ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ঢাকা-কুমিল্লা শিরোপা লড়াই

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 আজ ঢাকা-কুমিল্লা শিরোপা লড়াই

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ষষ্ঠ আসরের পর্দা নামছে আজ। এদিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে লীগের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচটিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ঢাকা ডায়নামাইটস লড়াই করবে। শিরোপা এবার কার? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলটি এর আগে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০১৫ সালে তৃতীয় আসরে শিরোপা জিতে দলটি। প্রথমবার বিপিএলে অংশ নিয়েই বাজিমাত করে কুমিল্লা। এরপর টানা দুই আসরে তারা ফাইনালেও খেলতে পারেনি। চতুর্থ আসরে ২০১৬ সালে ‘প্লে-অফ’ও খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এমনকি লীগপর্ব শেষে সাত দলের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে থাকে কুমিল্লা। চ্যাম্পিয়ন দলটির মহাপতন হয়। পঞ্চম আসরে ২০১৭ সালে আবার দলটি ঝলক দেখায়। লীগপর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে ‘প্লে-অফ’ খেলাও নিশ্চিত করে। সেরা দুইয়ে থাকায় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলার সুযোগও পায়। কিন্তু একটি কোয়ালিফায়ার ম্যাচেও জিততে পারেনি। তাই আবারও ফাইনালে খেলার আশা হতাশাতেই পরিণত হয়। এবার আর দলটি ভুল করেনি। ঢাকা ডায়নামাইটসের পর রংপুর রাইডার্সের কাছে হেরে গত আসরে ফাইনালে উঠতে পারেনি কুমিল্লা। এবার সেই রংপুরকে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়। দলটি এবার লীগেও দুর্দান্ত খেলেছে। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে জিতেই ফাইনালে খেলছে। লীগপর্বে এবার পয়েন্ট তালিকার সেরা দুইয়ে থাকে কুমিল্লা। সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়েও রানরেটে রংপুরের চেয়ে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ১২ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই জিতে কুমিল্লা। প্রথম চার ম্যাচে একটিতে জিতে, একটিতে হারে। পরের সাত ম্যাচের মধ্যে ছয়টিতেই জিতে যায়। টানা চার ম্যাচেও জিতে। তাতে করে ‘প্লে-অফে’ খেলা সবার আগে নিশ্চিত করে নেয় কুমিল্লা। লীগের শেষ ম্যাচটিতে রংপুরের কাছে হেরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। যে দলটির কাছে লীগপর্বের শেষ ম্যাচ ও আরেকটি ম্যাচে হারে, সেই দলটিকেই প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করে কুমিল্লা। এখন ফাইনালে ঢাকাকে হারিয়ে আবারও শিরোপা ঘরে তোলার অপেক্ষা কুমিল্লার। তা কী সম্ভব? খুবই সম্ভব। তা মনে করছেন দলের অধিনায়ক ইমরুল কায়েসই। যদি কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে ইমরুলের হাতে শিরোপা শোভা পাবে। চারবারের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও একবারের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের গোলকধাঁধা থেকেও শিরোপা বের হবে। নতুন চ্যাম্পিয়ন অধিনায়কও মিলবে। আবার ফাইনালের আগে কুমিল্লার ক্রিকেটাররা ভালই বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছেন। টানা খেলা থেকে তিনদিন বিরতি পেয়েছেন। তাতে করে ফুরফুরে মেজাজেই আছেন কুমিল্লা ক্রিকেটাররা। যে দলটি কুমিল্লার প্রতিপক্ষ তারা ফাইনালের আগে বিরতি পেয়েছে মাত্র একদিন। সেখানে কুমিল্লার ক্রিকেটাররা ফুরফুরে থেকেই মাঠে নামতে পারছেন। ইমরুল কায়েস তাই বলেছেন, ‘ফাইনালের আগে ফ্রেশ হয়ে ফেরার সুযোগ মিলেছে। তিনদিন সময় মিলেছে।’ ইমরুল বোঝাতে চেয়েছেন ফ্রেশ হয়ে ফেরা মানে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে থাকা ও মানসিকতা চাঙ্গা থাকা। তাতে ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য পূরণও হওয়া ইমরুলের বিশ্বাস, ‘আমরা ঢাকা এবং রংপুর দুই দলকেই হারিয়েছি। গ্রুপপর্বে ঢাকার বিপক্ষে আমরা জিতেছি। কিন্তু রংপুরের বিপক্ষে জিততে পারিনি। তাদের বিপক্ষে প্রথম দুটি ম্যাচে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই মাঠে নেমেছিলাম আমরা। যার কারণে হারতে হয়েছে। কিন্তু কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আমরা বেশ পরিকল্পনা করেই নেমেছিলাম এবং তার সুফলও পেয়েছি। তাই ফাইনালে যেই আসুক তাদের হারিয়েই আমরা শিরোপা জিততে চাই।’ ঢাকা ডায়নামাইটস দলটি ধুঁকতে ধুঁকতে ‘প্লে-অফে’ উঠেছে। কিন্তু ‘প্লে-অফে’ আবার দুর্বার ঢাকাকেই মিলেছে। ফাইনালের আগে ‘ফাইনাল’ ধরা হয়েছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচকে। সেই ম্যাচটিতে রংপুরকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে ঢাকা। এলিমিনেটর ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকেতো উড়িয়ে দিয়েছিল ঢাকা। অথচ ২০১৬ সালের চতুর্থ আসরের চ্যাম্পিয়নরা এবং গত আসরের রানার্সআপরা লীগপর্বে ধুঁকেছে। বিপদে পড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রাজশাহী কিংসকে পেছনে ফেলে রানরেটে এগিয়ে থেকে ‘প্লে-অফে’ খেলা নিশ্চিত করেছে ঢাকা। আর ‘প্লে-অফে’ টানা দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালেও খেলছে। লীগপর্বে উড়ন্ত সূচনা হয় ঢাকার। টানা চার ম্যাচ জিতে। ঢাকাকে রুখে দেয়া কঠিন এমনই মনে হতে থাকে। কিন্তু রাজশাহী কিংসের কাছে প্রথম হার হয় ঢাকার। এরপর থেকেই ঢাকার বারোটা বাজা শুরু হয়। প্রথম ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি ম্যাচই জিতে ঢাকা। কিন্তু পরের পাঁচ ম্যাচে টানা হারে। বিদায় ঘণ্টার সুরই যেন বাজতে শুরু করেছিল। লীগের শেষ ম্যাচটিতে যদি ঢাকা না জিততো তাহলে বিদায় নিত। শেষ পর্যন্ত জিতে। তাতে করে ১২ পয়েন্ট হয় ঢাকার। রাজশাহীর আগেই ১২ পয়েন্ট ছিল। কিন্তু রানরেটে এগিয়ে থাকে ঢাকা। তাতে পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করে সেরা চার দলের একটি হয় ঢাকা। ‘প্লে-অফে’ এলিমিনেটর ম্যাচে গিয়ে চিটাগং ভাইকিংসকে ৬ উইকেটে হারায় ঢাকা। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ম্যাচটিতে জিতলেই ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গিয়ে রংপুরকেও ৫ উইকেটে হারিয়ে দেয় ঢাকা। এবার কুমিল্লার বিপক্ষে ফাইনালে লড়াই হবে ঢাকার। লীগপর্বে কুমিল্লার কাছে দুইবারই হেরেছে ঢাকা। ফাইনালেও কী তাই হবে? চিটাগংয়ের কাছেও লীগপর্বে দুইবার হেরেছিল ঢাকা। কিন্তু এলিমিনেটর ম্যাচে গিয়ে ঠিকই ঢাকা জয় তুলে নেয়। আসল সময়ে গিয়ে জয় পায়। তাহলে কী কুমিল্লাকে ঠেকিয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবে ঢাকা? তা আজ ম্যাচ শেষ হতেই বোঝা হয়ে যাবে। ২০১৫ সাল থেকে নতুন আঙ্গিকে লীগ শুরু হয়। ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি হয় বেক্সিমকো গ্রুপ। প্রথম আসরে সেরা চার দলের একটি হয় ঢাকা। এলিমিনেটর ম্যাচে হেরে বিদায় নেয়। এরপর থেকে প্রতিবারই ফাইনালের দল হয়ে উঠেছে ঢাকা। এবারসহ টানা তিনবার ফাইনালে খেলছে ঢাকা। ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আশা, এবার তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। তিনি বলেছেন, ‘দলের ক্রিকেটারদের ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যেই সম্ভব হয়েছে (ফাইনালে ওঠা)। আমরা কখনই আশা ছাড়িনি। এখন ফাইনালেও খেলছি। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি আনন্দের সঙ্গেই খেলব।’ চাপকে জয় করে আনন্দ নিয়ে খেলতে পারলেতো জয়ও ধরা দিতে পারে। জিতলেতো ঢাকা চ্যাম্পিয়নও হয়ে যাবে। এখন দেখা যাক এবার শেষ পর্যন্ত শিরোপা কার হয়।
×