ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ১১:০০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার শেরেবাংলানগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছয়টার দিকে আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ চেষ্টার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার পর হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দোতলা এবং তিন তলার প্রায় আড়াই হাজার রোগী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতাল, ইবনে সিনা, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি হাসপাতাল অর্থপেডিকসহ আশপাশের সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়া হয়। হাসপাতালে উদ্যোগে এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি প্রচেষ্টা রোগীর আত্মীয়স্বজনরা রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালের নিচে কম্পাউন্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের আনার পরপরই ডাক্তার নার্স এবং হাসপাতালের স্টাফরা কাজে যোগ দেন। আগুনে বিভিন্ন সরঞ্জাম পুড়ে গেলে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুন লাগার কারণে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। হাসপাতালে আগুন লাগার পর রোগীদের অনেকের মধ্যে আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় হাসপাতালটির মূল ভবন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখে সবার মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। তখনই রোগীদের অনেকে ভয়ে বেরিয়ে আসেন। আগুনের সূত্রপাত ঘটার পরপরই হাসপাতালটির বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। সোয়া ৭টার দিকে বিদ্যুত ফিরে আসে। এদিকে আগুন লাগার খবর শুনে সংসদ অধিবেশন থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুনে কারও হতাহতের খবর আমরা পাইনি। যত রোগী ছিল, তাদের সবাইকে বের করে আনা হয়েছে।’ ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান বলেন, হাসপাতালের তৃতীয় তলার স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। খবর পাওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে হাসপাতালে ছুটে যান। পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সেখানে আসে। তবে শুরুতেই পানি পাচ্ছিল না ওই ইউনিট। পরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পুকুর থেকে পানি তুলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ১৬ ইউনিট এক সঙ্গে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রোগীরা বিষয়টি প্রথম প্রথম স্বাভাবিক ভেবেছিল। ধোঁয়ার পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে যাওয়ার কারণে রোগীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রোগীদের সঙ্গে থাকা লোকজনসহ রোগী ও আশপাশের লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। মুহূর্তেই সেখানে হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজন হাজির হয়। খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। তাৎক্ষণিকভাবে খুব কাছেই থাকা মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে আগুন নেভানোর গাড়ি সেখানে হাজির হয়। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। শেষ পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্টেশন থেকে ১৬টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট সেখানে হাজির হয়। এরপর হাসপাতালটির তৃতীয় তলাসহ আশপাশ থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ রোগীদের লোকজন মিলে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। এদিকে হাসপাতালটিতে আগুন লাগার খবরে হাসপাতালজুড়ে মারাত্মক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগেনি, এমন ফ্লোর থেকেও রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে থাকেন। এদিকে আগুন লাগার পরপরই হাসপাতালে উৎসুক জনতার ভিড় জমতে শুরু করে। ভিড়ের কারণে সামনে রাস্তায় এক পর্যায়ে যান চলচল বন্ধ হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর রাত ১০টায় দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। হাসপাতালে স্টাফ নার্স ডাক্তাররা কাজে ফিরে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে পুলিশসহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর হাসপাতালে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে সব খোঁজখবর নেয়া শুরু হবে। তদন্ত কমিটি এদিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ফায়ার সার্ভিসের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক অপারেশনকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
×