ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বিশ্বব্যাংক॥ প্রধানমন্ত্রীকে কিমিয়াও ফ্যান

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 বাংলাদেশের   উন্নয়নে  সহযোগিতা অব্যাহত  রাখবে বিশ্বব্যাংক॥ প্রধানমন্ত্রীকে  কিমিয়াও ফ্যান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী আবাসিক পরিচালক কিমিয়াও ফ্যান বলেছেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। কিমিয়াও ফ্যান রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে বিদায়ী সাক্ষাতকালে এ আশ্বাস দেন। সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। খবর বাসসর। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসাধারণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ঘনবসতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অসাধারণ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিমিয়াও ফ্যান বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন। প্রেস সচিব বলেন, আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুও উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকার দেশের উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে উল্লেখ করে বলেন, ‘১৯৭৫-এর পর এ উন্নয়ন সামরিক শাসকদের হাতে চরমভাবে অবহেলিত হয়েছে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের প্রতি তার সরকারের অঙ্গীকার সামগ্রিক। ‘আমরা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে চাই।’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এছাড়া বিদ্যুত খাতেও বিরাট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি উন্নত ও সমৃদ্ধি দেশ হওয়া।’ শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালককে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে তিনি কিভাবে মায়েদের প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা অবহিত করেন। বেসরকারী খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বেসরকারী খাতে সকল ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত ॥ স্বল্প সুদের ঋণ সুবিধা আরও কয়েক বছর বিশ্বব্যাংক অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। রবিবার বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিয়াও ফান মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে রয়েছে। এই পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক তাদের আইডা ফান্ড থেকে যে স্বল্প সুদে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দিয়ে আসছে, সেটি আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখবে আমরা প্রত্যাশা করছি। অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা থাকবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাড়ে ৩ বছর বাংলাদেশে ছিলেন এবং ১০ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশে থাকাকালীন এখানকার অগ্রগতি নিজ চোখে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের তিনি অভিভূত। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য কোন প্রকল্প নেয়া হলে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বেগবান করার আহ্বান জাপানের ॥ জাপান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বেগবান করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছে, এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কুষ্ঠ নির্মূল বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত ও মিয়ানমারে জাতীয় মীমাংসা বিষয়ক জাপান সরকারের বিশেষ দূত ইওহেই সাসাকাওয়া বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি জটিল পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। ইওহেই সাসাকাওয়া রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতকালে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেকটা স্থবির অবস্থায় রয়েছে। এটিকে অবশ্যই বেগবান করতে হবে। সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন তা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে ইওহেই সাসাকাওয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জাপানের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখব। বর্ষা মৌসুমের আগমনে রোহিঙ্গাদের বসবাসের অবস্থা প্রভাবিত হতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়ের জন্য একটি দ্বীপ প্রস্তুত করেছি। কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সাল থেকে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে কাজ করছে এবং দেশে কুষ্ঠ রোগীদের জন্য বেশ কিছু বাড়ি নির্মাণ করেছে। জবাবে জাপানের বিশেষ দূত কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের রোগ বর্তমানে বাংলাদেশে সহজে নিরাময়যোগ্য। তিনি বলেন, তবে রোগীদের কুষ্ঠ রোগের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, বাংলাদেশে ডব্লিউএইচও’র আবাসিক প্রতিনিধি ও ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×