ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৯ গডফাদারসহ বহু ইয়াবা চোরাচালানির আত্মসমর্পণ কাল

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

২৯ গডফাদারসহ বহু ইয়াবা চোরাচালানির আত্মসমর্পণ কাল

মোয়াজ্জেমুল হক/ শংকর কুমার দে/ এইচএম এরশাদ ॥ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে অবশেষে মরণনেশা মাদক ইয়াবা চোরাকারবারিদের একটি অংশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। আগামীকাল শনিবার টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের বনদস্যু ও মহেশখালীর জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের আদলে এ অনুষ্ঠান হবে। কক্সবাজারের পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারীভাবে সর্বশেষ ১১৫৪ ইয়াবা চোরাচালানির তালিকা হয়। তন্মধ্যে গত একবছরে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৬০ জন। তালিকা অনুযায়ী ইয়াবা চোরাচালানের অর্থ পাচারে হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত রয়েছে অর্ধশত। আগামীকাল শনিবারের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তালিকায় এসেছে ১৩৫ জন। যার মধ্যে ২৯ জন গডফাদার ও ২৮ জন তালিকাভুক্ত। আগামীকাল শনিবার টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ইয়াবা চোরাকারবারিদের আত্মসমর্পণ ও অপরাধ দমন সংক্রান্ত একটি সভায় এরা আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করবে তারা ইতোমধ্যেই পুলিশ হেফাজতে চলে এসেছে। আজ শুক্রবারের মধ্যে এ সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়বে বলে কথা রয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের তালিকা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার ও ইয়াবা চোরাচালানিদের মধ্যে আত্মসমর্পণের বিষয়টি সোর্সের মাধ্যমে করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এদের জানান দেয়া হয়েছে, যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের জীবন রক্ষা পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য আইনী সহায়তা দেয়া হবে। তবে ইতিপূর্বে এদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা চোরাচালানসহ বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে মামলা রয়েছে সেগুলোকে আইনী প্রক্রিয়ায় রেখে আত্মসমর্পণের পর পুলিশের পক্ষে নতুন করে একটি মামলা করা হবে। এ মামলার পর আত্মসমর্পণকারীরা পুলিশী হেফাজতে চলে যাবে। এরপর এদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের সরকার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে আইনী সহায়তা প্রদান করবে। মূলত নিজেদের জীবন রক্ষা ও আইনী সহায়তা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে এসব ইয়াবা চোরাচালানি আত্মসমর্পণে উদ্যোগী হয়েছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য ইতিপূর্বে পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বৃহস্পতিবার কক্সবাজার পৌঁছেছেন। আজ কক্সবাজার যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে চার সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার, প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্তরের আগ্রহী মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে। তবে ইয়াবা চোরাচালানির মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি অর্থ উপার্জনকারী এবং সমাজ বিধ্বংসী কাজে জড়িতদের অত সহজে ছাড় দেয়া হচ্ছে কি না তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। টেকনাফে ইয়াবা চোরাকারবারিদের শীর্ষ তালিকায় নাম রয়েছে এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার বিষয়ে জানান দেয়া হয়েছে তালিকায় তার নাম থাকলেও ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই। আগামীকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আবদুর রহমান বদি থাকছেন না বলে প্রশাসন সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইয়াবা চোরাকারবারিদের তালিকা থেকে বদি কিভাবে বাদ পড়বেন সেটা সরকারী সিদ্ধান্তের ওপরে নির্ভর করছে। ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন চৌধুরী। উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমান সরকার নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি একটি আল্টিমেটাম দিয়ে ইয়াবা চোরাকারবারিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর পর ইয়াবা চোরাচালানিরা নড়েচড়ে ওঠে। তবে এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করার তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। যারা করেছে তারা গোপনে থেকে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। মধ্যস্থতায় জড়িত একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীর ৪৩ জলদস্যু যে প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করেছে অনুরূপ প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োগ করছে। অর্থাৎ যারা আত্মসমর্পণের আওতায় আসবে তাদের বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা রুজু করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, উৎসুক মহলের দৃষ্টি এখন টেকনাফের দিকে। সেই টেকনাফ থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। আজ শুক্রবার রাতের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে। কাল শনিবার সকাল ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। যাবতীয় প্রক্রিয়া নজরদারি করতে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বৃহস্পতিবার কক্সবাজার পৌঁছার পর উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আত্মসমর্পণে প্রস্তুত যারা তাদের লিস্ট পর্যালোচনা করেছেন। অপরদিকে, ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিয়ে গোটা কক্সবাজার অঞ্চলে জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন, আত্মসমর্পণের পর সংশ্লিষ্ট ইয়াবা চোরাচালানিদের প্রাথমিকভাবে আইনের আওতায় আনার পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে। যে মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হবে ওই মামলায় পদ্ধতিগতভাবে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে। তবে এদের মধ্যে যারা অন্য মামলায় জড়িত তা নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসন কোন মাথা ঘামাবে না। ওইসব মামলা নিজস্ব গতিতে চলমান থাকবে। পুলিশ সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, আত্মসমর্পণকারীরা পরবর্তীতে যখন জামিনে বা ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে আসবে তখন এদের অনেককে অন্য ইয়াবা চোরাকারবারিদের দমনে সোর্স হিসেবে কাজে লাগানো হবে।
×