ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেলে বন্দীদের ৪৪ ভাগই মাদক মামলার আসামি

পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলেই মাদকের আস্তানায় অভিযান

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলেই মাদকের আস্তানায় অভিযান

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মাদক নিমর্ূূলের ওপর জোর দেয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। ধারাবাহিক অভিযানের পরেও মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়ায় সরকারের তরফ থেকে ক্ষোভ জানানো হয়েছে। তাই মাদক নির্মূলে সমন্বিত কৌশলপত্র ঠিক করার কাজ শুরু করেছে পুলিশ। জঙ্গী নির্মূলের মতো মাদক নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী জঙ্গী আস্তানার স্টাইলে পুলিশ সপ্তাহ শেষ হওয়ার পরেই মাদকের আস্তানাগুলোতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। কোন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী মাদক সেবন বা ব্যবসা বা মাদক ব্যবসার নেপথ্য থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদক মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে কোন ছাড় না দেয়ার কড়া নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নতুন মাদক এনপিএসের বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চালানোর কথা বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই মাদকের বিষয়ে সুস্পষ্ট কড়া নির্দেশনা এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। সেই নির্দেশনার সঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা যোগ করে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া অন্য আর কোন উপায় নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি ইয়াবার বিষয়ে তার অপারগতার কথা বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তাই মাদক বাংলাদেশকেই নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। এজন্য নাফ নদীসহ সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে মাদক আসে, সেসব পয়েন্ট প্রয়োজনে সিল করে দেয়া হবে। এককথায় মাদকবিরোধী সারাদেশে অল আউট অপারেশন চালাতে হবে। যেখানে মাদক সেখানেই কাঁচা টাকা, আর সেখানেই অস্ত্রগোলাবারুদ। আর সেখানেই জঙ্গী আস্তানার মতো অভিযান চালাতে হবে। সেখানে অভিযান চালাতে গেলে বন্দুকযুদ্ধ হবে। এটিই স্বাভাবিক। শুধুই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে কাউকে হত্যা করা যাবে না। নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, সারাদেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ৩টি জেলে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে আরও স্থাপন করা হবে। এসব জেলে ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। অথচ ৮৬ হাজারের বেশি বন্দী রয়েছে। বন্দীদের মধ্যে শতকরা ৪৪ ভাগেরও বেশি বন্দী মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৪ কোটি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলায় এক লাখ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। ইনজেকশনের মাধ্যমে নেয়া মাদকের কারণে দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই নেশাজাতীয় ইনজেকশন বিক্রির ক্ষেত্রে আরও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশের ৮৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি আছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৫০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে হচ্ছে। সারাদেশে বেসরকারীভাবে ২৯৯টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৭০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে অতীতের মতো তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হবে। পুলিশের কোন সদস্য মাদকসেবী হলে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের পর চাকরিচ্যুত করার কথা বলা হয়েছে। মাদক মামলা পরিচালনার জন্য পৃথক আদালতের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি মাদক মামলা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গ্রীন টির আড়ালে আসা নতুন মাদক এনপিএসের বিষয়ে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডকে এনপিএস সম্পর্কে শতভাগ সতর্ক ও অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ায়, সরকারের উচ্চ পর্যায় খুবই ক্ষিপ্ত। সরকারের তরফ থেকে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের পৃথক পৃথক তালিকা করতে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের আলাদা তালিকা হবে। আর যারা পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়েও মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা হবে পৃথক। এভাবে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাদকের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা করার কথা বলা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ কতটা সুফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যেসব মাদক বিক্রেতা কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েছে, তাদের টাকার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার কি হবে তা নিয়ে আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×