ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার কাছে হেরে বিদায় চিটাগংয়ের

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঢাকার কাছে হেরে বিদায় চিটাগংয়ের

মিথুন আশরাফ ॥ যে হারবে, তাদেরই বিদায় ঘণ্টা বাজবে। যে জিতবে, তারা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে। এমন ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিদায় করে দিলো ঢাকা ডায়নামাইটস। এলিমিনেটর ম্যাচে সুনীল নারাইনের অলরাউন্ডার নৈপুণ্য এবং উপুল থারাঙ্গার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সহজ জয় পেল ঢাকা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এলিমিনেটর ম্যাচে টস জিতে চিটাগং ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। হারলেই বিদায়। এমন ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে আশানুরূপ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারেনি চিটাগং। নারাইনের ঘূর্ণির সামনে পড়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৫ রান করে চিটাগং। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৪০, ক্যামেরন ডেলপোর্ট ৩৬ ও সাদমান ইসলাম ২৪ রান করেন। নারাইন একাই ৪ উইকেট শিকার করে নেন। জবাব দিতে নেমে উপুল থারাঙ্গার ৫১, নারাইনের ৩১, রনি তালুকদারের ২০ ও নুরুল হাসান সোহানের অপরাজিত ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১৩৬ রান করে জিতে ঢাকা। খালেদ আহমেদ ৩ উইকেট নেন। দুই দলের মধ্যকার লীগ পর্বে দুটি ম্যাচ হয়। দুটিতেই জিতেছিল চিটাগং। ৩ উইকেট ও ১১ রানে ঢাকাকে হারিয়েছিল চিটাগং। এবার চিটাগংকেই হারিয়ে দিলো ঢাকা। আসল সময়ে এসে চিটাগংকে পাত্তাই দিলো না সাকিবের ঢাকা। ঢাকার দুই ওপেনার উপুল থারাঙ্কা ও সুনীল নারাইন শুরুতেই এমন ব্যাটিং ঝড় তুলেন, যেন বুঝিয়ে দেন চিটাগংকে তারা পাত্তাই দিতে চাচ্ছেন না। থারাঙ্গা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেও নারাইনতো শুরুতেই ঝড় তুলেন। একের পর এক ছক্কা চার হাঁকাতে থাকেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এক ছয় ও দুই চার হাঁকিয়ে বসেন নারাইন। পরের ওভারেও দুই চার হাঁকান। দেখতে দেখতে ৩ ওভারেই ৩৮ রান হয়ে যায় ঢাকার। ঢাকার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখে যেন চিটাগং ফিল্ডাররাও হাল ছেড়ে দেন। ক্যাচের সুযোগ মিলে। একটু চেষ্টা করলেই ক্যাচ হয়। কিন্তু সেই চেষ্টাই করেননি চিটাগং ফিল্ডাররা। তবে এরমধ্যেই দলের ৪৪ রানের সময় ১৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রান করা নারাইনকে আউট করে দেন পেসার খালেদ আহমেদ। এরপর থারাঙ্গা ও রনি তালুকদার মিলেও বড় জুটিই গড়েন। দুইজন মিলেও ৪৪ রানের জুটি গড়েন। দলও ৮৮ রানে চলে যায়। এমন মুহূর্তে খালেদ টানা দুই বলে দুই উইকেট শিকার করে নেন। রনি (২০) ও সাকিব আল হাসানকে সাজঘরে ফেরান। তবে রান ততক্ষণে এত বেশি হয়ে যায় যে জয় পাওয়া নিয়ে ঢাকার বিশেষ চিন্তা থাকে না। দেখতে দেখতে ঢাকা ১০০ রানেও চলে যায়। থারাঙ্গাও হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। দলের ১১২ রানের সময় থারাঙ্গাও আউট হন। এরপর আর কোন উইকেট হারায়নি ঢাকা। নুরুল হাসান সোহান (২০*) ও কাইরন পোলার্ড (৭*) মিলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। চিটাগংকে বিদায় করে দেয় ঢাকা। চিটাগং শুরুটা যে রকম করে, শেষটা সেই রকম করতে পারে না। শুরু থেকেই ভাল ব্যাটিং করতে থাকেন চিটাগংয়ের দুই ওপেনার ইয়াসির আলী ও ক্যামেরন ডেলপোর্ট। তবে দলের ২২ রান হতেই ইয়াসিরকে (৮) আউট করে দেন রুবেল হোসেন। এরপর ডেলপোর্ট ও সাদমান ইসলাম মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। দলের ৫৬ রান হয়, তখন ডেলপোর্ট (৩৬) ভুল বোঝাবোঝিরতে রান আউট হয়ে যান। ব্যাট হাতে নামেন মুশফিকুর রহীম। ইয়াসির ও ডেলপোর্ট আউট হওয়ায় তার উপর আশা থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মুশফিকের। বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেননি। দলের ৭৬ রানের সময় সুনীল নারাইনের বলে বোল্ড হয়ে যান। নারাইনের করা বলটি অফ সাইডের একটু বাইরেই থাকে। মুশফিক ব্যাটও চালান। কিন্তু ব্যাটের সংস্পর্শে বলটি উইকেটের দিকে চলে যায়। মুশফিক (৮) আউট হতেই বিপদেও যেন পড়ে যায় চিটাগং। আর ৫ রান দলের স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই যখন সাদমানকেও (২৪) সাজঘরে ফেরান নারাইন, তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ঢাকা। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও দাসুন শানাকা মিলে সেই নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানের উপরেও নিয়ে যান। যখনই ১০৩ রান হয়, তখন আরেকটি উইকেটের পতন ঘটে। এবার শানাকা (৭) বোল্ড হয়ে যান। এ জুটি ২২ রান গড়ে। মনে করা হচ্ছিল, এ জুটি শেষপর্যন্ত দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু পারেনি। এরপরও বড় স্কোর হওয়ার সম্ভাবনা উড়ে যায়নি। ধারাবাহিকভাবে ভাল ব্যাটিং করা রবি ফ্রাইলিঙ্ক যে তখনও উইকেটে থাকেন। কিন্তু নারাইন এমন এক ঘূর্ণি বল দিলেন, যখন চিটাগংয়ের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ফ্রাইলিঙ্কের ব্যাটিং ঝলক; তখনই ব্যর্থ হলেন তিনি। ১ রানের বেশি করতে পারলেন না। ফ্রাইলিঙ্ক আউট হতেই বড় স্কোর গড়ার সব আশা শেষ হয়ে যায়। হার্দুস ভিলজয়েনও (১) যখন নারাইনের একই ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন, তখন হারের শঙ্কা নিয়েও সবার মধ্যে ফিসফিসানি শুরু হয়ে যায়! ৬ রানের মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে যে পড়ে যায় চিটাগং। নারাইনতো চিটাগংয়ের ব্যাটিং লাইনআপ ছন্নছাড়া করে দেন। নারাইনের ঘূর্ণি জাদুতে চিটাগংয়ের ইনিংসের বারোটা বেজে যায়। নারাইনের বোলিংগুলো যেন চিটাগং ব্যাটসম্যানদের কাছে বিপদের অন্যরূপ হয়ে ধরা দেয়। ৪ ওভার বোলিং করে ১৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে নেন নারাইন। ১০৯ রানে ৭ উইকেট হারানো চিটাগং শিবিরকে শেষমুহূর্তে একটু স্বস্তি দেন সৈকত ও নাঈম হাসান। দুইজন মিলে দলকে ১৩০ রানের উপরে নিয়ে যান। অষ্টম উইকেটে গিয়ে দুইজন মিলে ২৫ রানের জুটি গড়েন। খুব বড় জুটি নয়। কিন্তু খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া একটি দলকে শেষমুহূর্তে ভরসা দেয়া জুটি এটি। এ জুটিটি না হলে ১২০ রান হওয়াইতো কঠিন হয়ে পড়ত! ইনিংসের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে গিয়ে রান আউট হন সৈকত (৪০)। ততক্ষণে দলের ১৩৪ রান হয়ে যায়। বিপদে পড়া একটি দলকে সৈকত ভালই এগিয়ে নিয়ে যান। শেষপর্যন্ত চিটাগং ১৩৫ রান করতে পারে। এত অল্প রান করে কী আর জেতা সম্ভব। চিটাগং তাই হেরে বিদায় নেয়। স্কোর ॥ চিটাগং ভাইকিংস ইনিংস ১৩৫/৮; ২০ ওভার (ইয়াসির ৮, ডেলপোর্ট ৩৬, সাদমান ২৪, মুশফিক ৮, সৈকত ৪০, শানাকা ৭, ফ্রাইলিঙ্ক ১, ভিলজয়েন ১, নাঈম ৬*, রাহি ১*; নারাইন ৪/১৫)। ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস ১৩৬/৪; ১৬.৪ ওভার (থারাঙ্গা ৫১, নারাইন ৩১, রনি ২০, সাকিব ০, সোহান ২০*, পোলার্ড ৭*; খালেদ ৩/২০)। ফল ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সুনীল নারাইন (ঢাকা ডায়নামাইটস)।
×