ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য জনগণ থেকে দূরে চলে গেছে

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য জনগণ থেকে দূরে চলে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটা বড় কাজ হয়েছে। আর তা হলো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য জনগণের কাছ থেকে দূরে চলে গেছে। নির্বাচনে জনগণের জয় হয়েছে। কিন্তু পরাজিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। সমস্যা আজকে জাতির। দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সব অধিকার চলে যাচ্ছে, গণতন্ত্র চলে যাচ্ছে। সবাই বলছে বিএনপির সমস্যা। বিএনপির কোন সমস্যা নেই। বিএনপি ইজ ইউনাইটেড বলে মন্তব্য করেছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আওয়াজ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে ‘সহিংসতা ও নারী : বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বলেন, আজকে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনের টকশোগুলোতে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বিএনপি আর ঐক্যফ্রন্টের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ান। আওয়ামী লীগ যে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিল, সংবিধানকে লঙ্ঘন করল, সে বিষয়গুলো বলার সাহস তারা পান না। যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনাগুলো ধ্বংস করে দেয়া হলো, এসব নিয়ে কেউ কথা বলেন না। তিনি বলেন, কোন দেশে যখন ফ্যাসিবাদ চলে, তখন সর্বপ্রথম তাদের কাজ হলো একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা, ত্রাস সৃষ্টি করা। জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়া। এই ভীতির কারণে কেউ কথা বলতে চান না। তাদের সফলতা এই জায়গায়। এই সরকার একটি ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে, এই ভয়ভীতির কারণে কেউ আর কথাই বলতে চায় না। এটা দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। আজ দেশে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। দেশের আপামর জনসাধারণ বলছে এ কথা। ইকনোমিস্টের মতো পত্রিকা ক্যাপশন করছে, গণতন্ত্রের মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ গোটা পৃথিবীর মিডিয়া জানে, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু মরার আগে মরে যাওয়া ঠিক নয়। কেন আমরা এটা করছি। ভয়ে ভীত হয়ে, শঙ্কিত হয়ে ঘরে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি? এটা করে তো বাঁচব না। অনেকে মনে করেন, এখন বিএনপিকে ধরেছে, ঐক্যফ্রন্টকে ধরছে, ওদেরই ধরুক, আমরা বাঁচব। এবার তো কেউই বাঁচল না, কেউ বাঁচে না। সারাদেশে আসামির সংখ্যা এখন ২৭ লাখ, মামলার সংখ্যা ৯৮ হাজার। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ভয় পাবেন না, সারাদেশের মানুষ সঙ্গে আছে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। এখন সাহস নিয়ে লড়াই করতে হবে। এই দেশের মানুষ ১৯৩৫ সাল থেকে ভোট দিয়ে আসছে। যে দল গণতন্ত্রের কথা বলেছে, সেই দল আজ আবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল, আজ আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হলো। খালেদা জিয়াকে জেলে রাখার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে খালেদা জিয়াকে একটি নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এটা তার প্রাপ্য না। তিনি জামিন পেয়েছেন, কিন্তু তাকে জামিন দেয়া হবে না। একটির পর একটি ‘মিথ্যা’ মামলা দেয়া হচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, যে দেশে জনগণের কোন নিরাপত্তা নেই, যে দেশে সংবিধানসম্মত একটি নির্বাচন করতে গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সব দখল করে নেয়া হয়, সেখানে নারী নির্যাতনের মতো বিষয়গুলোর বিচার পাওয়া যাবে, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। একজন বলেছেন, রাজনীতির বাইরে থেকে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। কে করবে, কে দেখবে, কে বিচার করবে, কে শাস্তি দেবে? কারা বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে। একজন তার ৯ বছরের মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে, তার মামলা করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হচ্ছে। কোথায় যাবেন আপনারা, সাধারণ মানুষের যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। ভোটের পর নির্বাচনী সহিংসতায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পারুল বেগমসহ নোয়াখালীর কবিরহাট, ঢাকার ফতুল্লা ও খুলনায় নারী নির্যাতনের ঘটনার চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, অন্যায়কে পরাজিত করতে হবে, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, গত নির্বাচনের সময় আমার ওপর ১০ বার হামলা হয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কর্মীদের চুলের মুঠি ধরে নির্যাতন করেছে, অশালীন আচরণ করেছে, গায়ে চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রশাসনের সহায়তায় এসব হামলা হয়েছে। যেখানে গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই, সেখানে এ ধরনের হামলা হবে, নারী নির্যাতন হবে, গণসহিংসতা, গণসন্ত্রাস, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটবে। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ‘আওয়াজ’র সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক শাহিদা রফিক। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দিলারা চৌধুরী, তাজমেরী ইসলাম, বিলকিস জাহান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
×