ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে মার্কিন ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের স্থান বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের স্থান বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি এসিসটেন্ট সেক্রেটারি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী খাতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী। রবিবার দুপুরে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে ডেপুটি এসিসটেন্ট সক্রেটারি থমাস ভাজদা, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারসহ আট সদস্যের প্রতিনিধি দল বিদ্যুত বিভাগে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগের পাশাপাশি নতুন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর নসরুল হামিদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। তারা বলছে দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের সব থেকে সম্ভাবনাময় স্থান বাংলাদেশ। আমরা আমাদের কোন কোন খাতে বিদেশী বিনিয়োগ দরকার তা তুলে ধরেছি। বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করব। ওই সময়ে তাদের দেশের যেসব বিনিয়োগকারী আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে চাই তাদের সামনে বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা তুলে ধরা হবে। বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি জেনারেল ইলেক্ট্রিক জিই বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির সঙ্গে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এছাড়া দেশের বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে জিই দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের আরও একটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এর বাইরে জিই দেশের আরেক প্রতিষ্ঠান ইউনিক গ্রুপের সঙ্গে কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে। যার মধ্যে মেঘনাঘাটে সামিট এবং ইউনিকের প্রতিটি ৬০০ মেগাওয়াট করে দুই কেন্দ্রের জন্য শীঘ্রই চুক্তি সই হবে। জিইর যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে ঘোড়াশালের তৃতীয় এবং ৪র্থ ইউনিটের রিপেয়ারিং (পুনর্ক্ষমতায়ন)। শাহজিবাজার-১০০, খুলনা-৩৩০, সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ এবং ভোলা-২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। বৈঠকে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চীন বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো এ বিনিয়োগে যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে একইভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরও বৃহৎ পরিসরে মার্কিন বিনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, আমরা নেপাল এবং ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। জল বিদ্যুত উৎপাদনে এই দুই দেশে যে বিনিয়োগ করা হবে সেখানে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারী খুঁজছে বাংলাদেশ। বিদ্যুত খাতের বাইরেও জ্বালানি খাতে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি কাজ করছে। দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে তারা। তবে মার্কিন কোম্পানি কনকোফিলিপস সাগরের ব্লক ইজারা নিয়ে অর্ধেক কাজ করে চলে গেছে। কোম্পানিটি তখন সাগরে গ্যাসের দর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ তাতে সায় দেয়নি। এর বাইরে দেশের স্থলভাবে এককভাবে সব থেকে বেশি গ্যাস উত্তোলন করছে মার্কিন কোম্পানি শেভরণ। বৈঠকে বলা হয় বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদশের স্থল এবং জলভাগে এক সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন করতে পারে। গ্যাসের পাশাপাশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজির অবকাঠামো নির্মাণ এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে দুই দেশ। বৈঠকে আরও বলা হয় সমুদ্রে মায়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এসব জায়গাতে বিনিয়োগ করতে পারে। বৈঠকের পর মার্কিন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশের বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে বিপুল বিনিয়োগ করতে। মার্কিন কোম্পানি জিই এবং শেভরন বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করেছে। আমরা আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। থমাস ভাজদা এ সময় বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের প্রধান লক্ষ্য। জ্বালানি নিরাপত্তাকে যুক্তরাষ্ট্র সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এছাড়া সাইবার সিকিউরিটি, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং পরিবেশের উপর জোর দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ায় ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের নতুন বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
×