ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুঁজে খুঁজে মানুষের ঘরে বিদ্যুত দেয়া হচ্ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

খুঁজে খুঁজে মানুষের ঘরে বিদ্যুত দেয়া হচ্ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন খুঁজে খুঁজে মানুষের ঘরে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হচ্ছে। বুধবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে ছয়টি বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান প্রতি ঘরে আলো জ্বালানোই তার সরকারের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি আর বিদ্যুতের উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালব। এটি আমাদের লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন এখন আর বিদ্যুতের জন্য ছোটাছুটি করতে হয় না। এখন আলোর পসরা নিয়ে আপনাদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কোথায় বিদ্যুত দরকার- এভাবে খুঁজে খুঁজে আমরা মানুষের চাহিদা পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক হাজার ৫৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ছয়টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে আরও ১২ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে সন্দ্বীপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট সিম্পল সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (সিসিপিপি), সিরাজগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ২৮২ এর ইউনিট-৪ সিসিপিপি, খুলনা রুপসা-১০০ মেগাওয়াট, চাঁদপুরে ২০০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ-১৫০ মেগাওয়াট এবং চট্টগ্রামের জুলদা ১০০ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ১২ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেন। উপজেলাগুলো হচ্ছে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড। ঠাকুরগাঁওয়ের সদর এবং বালিয়াডাঙ্গী। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও কালুখালী। বরগুনার বামনা। হবিগঞ্জের খালাই, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ ও বাহুবল। জামালপুরের মেলান্দহ এবং ইসলামপুর। এছাড়া সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুত সরবরাহ শুরুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ওইসব এলাকার উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে আমরা বিদ্যুতের উৎপাদনও বাড়াচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য সারাদেশে আমরা বিদ্যুত ছড়িয়ে দেব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ছিয়ানব্বই থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন ক্ষমতায় ছিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়ে যাচ্ছিলাম। সাক্ষরতার হার বাড়িয়ে ছিলাম, রাস্তাঘাট করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে মানুষের ভেতর একটা আশার আলো জেগে ছিলাম। কিন্তু সেই আলো নিভে যায় ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর। দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলাÑ এটাই ছিল তাদের একমাত্র কাজ এবং আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের অপকর্মের ফল এদেশে জরুরী অবস্থা জারি হয়েছিল। এরপর আরও দুই বছর আমরা পিছিয়ে যাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে। এরপর ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা আমরা সরকারে থেকে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাই। বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ড. আহমেদ কায়কাউস বলনে, ২০ হাজার ৮৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত দশ বছরে ১০০ নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখন বিদ্যুত ঘাটতির দেশ থেকে বিদ্যুত উদ্বৃত্তর দেশে পরিণত হয়েছি। সাবেক মন্ত্রী এবং সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুত জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালকসহ সরকারী দফতরের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড রূপসা, খুলনা ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, এইচএফও ভিত্তিক আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক হায়াত উদৌলা খান, পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেনসহ মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেডের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা থেকে জানান, ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হওয়ায় দ্বীপবাসীর মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ফলে এখানে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মোফাজ্জল হোসেন সরকার জানান, বিদ্যুত খাতে বর্তমান সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি সরকারের রয়েছে এই প্লান্ট স্থাপনের মধ্য দিয়ে তার বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। কয়েক মাসের মধ্যেই ভোলা জেলায় শতভাগ বিদ্যুত চাহিদা পূরণ হবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ১০ বছর আগে যেখানে ভোলার বিদ্যুত চাহিদার ১৫ ভাগ পূরণ হতো। এখন সেখানে ৯৫ ভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এ ছাড়া ভোলায় এ ধরনের আরও ৩টি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এগুলো চালু হবে। আর এতে করে প্রতি গ্রাম আলোকিত হবে। গ্রামগুলো শহরে পরিণত হবে।
×