ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরস্বতী পূজা আজ

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সরস্বতী পূজা আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ সরস্বতী পূজা, বাণী অর্চনার আরাধ্য দিন। শুল্কপক্ষের পঞ্চমীতে আজ রবিবার শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর আবাহন হবে। মা সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী বিদ্যাদেবী সরস্বতী শ্বেতশুভ্র বসনা। তার এক হাতে বীণা অন্য হাতে বেদপুস্তক। অর্থাৎ বীণাপানিতে যার তিনি বীণাপানি- সরস্বতী। আর এ থেকেই বাণী অর্চনার প্রচলন। বিদ্যাদেবীর কৃপালাভের আশায় রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ঘরে ঘরে রবিবার সকালে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হবে। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর পাদপদ্মে প্রণতি জানাবেন পূর্ণার্থীরা। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুল্কপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর আবাহন করা হয়। ঢাকা-ঢোল-কাঁসর আর শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পূজাম-প। সরস্বতী বিদ্যার ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজিত হন। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আঁধার হিসেবে সরস্বতী দেবীর আরাধনা করা হয়। ধর্মীয় বিধান অনুসারে, মাঘ মাসের শুল্কপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও জ্ঞানদাত্রী দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন। মহল্লায় আজ পূজাম-পে পূজার্থীরা মায়ের পদপদ্মে অঞ্জলি দেবেন। দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যাচর্চার সূচনা হবে অনেক স্থানে। এছাড়া কিছু ম-পে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সারাদেশে পূজা অর্চনার জন্য ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে বর্ণিল আয়োজন ও সাজসজ্জা হয়েছে। বেচাকেনা চলছে পূজার অন্যতম উপকরণ- ফলমূল, ফুল, বেলপাতা, খই-মুরকী-বাতাসা-নাড়ু। অন্যদিকে অনেক বিদ্যার্থীই সরস্বতী পূজার আগে কূল বা বড়াই খান না। জ্ঞান, সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের কিছু কিছু স্থানে সরস্বতী পূজার চল আছে। কালপরিক্রমায় এ পূজা ব্যক্তি ও পরিবারের গ-ি পেরিয়ে এখন বাঙালী হিন্দুদের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে ক্রমশ এক সার্বজনীন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করেছে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে সরস্বতীয় রূপ-মাহাত্ম্য বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। বেদ, পুরাণ ও বিভিন্ন শাস্ত্রীয় গ্রন্থে সরস্বতীর নানা রূপ ও প্রকৃতির বর্ণনা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সরস্বতীর মাহাত্ম্য যেভাবেই বা যে রূপেই তুলে ধরা হোক না কেন, বাঙালী সংস্কৃতিতে সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী হিসেবে পূজা করা হয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায় সরস্বতীর যে মূর্তি পূজা করে সেই সরস্বতীর রূপ দ্বিভূজা, শ্বেত বরণী, শ্বেতাম্বরা, শ্বেতদল বাসিনী, শ্বেত হংসবিহারিণী ও বীনা পুস্তক-কমলধারিণী। আজ সকাল থেকে উপবাস থেকে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তরা প্রার্থনা জানাবেন বিদ্যাধিষ্ঠাত্রীর। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সরস্বতী জ্যোতির্ময়ী অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি বাগদেবী। সরস্বতী নদীর তীরে দেবীর স্তোত্র ও আরাধনার মাধ্যমে বেদধ্বনি হতো বলে এই নদী বাগদেবীর বাসস্থান বলে অভিহিত। নদী অর্থে তিনি পবিত্র তোয়া সঙ্গীতময় ও সুন্দর স্তোত্রের উদ্বোধনকারী। বাগদেবী অর্থে তিনি মানবহৃদয়কে পবিত্র করেন। তিনি সুন্দর ও মর্ত্যবাক্যের প্রেরণকাত্রী। তিনি মহাসমুদ্রের মতো পরমাত্মার প্রকাশ করেন। তিনি সমুদয় মানব-মানবীর হৃদয়ে জ্যোতি সঞ্চারিত করেন। পরমাত্মার মুখ থেকে তার আবির্ভাব। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজাম-পে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। এখানে সকাল ৬টায় প্রতিমা স্থাপন, সাড়ে ৮টায় পূজা, সাড়ে ৯টায় পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, দুপুর ১২টায় প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা ৬টায় সন্ধ্যা আরতি এবং রাতে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজা ম-পেরও অনুরূপ অনুষ্ঠানমালা থাকছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বেগম রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, কুয়েত মৈত্রী হল, ফজিলাতুননেছা মুজিব হলসহ বিভিন্ন হলে সরস্বতীয় পূজার আয়োজন করা হচ্ছে সাড়ম্বরে। জগন্নাথ হলে কেন্দ্রীয় পূজাম-প ছাড়াও এবার ৬২ বিভাগ মিলিয়ে ৭০টি পূজাম-প স্থাপন করা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও জগন্নাথ হল পুকুরে চারুকলা বিভাগের মনোজ্ঞ পূজাম-প ও প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগের উদ্যোগে পৃথক ৩৩ পূজাম-প স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের উদ্যোগে সংসদ ভবনসংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউর রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরস্বতীয় পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে সকালে পূজা ছাড়াও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এছাড়া রাজধানীর রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসকন মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ গোস্বামী আখড়া ও মন্দির, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা), ব্যাংকার্স পূজা পরিষদ, রামসীতা মন্দির, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর সরকারী বাংলা কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠন ও স্কুল-কলেজে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হবে।
×