ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জনবান্ধব পুলিশ

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জনবান্ধব পুলিশ

রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের দ্বারা যেন কোন নিরীহ মানুষ অযথা হয়রানির শিকার না হন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনীকে সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হতে হবে। জনসাধারণের সমস্যাকে দেখতে হবে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়ে পুলিশকে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাধিক। উল্লেখ্য, জনবান্ধব পুলিশের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের পুলিশ অনেকাংশেই জনবান্ধব ও হিতকারী, অন্তত পাকিস্তানী এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের চেয়ে তো বটেই। তাদের সীমিত জনবল, আধুনিক পর্যাপ্ত যানবাহন ও অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, তথ্যপ্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা, মাত্রাতিরিক্ত খাঁটুনি ইত্যাদি অস্বীকার করা যায় না। তবে গত কয়েক বছরে বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে তাদের সুযোগ-সুবিধা এমনকি বেতন-বোনাস বর্ধিত করা হয়েছে বহুলাংশে। বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগও তুলনামূলকভাবে কম। ২০০৯ সালে পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১ : ১৩৫৫। বর্তমানে তা ১ : ৮০১। খুব শীঘ্রই পুলিশ বাহিনীতে আরও ১ লাখ সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। তখন এই হার আরও কমে আসবে। সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাহিনীর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক নির্মূল ও প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীর সাফল্যও উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। অধুনা এর সঙ্গে নিরাপদ সড়ক ও খাদ্যের জন্য আন্দোলনও যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ রাখতে হবে যে কোন মূল্যে। ইদানীং রাজধানী ও অন্যত্র খুন-ধর্ষণ-সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে, তাও সত্য। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও তৎপর ও নজরদারি বাড়াতে হবে। সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে বহুলাংশে। পুলিশের এক্ষেত্রে সবিশেষ করণীয় রয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধসহ জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা প্রশংসিত হয়েছে। এর জন্য প্রাপ্তিও মিলেছে বৈকি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের কয়েকজন চৌকস অফিসারকে নিয়োগ দিয়েছে ইন্টারপোল। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনেও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। এবার দক্ষতার জন্য ৩৪৯ পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তবে জনসাধারণকে নানা কারণে অহেতুক হয়রানির অভিযোগটি তো প্রায় ওপেনসিক্রেট। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে সময় সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না তা নয়। গত বছর সাঁওতালপল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব ক্ষেত্রেই শাস্তি প্রধানত প্রত্যাহার ও ক্লোজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। নকল ও ভুয়া ডিবি পুলিশের খবরও আছে। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি প্রশংসনীয়। মোট কথা জনসাধারণকে হয়রানিমুক্ত সেবার পাশাপাশি সর্বস্তরে পুলিশের জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ বাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। দেশ ও জাতির যে কোন সমস্যা-সঙ্কট উত্তরণে তাদের এই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা অব্যাহত থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে পুলিশের প্রতি এটাই জনপ্রত্যাশা।
×