ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একের পর এক দুর্ঘটনা এখন সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

একের পর এক দুর্ঘটনা এখন সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে একের পর এক দুর্ঘটনাকে এখন ‘সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয়’ হিসেবে দেখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নিজেই বলেছি সড়কে শৃঙ্খলা আসেনি। অবকাঠামোগত প্রকল্পে যত অগ্রগতি, সেই তুলনায় সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলাটা অতটা হয়নি, যার জন্য এ্যাক্সিডেন্ট বা যানজট রয়েছে। গত দশ বছরে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় যেখানে খুব বেশি সাফল্য আসেনি, সেখানে সরকার এবার কী করার কথা ভাবছে? মন্ত্রী জানান, শীঘ্রই সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা ডাকা হবে। কমিটি সাজানো হবে নতুন করে। নতুনভাবে কর্মসূচী নেয়ার চিন্তাভাবনা করছি। নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভায় সড়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে দেব। তাদের কাছ থেকে অল্প দিনের ব্যবধানে প্রতিবেদন চাইব, পরে যদি টাস্কফোর্স করতে হয় তাও করব। ওবায়দুল কাদের বলেন, এটার (সড়ক দুর্ঘটনা) লাগাম টেনে ধরতে হবে, রাশ টেনে ধরতে হবে। জাতীয় স্বার্থে এবং জাতির দুর্ভাবনা অবসানের স্বার্থে। কারণ সড়ক দুর্ঘটনা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা, এটা অস্বীকার করে লাভ নেই। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪২৫ জন। জানুয়ারির শেষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও হাইওয়েতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন, ভ্যান, রিক্সা, নসিমন, অটোরিক্সার জন্য দায়ী। অপরদিকে যাত্রী অধিকারে নিয়োজিত সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছর ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে সমিতির প্রতিবেদনে তৈরি করা হয়েছে। সমিতির বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তাদের আগের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিলেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। এবারের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে মোজাম্মেল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিদায়ী বছরের ৩ এপ্রিল সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় রাজীবের বিচ্ছিন্ন হাত দুই বাসের মাঝে আটকে থাকার ছবি দেশের মানুষের হৃদয় কাঁদিয়েছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাস্তা পার হতে গিয়ে গৃহকর্মী রোজিনা গত বছরের ২০ এপ্রিল প্রথমে পা হারায়, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে রেলপথে ৩৭০টি দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন নিহত ও ২৪৮ জন আহত হয়েছেন আর নৌপথে ১৫০টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৩৮৭ জন। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আকাশপথে পাঁচটি দুর্ঘটনায় গতবছর ৫৫ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নেপালে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাও যুক্ত করা হয়েছে। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথ মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে গতবছর। এসব ঘটনায় ৭ হাজার ৭৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন। আইন অমান্য করে ধীরগতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘœ ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছোট যানবাহনের বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, বড় গাড়ির সঙ্গে সিএনজি বা ইজিবাইকের যদি সংঘাত হয়, আর ইজিবাইকে যদি ১০ জন থাকে, ১০ জনই মারা যায়। বড় বড় গাড়িতে সংঘাত হলে আহত হয়, এ রকম নিহত হয় না। ছোট ছোট যান নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। মন্ত্রী স্বীকার করেন, ইজিবাইক-নসিমন-করিমনের সঙ্গে ‘অনেকে’ জড়িত, এখানে ‘রাজনৈতিক বিষয়ও’ আছে। তবে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে আগে। এটা আমার এখানে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যেটা সম্ভব সেটা আমি কেন করব না? যেটা সম্ভব সেটা কেন করা যাবে না? করতে হবে। উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানজট হওয়ার কথা স্বীকার করে কাদের বলেন, কাজগুলো শেষ হলে একটা সময় যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা নেই জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপরে বিএনপি এতে অংশ নিল কি নিল না, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন মাথাব্যথা নেই। এ সময় বিএনপি ও জামায়াতের পারস্পরিক রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জামায়াতকে বিএনপি ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। কারণ, দুটো দলই সাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে।’ সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী নিজের দায় স্বীকার করেন। বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ’র কার্যক্রম ঢেলে সাজানো হবে। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য সড়ক নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিলের সভায় সুপারিশ চাওয়া হবে। এ সময় সড়কে ছোট যান চলাচল বন্ধ করা রাতারাতি সম্ভব নয় বলে জানান মন্ত্রী। তিনি এর জন্য অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের দায় রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। বিএনপি প্রসঙ্গে কাদের আরও বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। তারা পার্টিসিপেট না করলে ইলেকশনটা পার্টিসিপেটরি এবং ইনক্লুসিভ হলো কিনা, সেটা নিয়ে একটু সংশয় থাকে। দেশে-বিদেশে প্রশ্নটা আসে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কারা জয়েন করল, কারা বয়কট করল এটা নিয়ে আসলে খুব একটা দুশ্চিন্তা বা মাথাব্যথার কোন কারণ নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনেকে দল প্রতীকে না করলে স্বতন্ত্রভাবেও করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যতটা খবর- স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেক জায়গায় তারা (বিএনপি) ইলেকশন করবে। এর কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে করি না। অংশ নিলে ভাল, না এলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব হবে না। বিএনপি-জামায়াত কেউ ছাড়বে না কেনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাদের চিন্তা-ভাবনা, যে আদর্শ ও চেতনা ধারণ করে সেখানে তারা খুব কাছাকাছি নয়? অনেক কাছাকাছি। আমি মনে করি দুটোই সাম্প্রদায়িক দল। ডাকসু নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল অংশ নিচ্ছে না- এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাদের বলেন, অংশ নেবে না এটা তারা এখনও ঘোষণা দেয়নি। দেখা যাক, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার এখনও তো অনেক সময় বাকি। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর এই কথাটা বলা যাবে। আপতত দাবি-দাওয়ার প্রশ্নে কিছু কিছু স্ট্যান্ড তো দলগতভাবে থাকতেই পারে। এখানে বিএনপি সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও ইনফ্লুয়েন্স করবে ছাত্রদলের সিদ্ধান্তে। বিএনপিতে একটা টানাপোড়েনও আছে। সেই টানাপোড়েনের কারণে ছাত্রদল কী সিদ্ধান্ত নেবে? আমার মনে হয় তারেক রহমান এখনও যা বলবে ছাত্রদল সেটাই মেনে নেবে।
×