ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহীন রেজা নূর

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দিতে হবে

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার  বাস্তবে রূপ দিতে হবে

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক তস্য বা পেটি কর্মচারী আবজাল ও তার স্টেনোগ্রাফার স্ত্রী রুবিনা দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক শ’ কোটি টাকার সম্পদ-সম্পত্তির মালিক বনে গিয়েছে কয়েক বছরের মধ্যে। সম্প্রতি তাদের এই অপকীর্তি ধরা পড়েছে। আমরা নিশ্চিত যে- এই ধরনের আবজাল-রুবিনায় সরকারী বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তো বটেই, এমনকি সকল মন্ত্রণালয়, ব্যাংক-বীমা, হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-রেল-বিমান সব স্থানেই ভরে গেছে! প্রজাতন্ত্রের উচ্চ ও নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও এদের দেখা পাওয়া যাবে বৈকি! বঙ্গবন্ধু এই জাতীয় দুর্নীতিবাজদের দেখা পেয়ে সেই বাহাত্তর-তেয়াত্তরেই কি বুক ফাটা হায়-আফসোস না করেছিলেন। তিনি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে এত চোর আর দুর্নীতিবাজের সাক্ষাত পেয়ে আর্তনাদ করে বলতেন, ‘বিশ্বে সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।’ তিনি আরও বলতেন, ‘আমি আমার মানুষদের বাঁচানোর জন্য দুনিয়া থেকে ভিক্ষা করে নিয়ে আসি আর এই চাটার দল তা শেষ করে দেয়।’ দেশে তখন রাস্তাঘাট-কালভার্ট-সেতু সর্বত্র পাকিস্তানী হানাদাররা ধ্বংস করে দিয়েছে। রেল-নৌ-সড়ক-বিমান কোন পথই সে রকম চলাচলের উপযোগী নেই। এর মাঝে ভারত থেকে এক কোটি শরণার্থীকে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসনের মারাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাঁকে। বৈদেশিক রিজার্ভ তখন শূন্যের কোঠায়! পুলিশ-আর্মিসহ সব বাহিনীই অসংগঠিত, পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত কয়েক লাখ বাংলাদেশীর প্রত্যাবাসন এর মাঝে আর এক বড় সঙ্কটরূপে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশকে তখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। দেশ অভ্যন্তরে সর্বহারা ও গণবাহিনীর সহিংসতায় জাতি বিপন্ন হওয়ার জোগাড়। দেশের বাইরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্তের জাল বুনে চলেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। মজুদদার, চোরাকারবারী, ফড়িয়া-দালাল-ধড়িবাজে ছেয়ে গেছে দেশ। সে কি নিদারুণ অসহায় অবস্থা এক। পাঠকদের অনেকেরই মনে আছে, বাকশাল গঠনের পর একটি অসাধারণ ভাষণে বঙ্গবন্ধু আমলা ... বিশেষ করে উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন যে, ‘দয়া করে আপনারা নিজেদের জীবন এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সেবার কাজে ব্যয় করুন, কেননা ভুলে যাবেন না যে, অহোরাত্রি পরিশ্রম করে ওরাই আপনাদের ও আমাদের সবার আহার জোগায় এবং ওদের ট্যাক্সের পয়সাতেই আপনাদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা হয়। সুতরাং নিজেদের ওদের প্রভু ভাববেন না সেবক ভাবার চেষ্টা করুন।’ তার এই ভাষণ অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের কর্র্ণকুহরে প্রবেশ করলেও তারা সুযোগ বুঝে ভেতরে ভেতরে দল পাকাতে থাকে এবং বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে গ্যাঁড়াকলে ফেলার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়। পরের ইতিহাস সবার জানা। সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই নতুন মন্ত্রীদের প্রায় সকলেই স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া ভাষায় কথা বলেছেন এবং বলে চলেছেন। তাদের এসব কথা বা সাবধানবাণী উচ্চারণের ফলে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের কাছে কিছু কঠিন সতর্কবার্তা অবশ্য পৌঁছেছে এবং জনগণ বুঝতে পারছে যে- প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি, মাদক আরা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যে অনড় এবং জিরো টলারেন্সের নীতি কৌশল নিয়েছেন সে ব্যাপারে তিনি যারপরনাই বদ্ধপরিকর। আর তার এই অবস্থান দেশবাসীর জন্য যে অত্যন্ত আশাজাগানিয়া একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে, মন্ত্রীবর্গের কথাবার্তা বা হুঁশিয়ারি ইত্যাদি বিষয়ে আমরা মনে করি, দুর্নীতি উচ্ছেদে তাদের আন্তরিকতা ও সঙ্কল্পের হয়ত কোন ঘাটতি নেই, তথাপি বিষয়টি যে অত্যন্ত কঠিন, জটিল এবং দুরূহ (যদিও অবসম্ভব নয়) সে ব্যাপারে তারা কতটা ওয়াকিফহাল হয়ে এই ধরনের বাক্যবাণ নিক্ষেপ করছেন আর কতটা তারা তাদের এ বিষয়ক সামর্থ্য ও সাংগঠনিক শক্তি নিরূপণ এবং সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো যাবতীয় প্রস্তুতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে করছেন তা আদৌ পরিষ্কার নয়। ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহারে প্রদত্ত এ বিষয়ক অঙ্গীকার পূরণ করাটা তাদের জন্য যেমন ফরজ, তেমনি আবার বাংলাদেশের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি আর অগ্রগতির জন্য এক অপরিহার্য শর্ত বৈ নয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা এ জাতিকে অনেক দিয়েছেন, তার মধ্যে আমার বিবেচনায়; তিনি এই সম্বিৎহারা, আত্মমর্যাদালুপ্ত জাতির মনে আত্মপ্রত্যয়বোধ ও আত্মবিশ্বাসের চেতনাটি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করে বাংলাদেশের মানুষের অন্তরের সুপ্ত শক্তির মহাজাগরণ ঘটিয়ে দিয়ে এক অসম্ভব সাধন করেছেন। তার দেশপ্রেম, ধীশক্তি, মানুষের প্রতি সাত-সমুদ্র দরদ, কর্ম ও ধর্মনিষ্ঠা, নির্ভীক-চিত্ততা, হিমাচলের মতো অটল প্রত্যয়বোধ ও অভ্রভেদী, জনপ্রিয়তা দেশে বিদ্যমান সকল ভ্রুকুটি এবং দুর্লঙ্ঘ্য বাধা অতিক্রম করার ব্যাপারে এক নিশ্চিত নির্ভরতারূপেই প্রতীয়মান হবে বলে বিশ্বাস করি। দেশের ব্যাংক সেক্টরের যে নাজুক অবস্থার চিত্র পাওয়া যায় এবং এ ব্যাপারে কঠোর কোন আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা তথা দোষী মাত্রকেই দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া না হলে এমনিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা এই সেক্টর থেকে লোপাট হতেই থাকবে বৈকি। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি উচ্ছেদ বিষয়ক দুর্জয় শপথকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে মন্ত্রী ও বিভিন্ন সেক্টরের দায়িত্ববান আমলা বা কর্মকর্তাদের রয়েছে অবশ্য পালনীয় কিছু কর্তব্য! কিন্তু মুশকিল এই যে, সর্ষের ভেতরেই যখন ভূত লুকিয়ে থাকে তখন সে ভূত ছাড়ানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে নিশ্চয়ই। আমাদের রাজনীতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমানই প্রথম তার বা তার সতীর্থ কুচক্রীদের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি পূরণের নিমিত্তে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালানায় শঠতা ও অসাধুতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পেশীশক্তি ও দুর্নীতির পথকে নানাভাবে জায়েজ করে তোলেন। আর জে. এরশাদ এ দেশের সরল-প্রাণ মানুষদের ধর্র্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে সংবিধানে ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’ সংযোজন এবং এর পর পরই ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যাবতীয় ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম চালু করেন। তখন এই সামরিক জেনারেলদের ক্ষমতার কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত করতে দেশের বিভিন্ন পেশার এক শ্রেণীর লালসাগ্রস্ত, বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন, যারপরনাই লোভী ও গণবিরোধী ব্যক্তিদেরও লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে প্রতিযোগিতায় শামিল হতে দেখা গেছে। আজ যদি আমরা একে একে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করি তাহলে সন্দেহাতীতভাবে জাতি স্তম্ভিত হয়ে পড়বে। এই লুটেরারাই সময়ে অসময়ে আবার জাতিকে যখন নিজেদের ‘সততা- সাধুতার গল্প শোনায় তখন প্রমাদ গোনা ছাড়া আর জনতার আর কী-ই বা করার থাকে! বিএনপি নানা ছল-চাতুরীর মাধ্যমে দীর্ঘ একুশ-বাইশ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দেশের প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধবাদী একটি শ্রেণী সৃষ্টি করে দেশ ও সমাজজীবনের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলেছে। আর তাদের এই অপরিণামদর্শী কর্মকা-ের কারণেই জাতির মধ্যে একটি কৃত্রিম বিভাজন রেখা সৃষ্টি হয়েছে- যা কিনা মোটা দাগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শিবির নাম পরিচিতি লাভ করেছে! এই পৃথিবীতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বসবাস করতে একটি মানুষের বা একটি পরিবারের আসলে সারা জীবনে মোট কত টাকার দরকার হয়? লিও তলস্তয়ের সেই বিখ্যাত গল্পের কথা মনে পড়ে যায় বার বার। অসামান্য সেই গল্প ‘hwo much land does a man require’? এই অসাধারণ গল্পের মাধ্যমে তলস্তয় পৃথিবীতে জীবদ্দশায় মানুষের সীমাহীন লোভের কাহিনী অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলে এই সার সত্যটিকেই প্রতিষ্ঠিত করেন যে, শেষ বিচারে আসলে একটি মানুষের মাত্র সাড়ে তিন হাত জমির প্রয়োজন হয় এর বেশি কিছু নয়! কিন্তু বিশ্বে আমরা সর্বক্ষণ লালায়িত হতে থাকি। আর সে ক্ষেত্রে আমাদের কোন সীমা-পরিসীমার বোধই থাকে না। মানুষ তো আসলে আর সব প্রাণীর মতোই একটি প্রাণী। ওই প্রাণী থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণের জন্য কিছু গুণাবলী ধারণ ও তার নিয়মিত চর্চা অপরিহার্য, কিন্তু মুশকিল এই যে, মৌলিকভাবেই তো মানুষ লোভী, কর্তৃত্বপ্রয়াসী, হিংসুক, প্রতিশোধপরায়ণ, নিষ্ঠুর এবং প্রচন্ড স্বার্থপর। ফলে নিজের লোভ-লালসা চরিতার্থ করার নেশায় সে দুনিয়ায় তার প্রধান কর্তব্যের কথা বেমালুম ভুলে যায় আর সমাজে-সংসারে সবার জন্য মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি করে হলেও সে সম্পদ-সম্পত্তি কব্জা করতে চায়। বর্তমান বিশ্বের ৬শ’ কোটি মানুষের সম্পদ যদি এমনিভাবে এক/দেড় শ’ লোকের তালুবন্দী হয়ে থেকে থাকে তাহলে আমাদের নতুন করে ভেবে দেখতে হবে যে, আমরা আসলে কোন অসাম্য ও বৈষম্যের জগতে বাস করছি! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি উচ্ছেদে ইতোমধ্যে যে উদ্যোগ-আয়োজন শুরু করেছেন তাতে তার ওপর জনআস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে এতে কোনই সন্দেহ নেই। দলের অনেক হেভিওয়েট সদস্যকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে নতুন মুখ, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দেরও ক্যাবিনেটের বাইরে রাখা, সরকারী জায়গায় দলীয় লোকদের অবৈধ সাত তলা ভবনসহ অনেকের অবৈধ স্থাপনা ইতোমধ্যে গুঁড়িয়ে দেয়া, সাংসদ পুত্র রনিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ধর্ষক, মাদক ব্যবসায়ী এবং খুনীদেরও বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ, ঋণ খেলাপী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম ও পরিপূর্ণ সদিচ্ছাকেই মেলে ধরেছে। আমি এর সঙ্গে শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, অত্যন্ত বিশ্বস্ত লোকদের মাধ্যমে গোপনীয়তা পরিপূর্ণভাবে বজায় রেখে দুর্নীতিবাজদের প্রথমে শনাক্তকরণ, তাদের বিদেশ গমনের ওপর গোপনে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং তা যাতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনী কঠোরভাবে তদারক করে তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা পূর্বাহ্নেই করে রাখা, আইনের কোন প্রকার ফাঁক-ফোকর দিয়ে যাতে এসব দুষ্কৃতকারী কোনভাবেই বেরিয়ে যেতে না পারে তার জন্য আগেভাগেই আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন এবং আইন প্রয়োগের ব্যাপারে ন্যূনতম গাফিলতির প্রশ্রয় না দেয়া, অভিযুক্ত বা ধৃত ব্যক্তির পক্ষে কোন প্রকার তদ্বিরের সুযোগ না রাখা (তা সে যত উপর মহল থেকেই করা হোক না কেন), অভিযুক্ত ব্যক্তির অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পত্তি রাষ্ট্রের পক্ষে বাজেয়াফত করা এবং দুর্নীতিবাজ সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর (তা সে যে দলভুক্তই হোক না কেন) জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, বিচারিক আদালতকে যাতে প্রভাবিত করার কোন সুযোগ না থাকে তার নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিধান করা এক্ষেত্রে কিন্তু অপরিহার্য শর্ত। জিয়াউর রহমান গেঞ্জি গায়ে চোখে গগলস এঁটে কোদাল হাতে খাল খননের ও দুর্নীতি উচ্ছেদের নামে প্রকারান্তরে কিন্তু রাষ্ট্রে বাংলাদেশ-বিরোধী সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসন করে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে, পাঠকের মনে আছে নিশ্চয়ই, জেনারেল এরশাদ গেঞ্জি গায়ে সেনানিবাসের বশংবদ অফিসারদের নিয়ে দলে-বলে বাইসাইকেলে চেপে কৃচ্ছ্রতা সাধনের নামে জাতিকে কি বুজরকিই না দেখিয়েছিলেন। মোদ্দা কথাটি এই যে, দেশের জনগণ এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম জঙ্গীবাদ, মাদক, সন্ত্রাস দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ দেখতে চায়। আর এদের মধ্যে এক বিপুলসংখ্যক দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করতে আগ্রহী। সুতরাং এদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে দেশপ্রেমিক ও শত করা এক শ’ ভাগ নিবেদিত তরুণদের অবিলম্বে সংগ্রহ করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারী দফতরে সর্বক্ষণিক নজরদারির কাজে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে, এদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় বেতন নির্ধারণ করতে হবে যাতে কি-না লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে এরা রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষক না বনে যায়! মনে রাখতে হবে যে- দলের ভেতর বিএনপি ও জামায়াতের বহু কাউয়া ঘাপটি মেরে বসে আছে ঝোপ বুঝে কোপ মারার ধান্দায়! এদের চাল চলন বা গতি বিধির ওপর অষ্টপ্রহর নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে দলকে। দল ছাড়াও প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যেও যে এই ধারার বহু লোক ঘাপটি মেরে বসে আছে এ তো ওপনে সিক্রেট। অতএব, যে কোন অভিযান শুরুর আগে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে ও ঠান্ডা মাথায় এর বিহিত-বন্দোবস্ত করে তবে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এ কথা ঠিক যে, দুর্বৃত্ত-দুষ্কৃতকারী-দুর্নীতিবাজরা বাঁচার জন্য যতই চক্রান্ত করুক বা সংঘবদ্ধই হোক না কেন আদতে কিন্তু এরা সদা-ভীতসন্ত্রস্ত ও ভীরু! রবীন্দ্রনাথ এদের প্রসঙ্গে যথাযথই বলেছেন, ‘যার ভয়ে ভীত তুমি, সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে/একবার দাঁড়াও যদি তুমি পলাইবে সে ধেয়ে পথ কুক্কুরের মতো।’ সুতরাং এসব ঘুঘু শ্রেণীর মানুষদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, শুধু চারদিকে চোখা-কান খোলা রেখে তবেই এদের মোকাবেলা করাটা সমীচীন। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, বিগত সময়ে এমন কিছু প্রভাবশালী আছে, যারা বিগত মেয়াদে নানা অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছে। তাদের সম্পদ কতগুণ স্ফীত হয়েছে এবং তা কিভাবে হয়েছে তা বোঝার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের ত্যাগী ও নিঃস্বার্থ নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে জানতে হবে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তার সত্যা-সত্য নির্ণয়পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×