ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আবাহনীর ঘাম ঝরানো জয়

প্রকাশিত: ১১:৪১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঢাকা আবাহনীর ঘাম ঝরানো জয়

রুমেল খান ॥ একদিকে ১৭ বারের ও গতবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন। অন্যদিকে পাঁচবারের (স্বাধীনতার আগে তিনবার, স্বাধীনতার পর দু’বার) লীগ শিরোপাধারী। মুখোমুখি লড়াইয়ে জেতার সম্ভাবনা কাদের বেশি? প্রথম দলটির নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, প্রথম দলটিই জিতেছে। তবে অনেক কষ্টে, ঘাম ঝরিয়ে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় টিম বিজেএমসিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এটা চলতি লীগে তাদের টানা তৃতীয় জয়। আবাহনীর জয়ের নায়ক ছিলেন ডিফেনডার তপু বর্মণ। দলের জয়সূচক গোল করার পাশাপাশি তিনি প্রতিপক্ষ দলের নিশ্চিত একটি গোলও বাঁচিয়ে দেন। নিজেদের পঞ্চম খেলায় এটা ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর চতুর্থ জয়। ১২ পয়েন্ট তাদের। পয়েন্ট টেবিলে একধাপ ওপরে উঠলো তারা। পেছনে ফেললো বসুন্ধরা কিংসকে। ফলে আবাহনীই এখন এক নম্বরে। তবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বসুন্ধরার চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলেছে আবাহনী। ফলে পয়েন্ট টেবিলে তাদের এই শীর্ষ অবস্থানের চিত্তসুখ সম্ভবত ক্ষণস্থায়ীই হতে যাচ্ছে। কেননা পরের ম্যাচেই জিতে তাদের পেছনে ফেলে আবারও টপে চলে যেতে পারে ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা। আসলে লীগের শুরুতেই এই বসুন্ধরার কাছে হেরেই (০-৩ গোলে) ক্ষতিটা হয়েছে আবাহনীর। পক্ষান্তরে নিজেদের চতুর্থ খেলায় এটা দ্বিতীয় হার ‘সোনালি আঁশের দল’ খ্যাত বিজেএমসির। দুটি ড্রতে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ১৩ দলের মধ্যে দ্বাদশ অবস্থানে। বৃহস্পতিবার ম্যাচে হারলেও যথেষ্ট ভাল খেলেছে বিজেএমসি। আবাহনীকে সহজে জিততে দেয়নি। অনেক চাপে রেখেছে। মাঝে মধ্যেই চালিয়েছে ঝটিকা আক্রমণ। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোলের সন্ধান পায়নি। আবাহনীও প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। তবে একটি কাজে লাগিয়ে ওই এক গোলেই আদায় করে নেয় পূর্ণ তিন পয়েন্ট। কিন্তু সার্বিকভাবে তাদের খেলায় মন ভরেনি মাঠে খেলা উপভোগ করতে আসা আবাহনী সমর্থকদের। ম্যাচের ৬ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো বক্সে জটলা থেকে বিপদমুক্ত করে বিজেএমসির রক্ষণভাগ। দশম মিনিটে ওয়ালী ফয়সালের কর্নারে বিজেএমসির ডিফেন্ডার জহিরুল আলমের হেডে বিপদমুক্ত করার প্রচেষ্টা পোস্টে লাগলে অল্পের জন্য আত্মঘাতী গোল হয়নি। একটু পর ওয়ালীর কর্নার বাঁক খেয়ে জালে ঢোকার আগে ফিস্ট করে ফেরান বিজেএমসির গোলরক্ষক সোহাগ হোসেন। ২০ মিনিটে সতীর্থর ক্রসের উড়ন্ত বলে লাফিয়ে উঠে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি আবাহনীর নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা। পরের মিনিটেই ডানপ্রান্ত থেকে রায়হানের পাস বক্সে ফিরিয়ে দেন বিজেএমসির এক ডিফেন্ডার। ফিরতি বলে আবারও রায়হান সতীর্থের উদ্দেশে বল পাঠান। তবে এবারও ভাঙ্গতে পারেননি বিজেএমসির ডিফেন্স। ২৭ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় আবাহনী। মাঠের প্রায় অপরপ্রান্ত থেকে লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সালের লম্বা ফ্রি কিক পোস্টের কাছ থেকে লাফিয়ে ওঠে হেডে জালে পাঠান আরেক ডিফেন্ডার খেলা তপু বর্মণ (১-০)। ৩৪ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে বল পাঠিয়েছিলেন সানডে। কিন্তু বক্সে জটলার মধ্যে সতীর্থ হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড বেলফোর্ট বল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগেই তা বিপদমুক্ত করেন বিজেএমসির এক ডিফেন্ডার। ৫৪ মিনিটে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কর্নারে ক্যামেরুনের ডিফেন্ডার ফমবাগনে বাইবেকের হেড অল্পের জন্য ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেলে বিজেএমসির সমতায় ফেরার ভাল সুযোগটি নষ্ট হয়। ৫৭ মিনিটে ডানপ্রান্ত ধরে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন আবাহনীর এক ফুটবলার। বক্সে অপেক্ষাতেই ছিলেন সানডে। উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু গোল করতে পারেননি। ফিরতি বলে ফিলস্ বেলফোর্ট একবার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন। ৬২ মিনিটে বক্সের একটু দূরেই বল পেয়ে ডান পায়ের জোরাল শট নেন আবাহনীর ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন। কিন্তু বল খুব সহজেই ধরে ফেলেন বিজেএমসির গোলরক্ষক। ৫৮ মিনিটে ডানদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা রুবেলের আড়াআড়ি ক্রসে নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা গোলমুখ থেকে হেড নিতে ব্যর্থ হলে ব্যবধান দ্বিগুণ হয়নি। ৭৪ মিনিটে বাঁদিক দিয়ে আক্রমণে শরিফুল ইসলামের দুর্বল শট আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের পায়ে লেগে জালের দিকে ছুটছিল। গোললাইনের একটু ওপর থেকে ফিরিয়ে আবাহনীকে এগিয়ে রাখেন তপু। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে জুয়েল রানার বাড়ানো বল ধরে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তালগোল পাকিয়ে চিজোবা ব্যবধান দ্বিগুণ করতে ব্যর্থ হন। ম্যাচ শেষে আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপু দলের পারফর্মেন্সে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বলেন, ‘সানডে-রুবেল মিয়াসহ অন্যরা যেভাবে গোল মিস করেছে তাতে করে আমাদের আরও বড় ব্যবধানে জেতা উচিত ছিল।’
×