ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ উৎসবে মুখর ঢাকা। কত রকমের উৎসব অনুষ্ঠান! তবে বসন্তের আলাদা আবেদন। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী এই বসন্ত। ফাল্গুনের প্রথম দিনটি তাই রাঙিয়ে দিয়ে গেছে। বুধবার রাজধানী শহরের সর্বত্রই ছিল বাসন্তী রঙের ছড়াছড়ি। তরুণ-তরুণীরা প্রিয় এই রঙে সেজে গোটা শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন। বইমেলার প্রবেশদ্বার খোলামাত্রই ঢেউ আছড়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমিতে। আর তার পরের দিন বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবস। ভালবাসার বিশেষ দিনে লাল রঙে সেজেছিলেন সবাই। প্রেমিক-প্রেমকিারা পরস্পরের হাতে ফুল তুলে দিয়ে পুনরায় বলেছেন, ‘ভালবাসি।’ এই প্রেম এই বসন্ত বইমেলার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ দুই দিবসে আলাদা মাত্রা পেয়েছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রথম দিন বাসন্তী রঙের মেলা। পরদিন, কী দারুণ ব্যাপার, লাল রঙের সমারোহ! লোক সমাগমও ছিল যে কোন দিনের চেয়ে বেশি। দলবেঁধে কিংবা জুটিবদ্ধ হয়ে ছেলে-মেয়েরা বই দেখেছে। বই কিনেছে। মেলার ১৪তম দিনে বৃহস্পতিবার নতুন বই এসেছে ১৪৭ টি। এদিন ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনা করেন আকিমুন রহমান, আনিসুল হক, রাহাত মিনহাজ, মাহবুব ময়ুখ রিশাদ এবং চাণক্য বাড়ৈ। গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞান ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। আলোচনা করেন রেজাউর রহমান, আবদুল কাইয়ুম এবং অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। প্রাবন্ধিক বলেন, একুশ শতকে মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান স্বাক্ষরতা, বিজ্ঞান মনস্কতা, বৈজ্ঞানিক কা-জ্ঞান ও বিজ্ঞান গবেষণা আলাদা বিষয়। বিজ্ঞানমনস্কতা হলো বিজ্ঞানের দৃষ্টি দিয়ে সবকিছু ভাবা ও করা। বিজ্ঞানমনস্ক হতে হলে বিজ্ঞানী হতে হবে, এমন নয়; যেকোন সচেতন মানুষ বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ আমাদের প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক কা-জ্ঞান, পরিশীলিত রুচিবোধ এবং বিচারবুদ্ধি ও মানবিক বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষ। এই লক্ষ্য তিরোহিত হলে সমূহ বিপদ। অগ্রসরমানতার পথ তাতে বন্ধুর এবং বাধাগ্রস্ত হবে নিঃসন্দেহে। তিনি বলেন, আমাদের যতœশীল হতে হবে শিক্ষামূলক কনটেন্টের প্রতি। আমরা আশা করি এ বিষয়ে গুণগত মান আরও বৃদ্ধি পাবে, বিজ্ঞান গবেষণায় প্রণোদনা যুগোপযোগী হবে, বৈশ্বিক মানের গবেষণা আমরা যাতে দেশেই করতে পারি সেই উদ্যোগ গৃহীত হবে, বিদেশে প্রশিক্ষিত বিজ্ঞান-গবেষক দেশেই থিতু হবেন, তারা রুচিশীল টেক্সট ও কনটেন্ট উপহার দেবেনÑ এ রকম বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত হলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’য় কোন পার্থক্য থাকবে না। ডিজিটাল দুনিয়ায় আমরা গর্বিত জাতি হিসেবে আবির্ভূত হব, এমনই স্বপ্ন আমাদের। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, বাংলা ভাষা সাহিত্য ও বিজ্ঞান ভাবনা কোন পরস্পরবিযুক্ত বিষয় নয় বরং আমাদের সাহিত্যে বিজ্ঞানের উপাদান জনমনে বিজ্ঞানবোধ সৃজনে ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক ভবিষ্যত নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তবে আমাদের কেবল প্রযুক্তিগত সমৃদ্ধিতেই সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না বরং গোটা জাতির মাঝে বিজ্ঞানভিত্তিক ইহজাগতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। আমরা আশা করি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি সাধন করবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ মেলা মঞ্চে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন আমিনুর রহমান সুলতান এবং সাকিরা পারভীন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ এবং মাহিদুল ইসলাম। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী খুরশিদ আলম, সুজিত মোস্তফা, তানভীর সজীব আলম, মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ, আঞ্জুমান আরা শিমুল, মোঃ রেজওয়ান আহমেদ। আজ শুক্রবার শিশু প্রহর উপলক্ষে বেলা ১১টায় খুলে দেয়া হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রবেশদ্বার।
×