ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে যেতে চান বিএনপির এমপিরাও

প্রকাশিত: ১০:০৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 সংসদে যেতে চান বিএনপির এমপিরাও

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে বিজয়ীরাও শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিতে চান। সম্প্রতি দলীয় এক ফোরামে নির্বাচিত ৬ নেতা সংসদে যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একটি অংশ সংসদে যোগদানের পক্ষে থাকলেও অধিকাংশ নেতাই এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর কারণ লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান না বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা সংসদে যাক। সূত্র মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জনই সংসদে যাওয়ার পক্ষে নয়, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও চান তারা সংসদে গিয়ে দলের পক্ষে কথা বলুক। আর সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিদেশীদের চাপ তো রয়েছেই। এ পরিস্থিতিতে এখন যাবে না বললেও এক পর্যায়ে বিএনপি সংসদে যেতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। এদিকে সংসদে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের সঙ্গে বিএনপির ভেতরে ভেতরে মনকষাকষি চলছে। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত ২ জন সংসদে যেতে চান। কিন্তু তারেক রহমান চান না বিএনপির প্রতীক নিয়ে জোট থেকে নির্বাচিত কেউ সংসদে যাক। তাই গণফোরাম থেকে ধানের শীষ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়ে সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আইনগত জটিলতা হতে পারে ভেবে শপথ নিতে দেরি করছেন। তবে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খানের শপথ নিতে তেমন আইনী সমস্যা নেই। তবুও তিনি সুলতান মনসুর শপথ নেয়ার পর নিতে চাচ্ছেন। আর তারা ২ জন শপথ নেয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬ জনও শপথ নিতে পারেন। উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ওই দিন রাতেই বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচন দাবি করে। এ পর পুনর্নির্বাচনের দাবিতে দুর্বার আন্দোলনের কথা বললেও এখন পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে পারেনি দলটি। কিছু ঘরোয়া কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির কোন প্রার্থী মামলা করেনি। এতে বোঝা যায় শেষ পর্যন্ত হয়তো বিএনপি সংসদে যেতে পারে। ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের ২৯ নবেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পরও বিএনপি সংসদে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এক পর্যায়ে তারা সংসদে গিয়ে সরকারের ভুলত্রুটির প্রতিবাদ করার পাশাপাশি দলের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সে সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত হন। তাই এবারও বিএনপি সংসদে না গেলে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে দলটি অনেক পিছিয়ে পড়বে। যা দেশ-বিদেশে বিএনপিকে নতুন করে চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৬টি আসন পেলেও সংসদে গিয়ে দলের পক্ষে ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ জাতীয় সংসদে কথা বলার ক্ষেত্রে সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করা হয় না। বিএনপি ইচ্ছে করলে অধিবেশন চলাকালে প্রতিদিনই পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখতে পারেন এবং সরকারী দলের কোন কিছু তাদের ভাল না লাগলে ওয়াক আউট করে প্রতিবাদ করতে পারেন। এতে গণতন্ত্র চর্চার পাশাপাশি দলীয় অবস্থানও সুসংহত করার সুযোগ থাকে। আর দলের প্রতিনিধিরা সংসদে থাকলে রাজপথে কর্মসূচী পালনের বিষয়েও সরকারকে চাপ দিতে পারবে দলটি। জানা যায়, দলীয় ফোরামে বিএনপির নির্বাচিত ৬ জন সংসদে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে এ কথা শুনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চরম ক্ষুব্ধ হন। আর এ কারণে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরও ক’জন নির্বাচিত নেতা নাখোশ হন। তবে তারেক রহমান ক্ষুব্ধ হলে দলের পদ হারাতে হতে পারে ভেবে তারা এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। তবে দেশের উত্তারাঞ্চল থেকে নির্বাচিত এক বিএনপি নেতা প্রকাশ্যেই সংসদে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু এ জন্য তাকে দলীয় হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এ ঘটনার পর আর কোন নির্বাচিত বিএনপি নেতা উচ্চবাচ্য করেননি। সূত্র মতে সংসদে যাওয়ার পক্ষে বিএনপির নির্বাচিতদের যুক্তি হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। আইনী প্রক্রিয়ায় তাকে কবে মুক্ত করা যাবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় সাজা থাকায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি দেশে ফিরে আসবেন না। এ পরিস্থিতিতে ঘরে বসে না থেকে সংসদে গিয়ে প্রতিদিন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দলীয় অবস্থান তুলে ধরা যাবে। আর সংসদে না গেলে রাজপথে যেমন কোন কর্মসূচী করার সুযোগ পাওয়া যাবে না। তেমনি ৫ বছরের জন্য সংসদে যাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে হবে। সম্প্রতি বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন বিএনপির উচিত সংসদে যাওয়া। কারণ সংসদে গেলে সেখানে দলীয় অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারের কোন অনিয়ম সম্পর্কে কথা বলা যাবে। এতে দেশের মানুষ বিএনপির রাজনীতিকে ইতিবাচক মনে করবে। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীরা সংসদে যেতে চান। কিন্তু তারেক রহমান চান না তারা সংসদে যাক। তারেক রহমান চাচ্ছেন বিএনপি সংসদে না গেলে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলে সরকার দেশে-বিদেশে চাপের মুখে পড়বে। এতে বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচীসহ বিভিন্নভাবে সরকারকে চাপে ফেলতে পারলে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার হবে। তবে দলের কিছু নেতা চান বিএনপি এবার সংসদে গেলে অন্তত সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে পারবে। এদিকে তারেক রহমানের নির্দেশে এ সরকারের আমলে আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা ক্ষুব্ধ। তবে দলে অবস্থান খর্ব হওয়ার ভয়ে তারা এখন প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ায় সারাদেশের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিরাজমান চাপা ক্ষোভ যে কোন সময় বিস্ফোরণ হতে পারে।
×