ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পানি উঠছে না নলকূপে

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  যশোরে শুষ্ক মৌসুমের  শুরুতেই পানি  উঠছে না নলকূপে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ বর্ষা মৌসুমে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যশোরে ভূস্তরে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুম বলতে সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে গণনা করা হয়। ইতোমধ্যে অনেক টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েলে পানি উঠছে তার পরিমাণ খুবই কম। যশোর বিএডিসির পানি পরীক্ষাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, জানুয়ারি থেকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই ডিসেম্বর থেকেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এবার বর্ষা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আগেভাগেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। সাধারণত বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২০৩ সেন্টিমিটার। এবার হয়েছে তুলনামূলক কম। বর্তমানে পানির স্তর ২০ থেকে ২৫ ফুটে নেমে গেছে। এ কারণে টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া কৃষিকাজে সেচের কারণেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এসময় ভূগর্ভ থেকে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি ওঠানো হয়। পানির স্তর স্বাভাবিক হতে মাসখানেক সময় লাগে। তবে মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে পানির স্তর আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এছাড়া আগে বৃষ্টি হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি জানান, সাধারণত পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে ১৫ থেকে ২০ ফুটের মধ্যে। বিএডিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপের সংখ্যা এক হাজার ৬শ’ ২টি। এর মধ্যে বিদ্যুতচালিত এক হাজার ৪শ’ ৮৬টি এবং ডিজেলচালিত এক শ’ ১৬টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ৪শ’ ৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়। অন্যদিকে স্যালো টিউবওয়েলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৮শ’ ৯৯টি। এর মধ্যে বিদ্যুতচালিত ৬ হাজার ৭শ’ ৮৪টি এবং ডিজেলচালিত ৫৭ হাজার এক শ’ ১৫টি। এসব স্যালো টিউবওয়েল দিয়ে একলাখ ২৩ হাজার ৪শ’ ৮২ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়। সূত্র জানায়, আমাদের দেশে বোরো ধান চাষের সময় অনেক পানি অপচয় হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে আমাদের দেশে পানি লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার। উন্নত ধান উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এর অর্ধেক পানি খরচ হয়। এসব দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার লিটার। কৃষিকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পানির অপচয় রোধ করে। বারিড পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে জমিতে সেচ দেয়া হয়। আমাদের দেশে জমিতে নালা কেটে পানি দেয়া হয়। ফলে অর্ধেক পানি মাটিতে চুষে নেয়। পানির অপচয় রোধ করতে ইতোমধ্যে বিএডিসির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় উন্নত প্রযুক্তির বারিড পাইপের মাধ্যমে জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে। এতে যেমন পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে তেমনি জমিতে কম সময়ে দ্রুত পানি পৌঁছে যাচ্ছে। বোরো চাষের কাজে অনেক পানি অপচয়ের ফলে প্রতিবছরে এ সময় তীব্র খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট রোধ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর যশোর অফিস জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। তারা শহর ও শহরতলিতে স্বল্পমূল্যে গভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানির সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর মোশারেফ জানান, যেসব এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দেয়, ওইসব এলাকায় ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে গভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানিসহ গৃহস্থালির কাজে পানির ব্যবস্থা করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট মোকাবেলার জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে তার সমাধান করা হচ্ছে। গতবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সঙ্কট মোকাবেলা করা হয়েছে।
×