চরমপন্থী জিহাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ যোগ দিতে চার বছর আগে জার্মানি ছেড়েছিল লিওনোরা। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী এখন সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে জিহাদী গোষ্ঠীটির সর্বশেষ ঘাঁটি থেকে পালিয়ে দেশে ফিরতে চাইছেন। কালো রঙের ঢিলেঢালা লম্বা পোশাক ও হিজাব পরা লিওনোরা ইংরেজীতে বলেন, ‘আসলে আমি ছিলাম অনভিজ্ঞ।’
ইরাক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ভূখ-ে আইএস জিহাদীদের সর্বশেষ ঘাঁটি দখল করার জন্য মার্কিন সমর্থিত বাহিনী জঙ্গী গোষ্ঠীটির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। উভয়পক্ষের লড়াইয়ে ভীত সন্তস্ত্র হাজার হাজার মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহে বাগোউজ গ্রামের সীমান্তের বাইরে লিওনোরা ও তার দুটি ছোট শিশু হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে গাদাগাদি করে বাস করছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাত্র দুই মাসের মাথায় ১৫ বছর বয়সে এই নারী সিরিয়া আসেন। তিনি বলেন, ‘সিরিয়া আসার তিন দিন পর আমি এক জার্মান লোককে বিয়ে করি।’ লিওনোরা মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস পরিচালিত একটি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
তিনি বলেন, তিনি জার্মান জিহাদী মার্টিন লেমকের তৃতীয় স্ত্রী। মার্টিন তার দুই স্ত্রীকে নিয়ে সিরিয়া আসেন। আইএস সিরিয়া ও ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে এক বছর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। তারা এই এলাকায় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করে। লিওনোরা প্রথমে সিরিয়ায় আইএস এর কার্যত রাজধানী রাকায় বাস করতেন। তবে সেখানে তিনি শুধু একজন গৃহবধূ হিসেবেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঘরেই থাকতাম। রান্না, কাপড় ধোয়ার মতো গৃহস্থালি কাজ করতাম।’ এসময় তার কোলে তার ছোট সন্তান ছিল। বাচ্চাটির বয়স মাত্র দুই সপ্তাহ। সিরিয়ার কুর্দী কর্তৃপক্ষ কয়েক শ’ বিদেশী আইএস যোদ্ধাকে আটক রেখেছে। পাশাপাশি তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও বাস্তুচ্যুতদের জন্য গঠিত শিবিরে রয়েছে। কুর্দী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পশ্চিমা সরকারগুলোকে বারবার তাদের নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো এদের দেশে ফিরিয়ে নিতে অনিচ্ছুক। লিওনোরা বলেন, ‘আমি জার্মানিতে আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই। কারণ আমি আমার পুরনো জীবন ফিরে পেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি অনেক বড় ভুল করেছি।’ লিওনোরা বলেন, প্রথম দিকে রাকার জীবনযাত্রা খুব সহজ ছিল। কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলার সহায়তায় এসডিএফ জিহাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর সবকিছু পাল্টে যেতে লাগল। এক বছর আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে থাকার পর ২০১৭ সালে কুর্দী নেতৃত্বাধীন এসডিএফ আইএস জঙ্গীদের হটিয়ে রাকা দখল করে নেয়। লিওনোরা বলেন, ‘আইএস এর কাছ থেকে রাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর আমরা প্রতি সপ্তাহে বাড়ি পাল্টাতে লাগলাম। কারণ তারা প্রতি সপ্তাহে একটি করে শহরের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল।’ কুর্দী নেতৃত্বাধীন এসডিএফ হামলা চালালে আইএস যোদ্ধারা তাদের পরিবারের সদস্যদের রেখেই পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘তারা নারীদের একা ফেলে যায়। তারা কোন খাবারও রেখে যায়নি।’