ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির মামলা

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রিজার্ভ  চুরির মামলা

বছর তিনেক আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি দেশে তো বটেই, বিদেশেও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে সময় বেশ আশাব্যঞ্জক এমনকি শাসালো, ঠিক সে সময় রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ছিল অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। সত্যি বলতে কি, দেশবাসী এমনকি ব্যাংকিং খাত এমন একটি ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না আদৌ। বোধ করি সেই প্রথম দেশের বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সাইবার নিরাপত্তা, হ্যাকার তথা দেশী-বিদেশী প্রতারক চক্র নিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা ও আলাপ আলোচনা উঠে আসে গণমাধ্যমে। উল্লেখ্য, তিন বছর আগে ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ত্বরিত তৎপরতায় ঐ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে ফিলিপিন্সে পাচার হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের সিংহভাগের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। রিজার্ভের এই অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে সেই থেকে। অবশেষে আট কোটি ১৩ লাখ ডলার অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ এই অর্থ চুরির সঙ্গে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনসহ দেশটির ২২টি প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তা ও চীনের তিন নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্ররের আইনে ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা দায়েরের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মামলায় দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি সুদসহ চুরিকৃত অর্থ, আইনী খরচ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি সেই সময়ে সংঘটিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার অপরাধ বা চুরির ঘটনা। রিজার্ভ চুরিসহ অর্থ পাচারের আট দফা অভিযোগে ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে ৩২ থেকে ৫৬ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে সে দেশের আদালত। এর পাশাপাশি ১০৩ মিলিয়ন ডলারের অর্থদ- দেয়া হয় মায়াকে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মামলার মেরিট বাংলাদেশের পক্ষেই রয়েছে। তবে মামলার শুনানি যেহেতু একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া সেহেতু রায় প্রাপ্তি সাপেক্ষে অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা বিলম্বিত হতে পারে। তবে দুঃখজনক হলো, দেশের অভ্যন্তরে অর্থ চুরি নিয়ে সরকার অন্তত দুটি তদন্ত কমিটি এবং সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি সরকার- না অর্থ মন্ত্রণালয়, না বাংলাদেশ ব্যাংক। জনসমক্ষে তা প্রকাশ না করায় বিস্তর সন্দেহ ও জল্পনা কল্পনা ডানা মেলেছে। এমনকি সিআইডি ৩৫ জন বিদেশী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তাকে দায়ী করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করলেও অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে যথাশীঘ্র এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উঠতে না পারে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা তথা সাইবার নিরাপত্তার অভাব অবিদিত নয়। সরকারের কর্মসূচী থাকলেও ব্যাংকিং সেক্টরসহ অনেক স্থানে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। এ সম্পর্কে দক্ষ জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। এরই ফাঁকফোকর দিয়ে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। যাতে ক্ষুণ্ণ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। এই প্রেক্ষাপটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ মামলার রায় অনুকূলে এনে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হলে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হবে অনেকাংশে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল সরকারী বেসরকারী ব্যাংকে বাড়াতে হবে সাইবার নিরাপত্তা, যাতে অদূর ভবিষ্যতে এরকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
×