ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাগুন হাওয়ায় বেড়েছে পাঠকের পদচারণা

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ফাগুন হাওয়ায় বেড়েছে পাঠকের পদচারণা

মনোয়ার হোসেন ॥ নবীন বসন্ত ভর করেছিল একুশের বইমেলায়। এমনিতেই সুন্দর মেলাটি এদিন পেয়েছে আরও বেশি ¯িœগ্ধতা। ফাল্গুনের প্রথম দিন বুধবার বেলা তিনটায় মেলার দুয়ার খুলতেই ভিড় জমে বাসন্তী রঙের। পাঠক ও শরীরে জড়িয়েছিল ঋতুরাজের প্রতীকী রঙটি। মেলার সময় যত গড়িয়েছে পাঠকের কাঁধে ভর করে বিশেষ এই রঙয়ের আধিক্যও তত বেশি চোখে পড়েছে। এমন পোশাকের পাঠকেরা দুপুর থেকে রাত অবধি চষে বেড়িয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। ঘুরে বেড়িয়েছে স্টল থেকে স্টলে কিংবা সুদৃশ্য প্যাভিলিয়নে। বসন্ত উদ্যাপনের সমান্তরালে চলেছে পছন্দের বই সংগ্রহের তৎপরতা। এমন করেই ফাগুনের রঙমাখা বাতাসে অপরূপ বর্ণিলতা ধারণ করেছিল গ্রন্থমেলা। মেলার দুই ক্যানভাস বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিরাজ করেছে লাবণ্যময়তার বৈভব। বইয়ের বিকিকিন যেমনই হোক বসন্ত উদযাপনের মুখরতাই ছিল যেন মেলার মূল আকর্ষণ। কারণ বইমেলা মানেই শুধু বেচাকেনা নয়; জড়িয়ে আছে আবেগ এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বন্ধন। সে দৃশ্যটিই ত্রয়োদশ দিনে ধরা দিয়েছে মেলার চেহারায়। যে দিকেই চোখ পড়ছে নানা রঙকে ফাঁকি দিয়ে ধরা দিয়েছে হলুদ আর বাসন্তী রঙের সমারোহ। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, মেলায় আসা শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণদের পোশাক ও মননেও ছিল উৎসবের ছোঁয়া। উৎসবের আমেজে প্রিয় লেখকের নতুন বইটি সংগ্রহ করে অনেকেই বাড়িয়ে নিয়েছেন আনন্দে মাত্রা। চলেছে দলবেঁধে বিরামহীন আড্ডা। বিকেল থেকে জমে ওঠা মেলাটি সন্ধ্যায় পরিণত লোকারণ্যে। আর মেলায় এমন উৎসবের ভাব বিরাজ করায় তুমুল বেচকাকেনা না হলেও একেবারে হতাশ হননি প্রকাশকরা। মেলা উৎসবের রং ধারণ করায় পুষিয়ে যায় এমন বেচাকেনা হওয়াতেই প্রকাশ করেছেন সন্তুষ্টি। উৎসবের দিনে পাঠকের সঙ্গে আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে মেলায় দুই খ্যাতিমান লেখক ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক। দুজনই আলাপচারিতায় সঙ্গে নিজের বইয়ে শুভেচ্ছা বাণীসহ অটোগ্রাফ দিয়ে খুশি করেছেন বইপ্রেমীদের। নিজেদের প্রকাশিত বই নিয়ে অন্যন্যা ও প্রথমায় হাজির ছিলেন লেখকদ্বয়। বসন্ত উৎসবের আমেজটি নিয়ে কথা হয় আনিসুল হকের সঙ্গে। জনপ্রিয় এই কথাশিল্পী জনকণ্ঠকে বলেন, পয়লা বৈশাখ বাঙালী জাতিসত্তা প্রকাশের প্রধানতম উৎসব। এরপর ধীরে ধীরে বিকশিত হওয়া বর্ষা বা শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আমাদের স্বকীয়তাকে। তেমনিভাবে বসন্ত উৎসবও বলে যায় আমাদের শেকড়ের কথা। এই উৎসব আরও রূপবতী হয়ে ওঠে যখন বইমেলাটি উৎসব উদ্্যাপনের অংশে পরিণত হয়। মানুষ উৎসব উদ্্যাপনের পাশাপাশি বই কিনছেÑ সব মিলিয়ে অবারিত সৌন্দর্যের হাতছানি। একগুচ্ছ বই নিয়ে বিকেলে মেলায় উদ্যান অংশে ঘুরছিলেন ফারহানা রহমান ও আনিস রহমান দম্পতি। কথা প্রসঙ্গে তারা বলেন, এমনিতেই প্রতিবছর কমপক্ষে দুইবার মেলায় আসা হয়। এবার প্রথম এলাম পয়লা ফাল্গুনে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো বইও কিনছি আবার বসন্তও উদ্যাপন করছি। এমন সুন্দরতম দিন তো জীবনে প্রতিদিন আসে না। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, এমনিতেই দশ দিন কেটে যাওয়ার পর বেড়ে যায় বইমেলার বিকিকিনি। সেই সুবাদে আজও কম-বেশি বইয়ের বেচাকেনা হচ্ছে। তবে দর্শনার্থীতে মেলা পরিপূর্ণ হওয়ায় একটা উৎসবের আমেজ এসেছে। দেখতেও ভাল লাগছে। পাশাপাশি উৎসবটাও উপভোগ করছি। আজ মেলায় ছড়াবে ভালোবাসার রং ॥ আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ দিবস উপলক্ষে আজও মেলা জমজমাট থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন প্রকাশকরা। ফাল্গুনের প্রথম দিনে অনেকেই ভালবাসার প্রিয় মানুষকে নতুন বই উপহার দিয়েছেন। ভালবাসার সেই বই বিনিময়টা বৃহস্পতিবার আরও বেড়ে যাবে। মেলাও হয়ে উঠবে রূপময়। ত্রয়োদশ দিনের নতুন বই ॥ বৃহস্পতিবার মেলার ১৩তম দিনে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যানুযাী নতুন বই এসেছে ১৭২টি। এর মধ্যে গল্প ২৬, উপন্যাস ২৭, প্রবন্ধ ১৭, কবিতা ৬৩, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ৭, জীবনী ৩, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ১, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ৪, ইতিহাস ২, স্বাস্থ্য ১, অনুবাদ ২ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে আরও ১৪টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে সঙ্গীতা ইমাম রচিত কৈশোর মনস্তত্ত্বকেন্দ্রিক সম্পর্কের রসায়ননির্ভর উপন্যাস ‘নন্দিতার বেলাভূমি’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ছোট্ট এই উপন্যাসে লেখক যেমন সম্পর্কের নক্সা এঁকেছেন তেমনি ফুটে উঠেছে মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রাম আর সাহসের কথা। ঐতিহ্য থেকে এসেছে আসিফ রশীদের গবেষণাগ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে বহির্বিশ্বের স্বার্থের লড়াই’। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে এসেছে আশীষ মৈত্র রচিত রোমান্টিক গল্পগ্রন্থ ‘যে গল্পের শেষ নেই’। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ‘সেরা গল্প’ প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সময় বহিয়া যায়’ এনেছে কথাপ্রকাশ। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ‘বাঙালি জীবনের চলাচল’ এনেছে পুঁথিনিলয়। মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘সপ্তর্সির জন্যে কবিতা’ এনেছে বটেশ্বর বর্ণন। তপন বাগচীর শিশুতোষ গল্প ‘রূপকথার নদী’ এনেছে প্রত্যয় প্রকাশনী। রামেন্দু মজুমদারের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বুদ্ধিজীবীর দায় ও অন্যান্য’ এনেছে কথাপ্রকাশ। একই প্রকাশনী থেকে এসেছে সালেক খোককের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ ‘১৯৭১ যাঁদের ত্যাগে এলো’। মেলামঞ্চের আয়োজন ॥ বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি রফিক আজাদ : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা, কবি ফারুক মাহমুদ এবং কবি জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার। রশীদ হায়দার বলেন, রফিক আজাদ মানেই জীবন, তারুণ্য এবং সুন্দরের প্রতি পক্ষপাত। তার মতো বিশুদ্ধ কবির আবির্ভাব বাংলাদেশের কবিতার জগতকে করেছে ঋদ্ধ। কবিসত্তার বাইরে তার ব্যক্তিসত্তাও ছিল সমান আকর্ষণীয়। ব্যক্তিগতজীবনে তার মতো দেশপ্রেমিক, বন্ধুবৎসল, উদার-মানবিক মানুষের সন্ধান পাওয়া সত্যিই কঠিন বিষয়। কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ এবং টোকন ঠাকুর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম এবং নাসিমা খান বকুল। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মিজান মাহমুদ রাজীব, ফারহানা শিরিন ও তানজিনা করিম স্মরলিপি। নৃত্য পরিবেশন করেন সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’র নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। আজকের আয়োজন ॥ আজ বৃহস্পতিবার মেলা চলবে বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বিজ্ঞানভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রেজাউর রহমান, আবদুল কাইয়ুম এবং অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও
×