ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল কুমিল্লার সঙ্গে শিরোপা লড়াই

রংপুরকে বিদায় করে ফাইনালে ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রংপুরকে বিদায় করে ফাইনালে ঢাকা

মিথুন আশরাফ ॥ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতলেই ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত। হারলেই বিদায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গিয়ে রংপুর রাইডার্সের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দিল ঢাকা ডায়নামাইটস। মাশরাফির দল রংপুরকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের ফাইনালেও খেলা নিশ্চিত করে নিল সাকিবের ঢাকা। টানা তৃতীয়বার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ঢাকা ডায়নামাইটস। শুক্রবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে লড়াই করবে ঢাকা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা ডায়নামাইটস। ব্যাটিং করার সুযোগ খুব বেশি কাজে লাগাতে পারেনি রংপুর। ১৯.৪ ওভারে ১৪২ রান করতেই অলআউট হয়ে যায়। রবি বোপারা দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন। রুবেল হোসেন ৪ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে আন্দ্রে রাসেলের (১৯ বলে ৫ ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান) ঝড়ো ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১৪৭ রান করে জিতে ঢাকা। ফাইনালে উঠে যায় ঢাকা। বিদায় ঘণ্টা বাজে রংপুরের। ঢাকা শুরুতে বিপদে পড়ে। দলের ৪ রানে উপুল থারাঙ্গাকে আউট করে দেন মাশরাফি। এর পর সুনীল নারাইন ও রনি তালুকদার মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু দলের রান ৪১ রানে যেতেই নারাইনকে (১৪) সাজঘরে পাঠান নাজমুল ইসলাম অপু। আরেকটি উইকেট ফেলা যেত। দলের ৬২ রানের সময় ২৬ রানে থাকা রনির ক্যাচটা যদি ধরতে পারতেন নাদিফ। তবে দলের ৭৫ রানে গিয়ে সাকিব (২০ বলে ২৩ রান) ঠিকই বোল্ড হয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। অবশ্য হাওয়েলের করা বলটি সাকিবের শরীরে লেগেই স্টাম্পে যায়। সাকিব আউট হওয়ার পরও ঢাকার জয় পাওয়ার আশায় খুব হতাশা যোগ হয় না। ভরসাবান ব্যাটসম্যানরা যে তখনও থাকেন। কাইরন পোলার্ডকেও (১৪) দলের ৯১ রানের সময় আউট করে দেন মাশরাফি। কিন্তু তাতেও কী ঢাকার জয়ে খুব প্রভাব পড়ে? রংপুরের জেতার বিশেষ কোন আশা কী জাগে? জাগে। যখন দলের স্কোর বোর্ডে আর ৬ রান যোগ হতেই অহেতুক রান আউট হয়ে যান রনি (২৪ বলে ৩৫ রান)। ৫ উইকেট হারিয়ে বিপত্তিতেই পড়ে যায় ঢাকা। রংপুরেরও আশায় দোলা দেয়। সেই আশাও বেশিক্ষণ জিইয়ে রাখতে পারেনি রংপুর। নুরুল হাসান সোহান ও আন্দ্রে রাসেল তা রাখতে দেননি। সোহান উইকেট আঁকড়ে থাকেন। রাসেল সুযোগ বুঝে ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। ১৬ ওভারে দল ১২৮ রানে চলে যায়। জয় পেতে তখন বাকি থাকে ১৫ রান। বল থাকে ২৪টি। তাই ঢাকার নিশ্চিত জয়ই দেখা হয়। এ মুহূর্ত থেকে জয় পেতে খুব সময়ও লাগেনি। সেই সময়টুকু নেননি রাসেল। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে দেন রাসেল। পরের বলেও ছক্কা হাঁকান। তাতে জিততে ২১ বলে ২ রান লাগে। আবারও ছক্কা হাঁকান রাসেল। টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচই জিতিয়ে দেন ১৯ বলে পাঁচ ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করা রাসেল। সোহান ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ জিতিয়েই দুজন মাঠ ছাড়েন। ঢাকাকে ফাইনালে উঠিয়ে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়েন রাসেল ও সোহান। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। অথচ এমন ম্যাচে কিনা নাদিফ চৌধুরীকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দিল রংপুর! যেন নাদিফকে নিয়ে ক্রিকেট ‘জুয়া’ খেললেন মাশরাফি। এবার প্রথমবারের মতো বিপিএলে খেলতে নেমে নাদিফও ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন। এমনই ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন, ক্রিস গেইলকে ছাপিয়ে তিনিই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। আন্দ্রে রাসেলের করা তৃতীয়তম ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকান গেইল। কিন্তু গেইলকে ছাপিয়ে শুভাগত হোমের করা চতুর্থ ওভারে টানা তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকান নাদিফ। তার কাছ থেকে যতটুকু চাওয়া হয়েছিল, যেন তারচেয়েও বেশি দিতে থাকেন। কিন্তু ওভারটির শেষ বলে গিয়ে আবারও ছক্কা হাঁকানোর তাড়নায় ক্যাচ আউট হয়ে যান নাদিফ (১২ বলে ২৭ রান)। নাদিফ আউট হতেই গেইলও সাজঘরে ফেরেন। রুবেল হোসেন আউট করে দেন গেইলকে (১৩ বলে ১৫ রান)। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে গেইলকে আউট করার পরের বলে রাইলি রুশোকেও আউট করে দেন রুবেল। কী দুর্দান্ত শুরু হয় রংপুরের। অথচ দলের ৪২ রান হতেই যেন সব তছনছ হয়ে যায়। ৪২ রানের সময়ই যে নাদিফ, গেইল, রুশো সাজঘরে ফেরেন। রংপুরও বিপদে পড়ে যায়। ৪ ওভারে ৪২ রান হয়। ৫ ওভারে গিয়েও ৪২ রানই থাকে। মাঝখান দিয়ে ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়। রংপুর ইনিংসের মেরুদ- যেন ভেঙ্গে দেন রুবেল। ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন রংপুর ব্যাটসম্যানরা। এই অবস্থা থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ মিঠুন ও রবি বোপারা। সেই চেষ্টায় সফলও হন। দুজন মিলে দলকে ১০০ রানের ওপর নিয়ে যান। স্কোর বোর্ডে ভালই রান জমা হতে থাকে। কিন্তু দলের ১০৬ রান হতেই কাজী অনিকের অফ সাইডের বলটি খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান মিঠুন (২৭ বলে ৩৮ রান)। দুজন মিলে ৬৪ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। আউট হওয়ার আগে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন মিঠুন। কিন্তু সেই পথ খুঁজে পাননি বেনি হাওয়েল। তিনি ব্যাট হাতে নামেন। আর সাজঘরে ফেরেন। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হন হাওয়েল। কিছুক্ষণের মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজাও আউট হয়ে যান। ৪২ রানে যে উইকেট পতনের ঝড় উঠেছিল, এবার ১০৬ থেকে ১১০ রানের মধ্যে, পাঁচ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বসে রংপুর। বোপারাই একমাত্র আশা হয়ে থাকেন। তিনিই শেষ পর্যন্ত দলকে এতদূর নিয়ে যান। নাহিদুল ইসলাম, ফরহাদ রেজা, শফিউল ইসলামরা ব্যাট হাতে নেমেও কিছু করতে পারেননি। ১৪২ রানে গিয়ে ৪৩ বলে ৪৯ রান করা বোপারা যখন আউট হন তখন রংপুরের ইনিংস শেষ হয়। ২ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় রংপুর। যে রান করেছে, তা ঢাকাকে ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তা ভালভাবেই প্রমাণ হয়ে যায়। জিতে ঢাকা। বিদায় হয়ে যায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল রংপুর। রংপুরের কাছে হেরে গত আসরে রানার্সআপ হওয়া ঢাকা এবার রংপুরকে হারিয়েই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয়। চরম প্রতিশোধ নিয়েই ফাইনালে উঠল ঢাকা। স্কোর ॥ রংপুর রাইডার্স ইনিংস ১৪২/১০; ১৯.৪ ওভার (গেইল ১৫, নাদিফ ২৭, মিঠুন ৩৮, রুশো ০, বোপারা ৪৯, হাওয়েল ৩, মাশরাফি ০, নাহিদুল ৪, ফরহাদ ২, শফিউল ০, নাজমুল ০*; রুবেল ৪/২৩, রাসেল ২/৩১)। ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস ১৪৭/৫; ১৬.৪ ওভার (থারাঙ্গা ৪, নারাইন ১৪, রনি ৩৫, সাকিব ২৩, পোলার্ড ১৪, সোহান ৯*, রাসেল ৪০*; মাশরাফি ২/৩২)। ফল ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ৫ উইকেটে জয়ী।
×