ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমিটির সভায় খসড়া চূড়ান্ত

মাস্টারপ্ল্যান ॥ দশ বছরে নদী দখল ও দূষণ রোধ এবং নাব্য ফেরাতে

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মাস্টারপ্ল্যান ॥ দশ বছরে নদী দখল ও দূষণ রোধ এবং নাব্য ফেরাতে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর আশপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ অন্যান্য নদী দখল ও দূষণমুক্ত এবং নাব্য ফিরিয়ে আনতে ১০ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণরোধ ও নাব্য বৃদ্ধির জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরিসংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তাজুল ইসলাম বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নদী সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার কারণে অনেক দূষণ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সকল নদী উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নদীগুলো নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। নদী দূষণমুক্ত করে যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় ও স্যুয়ারেজ সিস্টেম, ওয়েস্টেজ ম্যানেজমেন্টÑ এগুলোর জন্য কাজ করা হয় এ জন্য মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। এই মাস্টারপ্ল্যানের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পানি দূষণমুক্ত করা, গৃহস্থালির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসার জন্য বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরবান এলাকায় যে সব বর্জ্য আছে সেগুলোকে শতভাগ যেন ডিসপোজ করতে পারে সেজন্যও আলোচনা হয়েছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে পারলে নদীর পাশাপাশি পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে। মাস্টারপ্ল্যানে কী কী থাকছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যে সব ড্রেনেজ বর্জ্য আছে সেগুলো ক্রাশ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীর পাড়ের যেসব জায়গা দখল এবং বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে ও নদীদূষণ হচ্ছে সেগুলো দখলমুক্ত করে দৃষ্টিনন্দন ও সবুজায়ন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নদীর নাব্য বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানে ১০ বছরের ভেতরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, কর্ণফুলী, শীতলক্ষ্যা নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও দূষণমুক্ত করার জন্য ১০ বছরের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাস্টারপ্ল্যান আগামী সভায় ফাইনাল করব বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্ল্যানে এক বছর, তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১০ বছরের পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। আশা করি এ কর্মসূচী সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে নদীগুলোর নাব্য অনেকাংশে ফিরিয়ে আসবে ও ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী নেয়া হবে। অন্যান্য নদীর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সব নদীতে অথবা যে সব নদীর পাড়ে অথবা অন্য যে কোন স্থানে, যে কোথাও যে কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা এবং অবৈধভাবে দখল করার বিরুদ্ধে একটা ‘কম্প্রিহেনসিভ এ্যাফোর্ট’ দেয়া হবে ও বাস্তবায়ন করা হবে। মাস্টারপ্ল্যানের বাজেট সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এটি সম্পন্ন করার পরে বাজেট নিয়ে কাজ করব। বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলীর পাশাপাশি অন্যান্য নদীর পাড়ের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীতেও উচ্ছেদ অভিযান চলছে। আলোচনায় এসেছে মেঘনা নদীর পাড়েও বেশকিছু শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে যাতে নদীদূষণ না করতে পারে সেজন্য সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার আলোচনা হয়েছে। বর্ষায় ঢাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর যখন বৃষ্টি আরম্ভ হয় তখন হঠাৎ করে ওভার ফ্লো হয়ে মানুষ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অসুবিধা হয়। বিষয়গুলো কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয়নি এবং এখনই কোন চমকপ্রদ ফলাফল দেয়ার সুযোগ না থাকলেও যাতে সহনশীল জায়গায় যাওয়া যায়, যত অপশন আছে কাজে লাগানোর জন্য যাতে মানুষকে স্বস্তিদায়কভাবে চলাচল করতে পারে সেজন্য একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৪ মার্চ এ সংক্রান্ত আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকার দুই সিটি, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×