ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ তৃতীয় বর্ষের উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ তৃতীয় বর্ষের উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘যদি কেউ মনে করেন, মাতৃভাষায় তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করবেন না, কেবল বিদেশী ভাষায় শিক্ষিত করে সন্তানদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করবেন, তারা মুর্খের বেহেস্তে বাস করছেন। যারা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবহেলা করে তাদের দ্বারা কোন সংস্কৃতি সেবাই সম্ভব নয়’-বাংলা ভাষা নিয়ে মেধাভিত্তিক টিভি রিয়্যালিটি শো ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ তৃতীয় বর্ষ’ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। ইস্পাহানি মির্জাপুর টি লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় তৃতীয়বারের মতো শুরু হলো বাংলা ভাষা নিয়ে মেধাভিত্তিক টিভি রিয়্যালিটি শো ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’। বুধবার দুপুরে চ্যানেল আই ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, প্রতিযোগিতার তিন বিচারক কথাসাহিত্যিক ও কবি আনিসুল হক, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ও অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি লিমিটেডের পরিচালক এমএম জাহিদা ইস্পাহানি, এমাদ ইস্পাহানি ও আলি ইস্পাহানি। এতে সভাপতিত্ব করেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা ভাষা চর্চার অভিনব প্রয়াসের কথা জানতে পারলাম গত দুই বছরের। আমি এতে খুবই আবেগাপ্লুত। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ’৫২ থেকে ’৫৫ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু একটা ব্যাপার খুবই পীড়া দেয়। ঢাকার পথে বের হলে যখন দেখি দোকানের নাম ফলক ইংরেজীতে, অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ইংরেজীতে লেখা। এই হীনম্মন্যতা আমরা যারা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাদের জন্য কতটা পীড়াদায়ক বোঝানো কঠিন। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে ইস্পাহানি ও চ্যানেল আইয়ের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বাংলা ভাষা যেন পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা ছাড়িয়ে যেতে পারে এই কামনা করি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লা সিরাজী বলেন, বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে যেন মা উচ্চারণ করি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে এসেও কেন বাংলা নিয়ে আমরা সঙ্কটে নিপতিত? আমাদের আত্মজাগরণ ও বিশ্লেষণের সময় কি শেষ হবে না? আমি আশা করি, পরবর্তী প্রজন্ম যেন বাংলাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারে। তাহলে এ আয়োজন সফল হবে। বাংলা হোক আমার দীপ্ত সঙ্গী, জাগরণের পতাকা, একমাত্র জাতীয় সঙ্গীত, যা দিয়ে পৃথিবীর বুকে আমরা গৌরবের সঙ্গে বলতে পারব, জয় বাংলা। ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বাংলাবিদ নামের ভ্রমণ হচ্ছে আনন্দ ভ্রমণ। আমাদের উপলক্ষ হচ্ছে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলা ভাষাকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া। আনিসুল হক বলেন, এ অনুষ্ঠান আমাকে আনন্দ ও অনুপ্রেরণা যোগায়। আশ্বাস পাই বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে, তথা নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। এটি দেশের শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের জাগিয়ে তোলার একটি সুন্দর অনুষ্ঠান। ত্রপা মজুমদার বলেন, ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে খুবই ভাল লাগে। আমি মনে করি, একটা ভাল কাজের সঙ্গে আছি। এর একটা দিক হচ্ছে নিজের শেখা অন্যটা বাচ্চাদের এত জানাশোনা দেখে আনন্দ পাওয়া। ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, দুবছর ধরে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। এবারও অনেকে অপেক্ষা করে আছে, কখন শুরু হবে। যার জন্য এত ছাত্রছাত্রী অপেক্ষা করে আছে, তার জয় হবেই। শুরুতে ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, এ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে মেধা ও মননের শ্রেষ্ঠ ব্যান্ডের বা মিশেলের মানুষদের খুঁজে বের করা, যারা বাংলা ভাষা, বানান এবং বাংলা শব্দের ব্যবহারে দক্ষতা দেখাতে পারবে। মেধা ও মননভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন বাছাই প্রক্রিয়া পার হয়ে যারা সত্যিকার ভাষা লড়াকু হতে চায়, তাদের নিবন্ধন করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ বাংলা, বানান ও ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। এ প্রতিযোগিতায় শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার, বানান চর্চা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও ব্যাকরণের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করা হবে। দেশসেরা বাংলাবিদ জিতে নেবে ১০ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী পাবে যথাক্রমে তিন ও দুই লাখ টাকার মেধাবৃত্তি। ১ থেকে ১০তম স্থান অধিকারী বাকি ৭ প্রতিযোগী পাবে একটি ল্যাপটপ ও ব্যক্তিগত পাঠাগার গড়ে তোলার জন্য ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের বই ও আলমারি। ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’ তৃতীয় বর্ষের জন্য নিবন্ধন শুরু হয় বুধবার থেকে। নিবন্ধন করতে হবে এসএমএসের মাধ্যমে। বাংলাবিদ লিখে স্পেস, নাম স্পেস, বয়স স্পেস, শ্রেণী স্পেস, যে বিভাগ থেকে অংশ নেবেন তার নাম লিখে এসএমএস পাঠাতে হবে। দেশের নয়টি বিভাগের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। সেরা ছাত্রছাত্রীদের মূল পর্বে নিয়ে আসা হবে। বিভাগীয় সেরা প্রতিযোগীরা চ্যানেল আইয়ের স্টুডিও রাউন্ডে অংশ নিয়ে বাংলায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য লড়বে যা পরবর্তীতে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় প্রদর্শিত হবে। ২০টি পর্বের আকর্ষণীয় এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্বাচন করা হবে।
×