ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পথ খাবার

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পথ খাবার

কাজ-কর্ম সেরে হাত-মুখ না ধুয়ে খেতে বসা এক সময় ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু জনসচেতনতা বাড়ার ক্রমপর্যায়ে সেই স্বভাবে এসেছে পরিবর্তন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে এমনকি হাত ধোয়ার কাজটি সেরে খাবার মুখে দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ক্ষেত-খামারে কাজ করা মানুষের কাছে খাদ্য গ্রহণই ছিল মুখ্য। কিভাবে খাচ্ছি, কি খাচ্ছি, কোথায় বসে খাচ্ছি- সে নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা ছিল না মনে। যে কোন উপায়ে উদরপূর্তি করার মধ্যেই ছিল তৃপ্তি। কিন্তু খাবারের গুণাগুণ, মান- এসব কোনভাবেই জানা ছিল না তাদের। কোন্ খাদ্য শরীরের জন্য কোন্ বয়সে প্রয়োজন তা নিরূপণ করা যে জরুরী সে উপলব্ধি ছিল না মূলত এদেশের অধিকাংশ জনেরই। খাদ্যে যে রোগ-জীবাণু বসবাস করে কিংবা খাবার বাসি হলে জীবাণুর জন্ম হয়-সে ধারণা মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে পর্যায়ক্রমে। এখনও বিশ্বের বহু মানুষ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত নয়। খাদ্য বিশেষজ্ঞরা মানুষের চোখ-কান খুলে দিয়েছেন খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে। পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং জীবাণুমুক্ত খাবারের সন্ধান করে তাই মানুষ। কিন্তু ভেজাল ও জীবাণুযুক্ত খাবারের ছড়াছড়ি সর্বত্র যেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিষ খেয়ে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা চাই না। খাদ্যে ভেজাল দেয়াও এক ধরনের দুর্নীতি, এর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তিনি মনে করেন, খাদ্যে ভেজাল দেয়া কিছু মানুষের এক ধরনের চরিত্রগত অভ্যাস। এই খাদ্য খেলে মানুষের উপকার নয়, অপকারই হয়। বিভিন্ন হোটেল রেস্তরাঁয় ভেজাল বা বাসি খাবার বা পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। জনগণ সচেতন হলে কেউ তাদের প্রতারণা করতে পারবে না। নিরাপদ খাদ্য দিবস এদেশেও পালন করা হয়। নিরাপদ খাদ্য রক্ষা কর্তৃপক্ষও গঠন করেছে সরকার। স্লোগান উঠেছে ‘সুস্থ সবল জাতি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই।’ এটা চিরসত্য। বাংলাদেশের মানুষও চায় তাই। রাজধানীতে খাবারের নতুন ধারা হিসেবে ‘পথ খাবার’ ক্রমশ জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এক সময় ‘শখ’ করে খেলেও এই খাবার অনেকের জন্যই নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের লোকজন ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এসব খাদ্যের ক্রেতা। ঢাকা শহরের ফুটপাথজুড়ে খাবারের দোকানের সংখ্যা অগণিত। শুধু ফুটপাথ নয়, রাস্তার ওপরও দেখা মেলে এসব খাবারের দোকান। খোলা খাবারে মাছি ওড়ে, ধুলা পড়ে- এমন দৃশ্য চোখ সওয়া, গা সওয়া হয়ে গেছে বোধহয় ভোক্তাদের। অস্বাস্থ্যকর বা রোগজীবাণু নিয়ে তারা মোটেই ভাবেন না। বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিতান্ত প্রয়োজন বা বাধ্য হয়ে ক্ষুণ্ণবৃত্তি নিবৃত্তে পথের খাবার খেয়েই কাটাতে হয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন ষাট লাখ লোক পথ খাবার খেয়ে থাকেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাচ্ছেন যেমন, তেমনি প্যাকেটজাত করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। সংশ্লিষ্টরা এসব খাবারের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, অধিকাংশ খাবারে প্রচুর জীবাণু রয়েছে। ফুটপাথের ৫৫ ভাগ খাবারেই রয়েছে জীবাণু। আর ৮৮ ভাগ বিক্রেতার হাতেই থাকে জীবাণু। পথ খাবার যারা বিক্রি করেন তাদের নির্দিষ্ট স্থানে বসার জায়গা নেই। ফুটপাথে বসার কারণে ধুলাবালি, রোগজীবাণু সহজেই মিশে যাচ্ছে। পাশাপাশি হাত পরিষ্কার না করেই খাবার তৈরি করছে বিক্রেতারা। পথ খাবারের একটা বড় অর্থনীতি রয়েছে। ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের মাধ্যমে লেনদেন হলেও একসঙ্গে করলে এটার পরিমাণ বিশাল। কর্তৃপক্ষের উচিত বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে নিরাপদ খাদ্য অঞ্চল করা। তা করা হলে করও মিলবে। শুধু অভিযান চালিয়ে ফল পাওয়া যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে যে খাবার বিক্রি হয়, গবেষণায় দেখা গেছে- সে সবের অবস্থা ভয়াবহ। মারাত্মক সব অসুখ-বিসুখের বিস্তার ঘটায় এসব খাদ্য। ভেজালবিরোধী অভিযানের সঙ্গে জীবাণুমুক্ত খাবার নিরোধের কাজ করা জরুরী। প্রতিদিন ৬০ লাখ মানুষ ‘বিষ’ গ্রহণ করছে কেবল রাজধানীতেই। বিষাক্ত হয়ে পড়ছে তাদের জীবন। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় অবশ্যই বের করতে হবে।
×