ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বইয়ের টাটকা ঘ্রাণ, আগে দেখার আনন্দ

প্রকাশিত: ১১:০২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নতুন বইয়ের টাটকা ঘ্রাণ, আগে দেখার আনন্দ

এমনিতেই সুন্দর বিকেল। বেশ ভাললাগে। আর গ্রন্থমেলার বিকেল কিংবা সন্ধ্যা তো মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। মেলার প্রবেশদ্বার খুলে দেয়া হয় বিকেল ৩টায়। ছুটির দিন খোলা থাকে সকাল থেকেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই অনেকে এসে চলে আসেন। তার পর শুধু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকা। নতুন বইয়ের অদ্ভুত একটা ঘ্রাণ। আগে ভাগে টাটকা ঘ্রাণ নিতে বিশেষ আগ্রহী পাঠক। মেলা শুরুর ক্ষণে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি কম থাকে। তবে থাকে। বিকেল যত গড়ায় তত ভিড় বাড়ে। সন্ধ্যায় জমজমাট মেলা। এর অন্যতম কারণÑ সূর্য ডুবার আগে আগে সাধারণ লোকের ভিড়টা কমে যায়। মেলায় প্রবেশ করতে শুরু করেন স্বনামধন্য লেখক ও প্রকাশকরা। আশপাশের আড্ডাগুলোও স্থানান্তরিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। আয়োজনের ষষ্ঠ দিনে বুধবার একই ছবি দেখা গেল। মাওলা ব্রাদার্সের সামনের ফাঁকা জায়গায় কথা হচ্ছিল রুবেল শিহাব ও স্বর্ণার সঙ্গে। তিনজনই গল্প করছিলেন। সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রুবেল বলছিলেন, আমরা বিকেল পর্যন্ত টিএসসিতে কাটাই। গ্রন্থমেলা শুরুর পর থেকে বিকেলের চাটুকু খেয়ে মেলায় চলে আসি। আজও এসেছি। আর বই? কেনা হলো কিছু? উত্তরে স্বর্ণা বললেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পসমগ্র উপহার পেয়েছি। একটু পরে আবার ঘুরে দেখব। পছন্দ হলে বই কিনব আরও। বিভিন্ন স্টলেও চলছিল গল্প আড্ডা। ওইসব আড্ডায় প্রাধান্য পেয়েছে নতুন বইয়ের আলোচনা। মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বলছিলেন, আমাদের সব বই নির্বাচিত। বিক্রিও হচ্ছে ভাল। তবে এখন নতুন বইয়ের মৌসুম। পাতা উল্টাতেই টাটকা ঘ্রাণ। এই ঘ্রাণ নেয়ারও আনন্দ আছে। অনেকে এ কারণেও আসছেন। এই আসাকে স্বাগত জানান তিনি। নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার ষষ্ঠ দিনে বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫২টি। তারও আগে মেলায় আসা কিছু বইয়ের খবর দেয়া যেতে পারে। এই যেমনÑ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামী থেকে মেলায় এসেছে ড. শ্যামল কান্তি দত্তের ব্যাকরণ ও অভিধান ‘সিলেটের উপভাষা।’ একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি বই ‘পাকিস্তানে আটক দিনগুলি।’ লিখেছেন নূরহাসনা লতিফ। জার্নিম্যান বুক প্রকাশ করেছে কবি মুহাম্মদ সামাদের বই ‘আমি তোমাদের কবি।’ একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে তার অপর গ্রন্থ ‘সোশাল সার্ভিস একটিভিটিস অব রিলিজিয়াস ইনস্টিটিউশনস ইন বাংলাদেশ।’ অন্যপ্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে মারুফুল ইসলামের কবিতার বই ‘বিশ্বাসীও নই ভ-ও নই।’ একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে মাহমুদ আখতার শরীফের বই উপন্যাস ‘নাটকের চতুর্থ পর্ব।’ সেমিনার ॥ এদিন গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল হাসনাত। আলোচনা করেন বিমল গুহ, গোলাম কিবরিয়া পিনু এবং শোয়াইব জিবরান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, ‘প্রিয় ফুল খেলার দিন নয় অদ্য’ কিংবা ‘কমরেড নবযুগ কি আনবে না’Ñতাঁর এসব অবিনাশী পঙ্ক্তিমালার মধ্যে আমাদের অনেকেরই মানস পুষ্টি অর্জন করেছিল ও আমরা এর মাধ্যমে সময়ের দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উপলব্ধি করেছিলাম, নবচৈতন্যের আলোকে। আমরা এসব কবিতার মর্মভেদী আবেদনকে অনুভব করেছিলাম জীবনকে মেলাবার আবেদন; প্রিয়ার সান্নিধ্য ও তার বাহুডোরকে পরিত্যাগ করে স্বপ্ন ছিঁড়ে জনমানুষের কল্যাণ ও মঙ্গলের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আকাক্সক্ষায়। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাংলা কবিতায় নতুন যুগের উদ্গাতা। তিনি জনমানুষের আকাক্সক্ষাকে কবিতার শব্দে, ছন্দে শিল্পরূপ দিয়েছেন। কবিতা তাঁর কাছে কোন উপরিতলার প্রসাধন ছিল না বরং কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জীবন এবং একই সঙ্গে সমষ্টির জীবন যাপন করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে আসাদ চৌধুরী বলেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবিতার মধ্য দিয়ে সময়কে ধারণ করেছেন। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও অনুবাদে তিনি রেখেছেন স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন এক ঘনিষ্ঠ সুহৃদ। তাঁর মতো কবি মানুষের জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির এ আয়োজন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রশংসনীয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ একই মঞ্চে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন ফারুক মাহমুদ এবং ফারহান ইশরাক। আবৃত্তি করেন আশরাফুল আলম এবং শিরিন ইসলাম। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবুবকর সিদ্দিক, স্বপ্না রায়, আজগর আলীম, শফিউল আলম রাজা, অনিমা মুক্তি গোমেজ।
×