ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা মোকাবেলায় আরসিবিসির আইনজীবী নিয়োগ

রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ফেড

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ফেড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (নিউইয়র্ক ফেড)। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকটি। তিন বছর আগের ওই হ্যাকিংয়ে নিউইয়র্ক ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থের মধ্যে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সময় বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টা) নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। নিউইয়র্ক ফেড থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় ও বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপিন্সে পাঠানো হয়। ফিলিপিন্সে যাওয়া টাকা প্রথমে পৌঁছায় দেশটির রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখায়। পরে তা আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপিন্সের জুয়ার আসরে। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নবেম্বর ফিলিপিন্স থেকে আরও ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। ফিলিপিন্সে থাকা বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফিরে পেতেই এবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করেছে। আর সেই মামলা পরিচালনায় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা (টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স) করবে নিউইয়র্ক ফেড। মার্কিন আদালতে মামলা দায়েরের পরদিন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একটি চুক্তিও সই হয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠান দুটি এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করবে নিউইয়র্ক ফেড। নিউইয়র্ক ফেডে ‘রেজ্যুলেশন এ্যান্ড এ্যাসিস্ট্যান্স’ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন একজন রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য এ্যাফিডেভিট প্রস্তুত করবে নিউইয়র্ক ফেড। মামলার শুনানি সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কর্মীদেরও ছাড় দেবে তারা। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের কাছে কর্মীদের সাক্ষাতকার দেয়ার সুযোগও দেবে তারা। এদিকে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিউইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে আইনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েলকে নিয়োগ দিয়েছে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)। ফিলিপিন্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য এনকোয়ারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেয়া এক নথিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ কথা নিশ্চিত করেছে। রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ফিলিপিন্সের আরসিবিসিকে আসামি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এই অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল। এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সে চলে যায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এখনও ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত আসেনি। এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ফি নিয়ে একটি চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দুটিকে সেই অর্থের ১০ ভাগ দেয়া হবে। এনকোয়ারে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আরসিবিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষও নিউইয়র্কে ল’ ফার্ম কুইন ইমানুয়েলকে নিয়োগ দিয়েছে। এদিন স্টক এক্সচেঞ্জে আরসিবিসি ব্যাংকের জমা দেয়া এক নথিতে ইমানুয়েলের আইনজীবী তাই হেং চেং-কে উদ্ধৃত করা হয়েছে। চেং বলেন, এ মামলা যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজনৈতিক চাল ছাড়া কিছু নয় তা আমরা প্রমাণ করব। দেখাব, তারা তাদের দায় আরসিবিসির ওপর চাপাতে চাইছে। তাই হেং চেং এর দাবি, মামলার ছদ্মবেশে মূলত জনসংযোগ প্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, আমরা যা শুনেছি তাতে বলা যায় এ মামলা একেবারে ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি টাকা উদ্ধারের বিষয়কে এতটাই গুরুত্ব দিত তবে তারা তিন বছর আগেই এ দাবি তুলত। মামলা করার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে আগে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বসে থাকত না। শুধু যে অভিযোগগুলোই মিথ্যা, তা নয়। যেহেতু এ মামলার বিবাদীদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সেক্ষেত্রে এখানে তাদের মামলা করার অধিকারই নেই। হেং চেং এর দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি ব্যাংকের ঘাড়ে নিজেদের দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সত্য অনুসন্ধানজনিত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি, দায়িত্বজনিত ব্যর্থতা ও নিরাপত্তা প্রটোকলে ঘাটতি থাকার কারণে এ ক্ষতি হয়েছে। ২০১৬ সালে হ্যাকাররা চুরির অর্থ ফিলিপিন্সের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রীট শাখার চারটি এ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপিন্সের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। রিজার্ভ চুরির এই ঘটনায় দোষী প্রমাণ হওয়ায় গত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোকে কারাদন্ড দেয় ফিলিপিন্সের আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ অর্থ পাচারের আট দফা অভিযোগে এ দন্ড দেয়া হয়। রায়ে প্রতিটি অভিযোগের জন্য তাকে চার থেকে সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। এর ফলে তাকে ৩২ থেকে ৫৬ বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। এছাড়াও তাকে সর্বমোট ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে।
×