ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বর্ণিল উচ্ছ্বাসের স্পর্ধিত নিবেদন ‘মোরা আর জনমে হংসমিথুন ছিলাম’

হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল... আঙিনায় মধুর বসন্ত

প্রকাশিত: ১০:০৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল... আঙিনায় মধুর বসন্ত

সমুদ্র হক ॥ আঙিনায় বসন্ত। একদিন বাকি। মায়াবি রঙে আসছে ঋতুরাজ (ঋতুর রানীও বলা যায়)। মধ্য বয়সী ও প্রবীণদের জীবনের গোধূলি বেলায় তারুণ্যের মধুময় স্মৃতির ধূসর রংমাখা মধুর বসন্ত। তরুণ-তরুণীদের ঝকঝকে বর্ণিল উচ্ছ্বাসের ফাল্গুন। রোমান্টিসিজমের বহমান স্রোতধারা। আনন্দে নেচে উঠেছে প্রজন্মের শিশুরা। চোখেমুখে সম্মুখপানের স্বপ্ন-ওদের জীবনেও আসবে এমনই দিন। মেয়েশিশুরাও মায়ের কাছে বায়না ধরেছে শাড়ির। শাড়ি পরে শিশুরা ফাগুনের রংকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। মৃদুমন্দ দখিনা সমিরণে দুলে উঠছে ফুলের দোকানগুলো। বেড়েছে ভিড়। দোকানিরা বলছেন, রেশ থাকবে ফাল্গুনের দিনগুলিতে, বিশেষ করে বসন্তের প্রথম ক’দিন ফুরসত মিলবে না একদ-। বাঙালী সংস্কৃতির ফাল্গুন মাসই আসে ভালবাসা নিয়ে ভালবাসা দিয়ে। বসন্তের রং বুঝি কিছুটা হলদেটে! তাই বোধহয় ফুলের দোকানে ফাগুন বেলায় গাঁদার কদর বেড়ে যায়। তরুণ-তরুণীরা গাঁদা ফুলের আগাম বুকিং দিচ্ছেন। গোলাপ রজনীগন্ধা তো থাকছেই, সঙ্গে গাঁদা ফুল না হলেই নয়। পহেলা ফাল্গুনে তরুণীদের পরনে লাল পেড়ে হলুদ শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় গাঁদা আর মাথায় জারবেরার টায়রা ফুল না হলে বসন্ত বুঝিবা পূর্ণতা পায় না। নতুন প্রণয়ের কাছে গাঁদার গুরুত্ব আরও বেশি। ‘প্রণয়িনীর খোঁপায় গাঁদা ফুল পরিয়ে না দিলে কি প্রেম পূর্ণতা পায়!’- এমন অভিপ্রায় তারুণ্যের। গাঁদা ফুলের ইংরেজী নাম ‘মেরিগোল্ড’। নামেও রোমাসিজম। ক’বছর ধরে গাঁদার সঙ্গে যোগ হয়েছে সূর্যমুখীর মতো দেখতে এক ধরনের ফুল। নাম জারবেরা। গাঁদা ও জারবেরা ফুল সানফ্লাওয়ার পরিবারের। জারবেরা চাষ হচ্ছে যশোর অঞ্চলে। জারবেরা হলদে, লাল, বেগুনি রঙের ফুল। ফাল্গুনে গাঁদার সঙ্গে হলদে জারবেরার কদর বেড়েছে। দোকানিরা বলছেন, চারা এসেছে বিদেশ থেকে। বসন্তের প্রণয় মধুর ক্ষণে গাঁদার সঙ্গী হয়েছে এই ফুল। ভালবাসার মানষের কছে গাঁদা ও জারবেরার মধুময়তায় বেজে ওঠে সুর ‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম....’। বসন্ত বেলায় প্রণয়ের মানব মানবীরা মেতে ওঠে হৃদয়ের কথার। যে কথার রেশ ফুরোতেই চায় না। ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল.....’ সুরে গাঁথা হচ্ছে মালা। মধ্য বয়সী যারা এমন সময় পেরিয়ে এসেছেন তাদেরও এদিন মধুর চাহনি। স্মৃতিতে অতীতকে ফিরে পাওয়ার শব্দ শুনছেন। তরুণরা এই দৃশ্যে ভাবছে- এমন দিন তাদেরও আসবে। একবিংশ শতকের এমনই মায়াময় বসন্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি। মেসেঞ্জার, হোয়াটস এ্যাপ ইনবক্সে ফোনকল ভিডিওকল বেড়ে গেছে। ফেসবুকে রোমান্টিসিজমের পোস্টে কত যে লাইক কমেন্টস! ভাইবার কলেও একে অপরের ছবির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলছে। এ যেন বসন্ত বিলাস। অনেকেই ঘুরতে যাচ্ছে দূরে কোথাও। সেলফির ছড়াছড়ি সব বয়সীদের মধ্যে। বগুড়ায় নবাববাড়ী সড়কের ধারে পুষ্প বিপণি এখন সরগরম। দোকানিরা বলছেন প্রতিদিন ভোরে আর সন্ধ্যায় যশোর থেকে ফুল আসে ট্রাকে। ফাল্গুনের প্রথম দিনের পর দিনই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ (ভালবাসা দিবস)। গাঁদা, জারবেরা ফুলের পাশাপাশি গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলী, অর্কিড ফুল দিয়েও বরণ করা হচ্ছে ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস। দিবসগুলো সামনে রেখে সব ধরনের ফুলের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। দামও নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। প্রতিটি গাঁদা জারবেরা গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ৩ থেকে ৭ টাকা। লাল পেড়ে হলুদ শাড়ি বিক্রিও বেড়েছে। শপিং মল, ফাস্ট ফুডের দোকান ও আধুনিক রেস্তরাঁগুলোর কেনাকাটা বেড়ে গেছে। প্রণয়প্রার্থীরা জুটি বেঁধে যাচ্ছে কেনাকাটায়। ঋতুরাজের আগমনে রোমান্টিসিজমের উপহার ফুলের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে।
×