ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ্যাঞ্জেলিনা জোলির সাক্ষাত

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ্যাঞ্জেলিনা জোলির সাক্ষাত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত ও হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এ্যাঞ্জেলিনা জোলি। বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে তাদের এ সাক্ষাত হয়। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু পরে গণভবনে প্রবেশ করেন এ্যাঞ্জেলিনা জোলি। খবর ওয়েবসাইটের। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং বলেছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন জোলি। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তিনি। এদিকে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরে বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং সচিব শহীদুল হকের সঙ্গেও বৈঠক করেন ইউএনএইচসিআর-এর এই দূত। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পৌঁছান এ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এরপর যান কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সময় মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কথা শোনেন তিনি। পাশাপাশি ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশু-নারীদের সঙ্গে সময় কাটান হলিউড অভিনেত্রী। ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জোলি। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশে আসেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। শেখ হাসিনার প্রশংসায় এ্যাঞ্জেলিনা জোলি ॥ বিডিনিউজ জানায়, নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় শেখ হাসিনাকে ‘উদাহরণ সৃষ্টিকারী’ নেতা অভিহিত করেছেন হলিউড তারকা এ্যাঞ্জেলিনা জোলি। দুই দিনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে, তাদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় ফিরে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত এ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় খুবই প্রশংসা করেছেন এ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং প্রধানমন্ত্রীকে উদাহরণ সৃষ্টিকারী নেতা বলেছেন তিনি। তিনি (জোলি) বলেছেন, বিশ্বে এরকম নেতার দরকার আছে। এই মুহূর্তে আপনার মতো লিডার কম আছে বলেও মন্তব্য করেছেন জোলি। নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে থেকে এখানে আছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার এই শরণার্থীদের নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে ভয় পাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গাদের তাদের আবাসস্থল রাখাইন প্রদেশে নিরাপদে থাকার মতো পরিবেশ এখনও তৈরি করতে পারেনি মিয়ানমার সরকার। জোলি আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের ক্ষেত্র তৈরির দায়িত্ব মিয়ানমারকে নিতে হবে। সেখানে অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করে তাদের ফেরত নিতে হবে, শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকেও বলেন এই হলিউড অভিনেত্রী। আশ্রয় নেয়া ‘এত’ মানুষের খাওয়ানো-পরানোকে কঠিন কাজ উল্লেখ করে জোলি বলেন, জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব ব্যাংক তারা একসঙ্গে কাজ করবে, যাতে বাংলাদেশের বোঝাটা একটু কমে। প্রধানমন্ত্রী এ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিবারসহ তার গৃহবন্দী থাকা এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শরণার্থী হিসেবে দিনযাপনের কথা শোনান। জোলি ওই ঘটনা শুনে খুবই দুঃখ প্রকাশ করেন বলে প্রেস সচিব জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি, চুক্তি করেছি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেরি করায় প্রধানমন্ত্রী নিজের হতাশার কথাও তুলে ধরেন বলে প্রেস সচিব জানান। আড়াই বছর আগে পালিয়ে এসে যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ঘরে প্রায় ৪০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। এই শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন জোলি তাদের ‘যথাযথ’ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার পরিদর্শনের সময় তিনি শুনেছেন কিভাবে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়েছে। জোলি বলেন, নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার কথা তিনিও শুনেছেন। সৌজন্য সাক্ষাতে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। হলিউড তারকা এ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে ঢাকার ধানমÐি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরিয়ে দেখান বঙ্গবন্ধুর নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জোলি ॥ এ্যাঞ্জেলিনা জোলি বুধবার ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে পৌঁছলে তাকে অভ্যর্থনা জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্টের সিইও মাশুরা হোসেন। জোলিকে জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরিয়ে দেখান বঙ্গবন্ধুর নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। জোলি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাদুঘরের পরিদর্শন বইয়েও স্বাক্ষর করেন। বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরিয়ে দেখান বঙ্গবন্ধুর নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। এ্যাঞ্জেলিনা জোলি সোমবার সকালে বাংলাদেশে এসেই কক্সবাজার রওনা হয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল এলাকায় বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। বিকেলে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্মিত ট্রানজিট ক্যাম্প দেখতে যান তিনি।
×