ভেতরে ক্ষুদ্র হলেও একটি গল্প থাকে। কবিতার শেষবাক্যে পাঠককে চমকে দেয়ার প্রবণতা তার রয়েছে। অনালোকিত মানুষ ইকবাল পারভেজ দীর্ঘদিন লিখলেও ‘নদী পাঠ’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোয় গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নাগরিক শূন্যতাবোধ ও রিক্ততার কথা। প্রেম, বিরহ, দ্রোহ, স্বদেশপ্রেম, ক্লেদ, ক্ষয়িত জীবনের কাব্যিক দৃশ্যাবলি এবং দর্শন নিয়ে ‘নদী পাঠ’ পাঠকের কাছে যাচ্ছে। ‘নদী পাঠ’ প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন। প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ। মূল্য ১৫০ টাকা।
×