ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাহমানীকে মুক্ত করার ছক কষেছিল আনসারুল্লাহ জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাহমানীকে মুক্ত করার ছক কষেছিল আনসারুল্লাহ জঙ্গীরা

শংকর কুমার দে ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান কাশিমপুর কারাগারে আটক জসিমউদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করার ছক কষেছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের গ্রেফতারকৃত টার্গেট কিলিং স্কোয়াডের সদস্যরা। দুই বছর আগেও একবার এবিটি নেতাকে কারাগার থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয় তারা। আবারও তারা কাশিমপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করে ছক কষে তা বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করার সময় গ্রেফতার হয়। কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গী হামলা ব্যর্থ হলে বিকল্প হিসেবে জসিমউদ্দিন রাহমানীকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে গ্রেফতার হওয়া এবিটির সদস্যরা। এ ছাড়া আবারও টার্গেট কিলিং করে জঙ্গী সংগঠনটির অস্তিত্ব জানান দিতে তৎপর হয় তারা। জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত এবিটির জঙ্গীরা। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাবের হাতে গত ২৮ জানুয়ারি সাভারের আশুলিয়া থেকে আটক করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরায় অভিযান চালিয়ে এবিটির চার সক্রিয় সদস্য মোঃ শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মোঃ আম্মার হোসেন, মোঃ রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী, মোঃ রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মালেককে গ্রেফতার করা হয়। কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গী হামলা করে এবিটি নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করা, নয়ত কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেয়ার সময় প্রিজনভ্যানে জঙ্গী হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিতে নিয়মিত মিটিং করে ছক কষেছে তারা। এ জন্য এবিটির অন্যান্য গ্রুপের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ রক্ষা করেছে। আইএসের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা দেশে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত এবিটির জঙ্গীরা জানায়, র‌্যাবের হাতে আটককৃত এবিটি সদস্যদের মধ্যে কারও কারও মৃত্যুদ-, কারও যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদের কারাভোগ করেছে এবং বেশকিছু মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কিছু সদস্য জামিনেও বের হয়েছে। জামিনে বের হওয়া এবিটির সদস্যরা আত্মগোপনে আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা। এসব পলাতক ও জামিনপ্রাপ্ত সদস্য পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সাংগঠনিকভাবে পূর্বের মতো সক্ষমতা না থাকলেও তাদের তৎপরতা কিন্তু একদম বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে র‌্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বার বার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তার দাবি। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, তারা গোপনে সংগঠনকে সক্রিয় করার কাজ করছিল। এবিটির অন্যতম পরিকল্পনার মধ্যে আছে, সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদিও তারা তাদের নেতাকে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আইনী প্রক্রিয়ায় তাদের নেতাকে যদি মুক্ত করতে না পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে বলে জানিয়েছে। জসিমউদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করার জন্য তারা ইতোমধ্যেই অর্থ সংগ্রহ করেছে। সেই সংগৃহীত টাকার একটি বড় অংশ গ্রেফতারকৃত রাসেলের কাছে জমা ছিল। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৬ সালেও এবিটি নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীকে কারাগারে জঙ্গী হামলা কিংবা আদালতে আনা-নেয়ার সময় ছিনিয়ে নেয়ার ছক কষার পর আটক হয়েছিল এবিটির দুই জঙ্গী। গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা র‌্যাব আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সক্রিয় সদস্য (১) মোঃ রাশেদুল ইসলাম @ স্বপন (২৪), (২) বিপ্লব হোসেন @ হুজাইফা (৩৩) কে গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালের কোন এক সময় স্বপন এবং আরও কয়েক জন এবিটির ঢাকা বিভাগের নেতা আব্বাসের মাধ্যমে আল-কায়দার আইমান আল জাওয়াহিরির নামে বায়াত নেয়। ধীরে ধীরে স্বপন গাজীপুর এবং আশপাশের এলাকা থেকে কর্মী সংগ্রহ শুরু করে এবং এই এলাকার সংগঠকের দায়িত্ব পায়। ধৃত স্বপনের কয়েক অনুসারী হিসেবে (১) করিম @ রাসেল, (২) মানিক @ জুয়েল এবং (৩) বিপ্লব হোসেন @ হুযাইফাসহ কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। তারা বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে কাজ করত। জঙ্গী সংগঠনের কৌশলগত নিরাপত্তার স্বার্থে এক গ্রুপের সদস্যদের অন্য গ্রুপের সদস্যরা চিনত না। যোগাযোগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে তারা বিভিন্ন ই-মেইল ব্যবহার করত। শুধু গ্রুপ প্রধানরাই অন্য গ্রুপের প্রধানদের চিনত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা আরও একটি গ্রুপের সঙ্গে পরিচিত হয় যারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সংগঠন/কার্যক্রম সম্পর্কে কথা বলে। ওই গ্রুপের সদস্যরা স্বপনকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল এবং শীঘ্রই তা সংগ্রহ করার কথা ছিল। ঐ টাকা দিয়ে যশোর এলাকা থেকে অস্ত্র ক্রয় করবে বলে তারা পরিকল্পনা করেছিল বলে স্বপন জানায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একিউ আইএসের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেছেন, আটকরা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের টার্গেট কিলিং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। কাশিমপুর কারাগারে হামলা করা ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য। কারাগারে হামলা করে তাদের অনুসারী নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে তারা গাজীপুরে কাজ করছিল। এজন্য তারা কাশিমপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করে আসছিল এবং সুযোগ পেলে হামলা করবে বলে অপেক্ষায় ছিল। এছাড়াও টার্গেট কিলিং হিসেবে তারা বিভিন্ন আলোচিত ব্লগার এবং নাস্তিকদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। এসব জঙ্গী সংগঠনের পলাতক ও জামিনপ্রাপ্ত সদস্যগণ পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তাদের সাংগঠনিকভাবে পূর্বের মতো সক্ষমতা না থাকলেও জঙ্গী তৎপরতা কিন্তু একদম বন্ধ হয়নি বলে মনে করেন র‌্যাব কর্মকর্তা।
×