ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা প্রতারণা!

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা প্রতারণা!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কথায় বলে চোরের উপর বাটপাড়ি। এমন ঘটনাই ঘটেছে অন্তত পাঁচ শতাধিক দুর্নীতিবাজ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাদের বেলায়। ওসব অসৎ কর্মকর্তা দুর্নীতি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছে। আর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ওই চক্রের দুই সদস্য র‌্যাবের হাতে আটক হয়ে স্বীকার করেছে তারা ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চোরের উপর বাটপারির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুক্রবার রাতে রাজধানীর হাজারীবাগের বউবাজার থেকে আনিছুর রহমান ওরফে বাবুল (৩৬) ও বিকাশ এজেন্ট ইয়াসিন তালুকদারকে (২৩) আটক করে র‌্যাব-২ এর একটি দল। বাবুলের কাছ থেকে তিনটি মোবাইলফোন ও ভুয়া রেজিস্ট্রিশনকৃত চৌদ্দটি সিম আর ইয়াসিনের কাছ থেকে ১২ সিম ও ১৮ মোবাইলফোন জব্দ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঢাকার কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী বলছিলেন, চক্রটি ’১৪ সাল থেকে প্রতারণা করে আসছিল। নানা পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন তারা প্রতারণা করেছে। সর্বশেষ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর পর তারাও প্রতারণার কৌশল বদলায়। সম্প্রতি দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। প্রতারক চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগায়। তারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করে। তাদের তালিকায় আছে বিভিন্ন সরকারী ব্যাংক, ভূমি অফিস, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পুলিশ, বিভিন্ন এনজিওসহ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতারক চক্র টার্গেটকৃত কর্মকর্তাকে ফোন করে নিজেকে দুদকের উর্ধতন কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। এরপর তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে বলে জানায়। কোন কোন সময় নিজেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে পাঠায়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে স্বাভাবিক কারণেই ওই কর্মকর্তা দুদক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়। তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর চায়। দেখার করার পর তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। এরপর মামলার তদন্ত ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পক্ষে হবে বলে জানিয়ে দেয়। তদন্তে দেখা গেছে, আনিছুরের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরেই গত ছয় মাসে জমা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। আর ইয়াসিনের বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। তবে লেনদেন হয়েছে নয় লাখ টাকারও বেশি। চক্রটি এভাবেই পাঁচ শতাধিক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কাছ থেকে অন্তত ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আটক আনিছুর রহমান বাবুলের দেয়া তথ্য মোতাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, মাদারীপুরের রাজৈর থানার এক ব্যক্তি এই চক্রের মূলহোতা। তার হাত ধরেই এই প্রতারণাচক্রে হাতেখড়ি। আর ইয়াসিন তালুকদার এইচএসসি পাসের পর ডিগ্রী পাস কোর্সে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ না করেই ব্যবসায় নামে। সে ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করে। গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক দিনমজুরের এনআইডি কার্ডের ও হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট একাধিকবার নিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন করে বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলে। পরে সেসব সিম প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে আসছিল। র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দুদকে মামলা হওয়ার কথা শুনে প্রতারক চক্রকে টাকা দিয়েছে, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এ ঘটনায় মামলা হবে। দুর্নীতির কথা শুনেই যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা টাকা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতারকচক্রের মোবাইল ফোনে যোগাযোগকারীদের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, গত ২৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয় থেকে র‌্যাব মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো একটি চিঠিতে প্রতারণার এমন ঘটনাটি জানানো হয়। র‌্যাব ঘটনাটির অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর প্রতারণার বিষয়টি। পরে তাদের শনাক্ত করা হয়। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
×