ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি আমাদের কর্তব্য

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি আমাদের কর্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। সরকারের একার পক্ষে এই বিশাল দায়িত্ব পালন করা দুরূহ ব্যাপার। তাই সরকারের পাশাপাশি সব বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তি বিশেষ এগিয়ে এলে সরকার নতুনভাবে উজ্জীবিত হবে। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমরা ’৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই এবং এটি করতে হলে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা প্রয়োজন হবে সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা। আমাদের মনে রাখতে হবে এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বেঁচে থাকতে হলে এই শিক্ষা দিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। সেজন্যই আমরা শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছি। শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়ামে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রায় চার হাজার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, যুগোপযোগী ও মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই শেখ হাসিনার সরকার সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। এজন্য বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বছর শুরুর দিনেই পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, যুগোপযোগী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সিলেবাস প্রণয়ন, ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান, দেশে ও বিদেশে ফেলোশিপ প্রদান, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষার প্রসার, মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়ন প্রভৃতি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আজকের ছাত্র-ছাত্রীরাই আগামীদিন দেশ পরিচালনা করবে। তারাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তাই তরুণ সমাজের মেধা বিকাশে সঠিক যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আইনমন্ত্রী বলেন , অতীতে আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে ছিল চরম বৈষম্য। এই বৈষম্য ছিল শহর ও গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত পরিবারের মধ্যে এমনকি একই শহরের ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার ফলে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ওই বৈষম্য অনেক কমে এসেছে। এখন গ্রাম ও শহরের লেখাপড়া সমান তালে চলছে। কোন শিক্ষার্থী যে প্রতিষ্ঠানেই পড়ুক না কেন সে যেন মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের পথ বন্ধ করা হচ্ছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব না হলে মেধার অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হতো এবং সমাজের একটি বিরাট অংশ পিছিয়ে পড়ত। টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতো। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে কোন চিন্তা করবে না। তোমাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যুগান্তকারী বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। সরকার কেবল দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ নামে একটি স্বতন্ত্র ট্রাস্ট চালু করেছে। এছাড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ও বিদেশে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ’, ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট’ প্রদত্ত ফেলোশিপ, ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ফেলোশিপ’ চালু করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৃত্তি ও ফেলোশিপ প্রদান করছে। এছাড়া দেশী-বিদেশী অনেক বেসরকারী সংস্থা/ট্রাস্ট/প্রতিষ্ঠান মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও ফেলোশিপ প্রদানের জন্য হাত বাড়িয়ে আছে। তোমাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে এই সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদের এই বার্তা দেবে যে, অর্থের অভাবে এখন আর কারও লেখাপড়া বন্ধ থাকবে না। যার জীবন্ত উদাহরণ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বৃত্তিপ্রাপ্ত ৩ হাজার ৯৮৬ শিক্ষার্থী। লেখাপড়া করতে হলে যে জিনিসটা থাকতে হবে সেটা হলো মেধা, শ্রম ও ইচ্ছা শক্তি। কারও মধ্যে এই তিনটি গুণ থাকলে তার লেখাপড়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না। সে সফল হবেই। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ ডশরিন বক্তৃতা করেন।
×