ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনিয়ম দূর করতে প্রতিটি ব্যাংকে স্পেশাল অডিট

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অনিয়ম দূর করতে প্রতিটি ব্যাংকে স্পেশাল অডিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম দূর করতে প্রতি ব্যাংকে ‘স্পেশাল অডিট’ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম বের করতে এই স্পেশাল অডিট করা হবে। একই সঙ্গে ঋণ খেলাপীদের প্রতিও কঠোর হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য দেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতি ব্যাংকে নিরীক্ষা (অডিট) করা হবে। যারা ঋণ নিয়েছে, তারা কারা একসঙ্গে ঋণপত্র খুলে মূলধনী যন্ত্র এনেছে, তা কোথায় বসিয়েছে তা দেখতেই এটি করা হবে। আপনাদের বিপদে ফেলতে নয়, নির্ভার করতেই অডিট হবে। তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আমরা কাজ শুরু করব। আমরা এমন একটা অবস্থানে নিয়ে আসতে চাই, যেখানে শুধু সততার বিজয় হবে, সবাই সত্য জানবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হবে। ঋণ খেলাপী নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে দুই ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রথম শ্রেণী হলো যারা আসলেই ব্যবসা করতে চান, কিন্তু মাঝে মাঝে হোঁচট খান। হোঁচট খেয়ে খেলাপীতে পরিণত হন। তাদের প্রতি কিছুটা সহনশীলতা থাকবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আরেক ব্যবসায়ী শ্রেণী আছেন যারা টাকা ফেরত না দেয়ার জন্যই ঋণ নেন। তাদের প্রতি তিনবার সাবধান বাণী উচ্চারণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। সেই টাকা আদায়ে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটাই করা হবে বলে জানান তিনি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণ অবশ্যই একটা অপরাধ। শুধু আপনাদের জন্য না, পুরো দেশের জন্য। ঋণ নিয়ে পুরোপুরি ব্যবহার করতে না পারলে তা ব্যর্থতা। তবে দেখতে হবে কারা ব্যবসায়ী আর কারা অসাধু ব্যবসায়ী। অসাধু ব্যবসায়ীদের কোন ছাড় নেই। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কেউ ঋণ খেলাপী হলে তার তথ্য সব এজেন্সিকে দেয়া হয় এতে করে সে ইচ্ছে করলেও দেশ ত্যাগ করতে পারেন না। অর্থ আদায়ে খেলাপীরা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারে, সেজন্য নিয়ম-কানুনেরও সংস্কার আনা হবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমি যেসব বিষয় ধারণা করতে পারছি, প্রকৃত সত্য চিত্র পেলে আমাদের জন্য ভাল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে আমি ভালভাবে চিনি। তিনি আতঙ্ক তৈরির জন্য কোন কাজ করেননি। আমি এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য আসিনি। গ্রাহককে জেনেশুনে ঋণ দিতে হবে। গ্রহীতারা যে খাতে ঋণ নিতে চায় তার গুণগত মান বিবেচনা করে ঋণ দেয়ার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে ব্যবসা শুরু করতে চান ১০ বছর পরে তার যদি কোন অস্তিত্ব না থাকে তাহলে সেই ঋণ কোনদিনও ফেরত আসবে না। তাই দেয়ার পর টাকাটা কোন কাজে লাগানো হচ্ছে সে বিষয়ে তদারকিরও পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য দুটি, একটি হচ্ছে গত বছরের অর্জন এবং কমতিগুলো উল্লেখ করা এবং পরবর্তী বছরে তুলনামূলক দুর্বল জায়গায় গুরুত্ব দিয়ে তা পূরণ করা। এ বছর লোকসানি ব্যাংকের তালিকায় নাম না থাকায় রূপালী ব্যাংককে অভিনন্দন জানান ফজলে কবির। তবে রূপালী ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খেলাপী ঋণ। ডিসেম্বর শেষে রূপালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ১৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে এবং অপারেটিং প্রফিট পরিচালন মুনাফা ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। ব্যাংকের সার্বিক উন্নয়নে কর্পোরেট গবর্নেন্স বা সুশাসনের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন গবর্নর। এর যেকোন ধরনের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। স্বাগত বক্তব্যে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান সম্মেলনে একটি হিসাব তুলে ধরেন এবং সৌদি আরবে একটি শাখা খোলার দাবি জানান। আতাউর রহমান বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশী আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। ফলে তারা কাজ করে বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেন না। তাই বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠাতে ওই দেশে একটি সরকারী ব্যাংকের শাখা দরকার। তিনি বলেন, রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে সেদেশে একটি শাখা খুলতে চাই। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকও সৌদিতে শাখা খুলতে চায়। এ সময় অর্থমন্ত্রীর কাছে তিনি সৌদিতে শাখা খুলতে সোনালী ব্যাংককে দুই মাস সময় বেঁধে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, নির্ধারিত সময়ে তারা (সোনালী ব্যাংক) সেখানে শাখা খুলতে না পারলে রূপালী ব্যাংক শাখা খুলবে। সম্মেলনে একটি হিসাব তুলে ধরে আতাউর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে এ রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ১৪৪টি। ২০১৮ সাল শেষে ৯৫ শতাংশ কমে ৮টিতে নেমে এসেছে। তিনি জানান, বর্তমানে ৫০০ কোটি টাকা লাভে থাকা রূপালী ব্যাংক মূলধন সমস্যায় ব্যবসা বাড়াতে পারছে না। বিশেষ করে বিদেশে ব্যবসা বাড়াতে সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য তিনি সরকারের কাছে মূলধন বাড়াতে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেয়ার দাবি জানান। বর্তমানে ব্যাংকের ৩৭২ কোটি টাকা মূলধন রয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। আতাউর রহমান বলেন, আমি মনে করি ব্যাংকের অধিকাংশই তরুণ আর এই তরুণরাই ব্যাংকের চেহারা পাল্টে দেবে। ১৪ হাজার লোকবল দরকার হলেও মাত্র ৪ হাজার দিয়ে কাজ চলছে তাই লোকবল বাড়ানো দরকার বলেও জানালেন তিনি। এ সময় ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ের ম্যানেজাররাও উপস্থিত ছিলেন।
×