ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-রাসেলের সঙ্গে তামিম-আফ্রিদি লড়াই

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সাকিব-রাসেলের সঙ্গে তামিম-আফ্রিদি লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আর মাত্র একটি ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি হবে ঢাকা ডায়নামাইটস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ঢাকা আর ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে খেলবে কুমিল্লা। রাউন্ড রবীন লীগে দুইবারের মুখোমুখিতেই সাকিবকে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছেন ইমরুল। সেই দুই ম্যাচে দুই দলের হয়ে ভাল নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, আন্দ্রে রাসেল ও তামিম ইকবাল, শহীদ আফ্রিদি। আজ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ ষষ্ঠ আসরের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে এ চারজনের দিকেই মূলত নজর থাকবে সবার। দু’দলের এ চার ক্রিকেটারের মধ্যে লড়াইয়ে শেষ হাসিটা কে হাসবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে আজ ম্যাচের মূল আকর্ষণ এ চার তারকা। ঢাকা টানা চার ম্যাচ জিতেছিল এবার বিপিএলের শুরুতে। সাকিব, রাসেল, কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারাইন, রুবেল হোসেনরা নিয়মিতই দলের হয়ে ভাল কিছু করেছেন। আর সে কারণেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল ঢাকা। কিন্তু এক সঙ্গে সবাই জ্বলে উঠতে না পারার খেসারতও দিতে হয়েছে বিপিএলের মাঝামাঝি সময়ে। টানা ৫ ম্যাচ হেরে তাই লীগপর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার জোর শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সাকিব-রাসেলের নৈপুণ্যে ঠিকই শেষ পর্যন্ত প্লে-অফে উঠে আসে ঢাকা একেবারে পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে থেকে। ফাইনালে ওঠার জন্য টানা দু’টি ম্যাচ জিততে হয়েছে আবার। সে দুই ম্যাচেও রাসেল ছিলেন দুর্দান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ অলরাউন্ডার একই সঙ্গে ব্যাটে-বলে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বিশেষ করে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শক্তিশালী রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। তিনি বল হাতে ২ উইকেট নেয়ার পর আবার ব্যাট হাতে ১৯ বলে ৫ ছক্কায় ৪০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে বিজয়ী করেন। সাকিবের অবদান ব্যাটে-বলে সর্বশেষ তিন ম্যাচে তেমন বড় না হলেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যোগ্যতার সঙ্গে। আর ছোটখাটো কিছু করতেও পেরেছেন। চলতি আসরে সাকিব ব্যাট হাতে খুব বড় কিছু করতে না পারলেও ১৪ ম্যাচে দুই ফিফটিতে ২৯৮ রান করেছেন ২২.৯২ গড়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার বল হাতে পুষিয়ে দিয়েছেন ব্যাটিংয়ের ঘাটতিটা। ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে এই মুহূর্তে তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষ উইকেট শিকারি। আরেকটি উইকেট নিতে পারলেই বিপিএলের ইতিহাসে এক আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড গড়বেন তিনি। ব্যাটে-বলে অধিনায়ক সাকিব জ্বলে উঠবেন এমনটাই আশা থাকবে ঢাকার ভক্ত-সমর্থকদের। সেই সঙ্গে ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার রাসেলের কাছেও বড় কিছু চাইবে ঢাকা। বিশেষ করে ব্যাট হাতে বেশ বিধ্বংসী এ তারকার উইলো থেকে একটি ঝড়ো ইনিংস বেরিয়ে আসলে তা প্রতিপক্ষের জন্য দুশ্চিন্তারই কারণ হয়ে উঠবে। অধিনায়ক হিসেবেও এটি সাকিবের শিরোপা পুনরুদ্ধারের সুযোগ। ২০১৬ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। গত বছর রংপুরের কাছে ফাইনালে হেরে শিরোপা খোয়ান সাকিব। আর ২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দুইবার সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পর তা হারিয়ে ফেলেছেন। গত তিন আসরে সেটি পুনরুদ্ধার করতে না পারলেও এবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে তার। সাকিব-রাসেলের পাশাপাশি ঢাকার বাকি তারকাদের মধ্যে আরও দুই অলরাউন্ডার নারাইন ও পোলার্ড এবং পেসার রুবেলের দিকে নজর থাকবে তার। অপরদিকে ঢাকার এই তারকাদের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করার জন্য কুমিল্লারও যথেষ্ট রসদ রয়েছে। বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল অনেক বড় তারকা দলটির। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার এভিন লুইস, শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা ও পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের মতো নিয়মিত পারফর্মাররা রয়েছেন। তবে তামিমের পর এদের ছাপিয়ে আজ নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ভয়ঙ্করতম ব্যাটসম্যান তিনি। সে কারণেই নাম পেয়েছেন ‘বুম বুম’ আফ্রিদি। এবার লীগপর্বের দুই ম্যাচে কিছুটা সেই ঝড় দেখিয়েছিলেন। তবে অধিকাংশ ম্যাচেই ছিলেন ম্লান। মাত্র ৯ ইনিংস ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ২০.১৪ গড়ে করেছেন ১৪১ রান। এর মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ২৫ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৯ রান করে দলকে জিতিয়েছিলেন। তবে বল হাতে নিয়মিতই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তিনি। ১২ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার তার ইকোনমি মাত্র ৫.৮৫। ফাইনালের মতো বড় ম্যাচগুলোয় আফ্রিদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যের ওপর আস্থা থাকে সবার। অপরদিকে তামিম কুমিল্লার অন্যতম ব্যাটিং ভরসা হলেও এবারে শুরুতে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবু ২ ফিফটিতে ১৩ ম্যাচে ২৭.১৬ গড়ে ৩২৬ রান করে এখন ব্যাটিং পারফর্মেন্সে চলতি আসরে ৫ নম্বরে তিনি। শুরুর কয়েকটি ম্যাচে ব্যর্থতা দেখানোর পর নিজের চতুর্থ ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ৪২ বলে ১২ চার, ১ ছক্কায় ৭৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে দলকে জয়ী করেন। এরপর থেকেই বেশ রানের মধ্যেই আছেন তামিম। পরের ৩ ম্যাচে ২৫, ৩৪, ২৫ রান করেন। এরপর চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে মাত্র ৫১ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৫৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে বিজয়ী করেন তামিম। সর্বশেষ ৩ ম্যাচে অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি- ৩৮, ০ ও ১৭ রান করেছেন। আজ ফাইনালে আরেকবার তামিমের ব্যাটের দিকে ভরসা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে কুমিল্লা।
×