ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এপারে যে বাংলাদেশ ওপারেও সেই বাংলা ॥ শঙ্খ ঘোষ

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

  এপারে যে বাংলাদেশ ওপারেও  সেই বাংলা ॥  শঙ্খ ঘোষ

মোরসালিন মিজান ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান কবি শঙ্খ ঘোষ ও মিসরের লেখক সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। বাংলা একাডেমির আমন্ত্রণে আসা অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী মঞ্চে। অন্য দেশের হলেও এদিন বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে তারা তাদের অনুভূতি তুলে ধরেন। বাংলা কবিতার পাঠকদের কাছে চির পছন্দের কবি শঙ্খ ঘোষ। অসংখ্য কালজয়ী কবিতা লিখে দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু সরাসরি অনেকেই দেখেননি তাঁকে। শুক্রবার দেখা হয়। কিন্তু বার্ধক্যের কাছে এখন অসহায় কবি। কথা বলা বারণ। তিনি এদিন মুখে কিছু বলতে পারেননি। তবে তার লিখিত বক্তব্যও কবিতার মতোই শুনিয়েছে। পাঠ করে শোনান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। এটিও বিখ্যাত কণ্ঠ। তাই দারুণ একটি ফিল পাওয়া যায়। লিখিত বক্তব্যে শঙ্খ ঘোষ বলেন, মেঘনা নদীর কূলে চাঁদপুর আমার জন্মভূমি। সন্ধ্যানদীর কূলে বাঙালীপাড়ায় আমার পিতৃমহের ভিটে। কির্তনখোলা নদীর ধারে বরিশাল শহরে লালিত হয়েছি আমি সাড়ে তিন বছর বয়স পর্যন্ত। আর গোটা স্কুল জীবনটা আমার কেটেছে পদ্মা নদীর পাড়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন পাকশি এক আশ্চর্য কলোনিতে। ১৫ বছর বয়সের পর জীবনে আরও ৭২ বছর আমার কাটলো গঙ্গার কূলে যে কলকাতা শহরে সেখান থেকে বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকায় এসেছি আমি আপনাদের আহূত এক অতিথি হিসেবে। সম্মান বোধ করছি আমি। কিন্তু সেই সঙ্গে একটা শঙ্কোচও ছেয়ে যাচ্ছে মন। যে দেশের হাওয়ায় মাটিতে জলে গোটা কৈশোর কেটেছে সেই দেশই তো আমার। ৭২ বছর ধরে প্রায় প্রতি মুহূর্তে সেই ১৫ বছরকেই তো ধারণ করে আছি আমি। তাই এটা আমারও দেশ। এখানে কি আমার অতিথি হয়ে আসা সাঝে? কবি বলেন, বহুবার এসেছি আমি বাংলাদেশে। কিন্তু বহুবার এড়িয়ে গিয়েছি এখানকার নানা আনুষ্ঠানিক আহ্বান। স্বরের আর শরীরের জীর্ণতা সত্ত্বেও এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে মনে হলো, আমার জীবনে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। সঙ্কোচবশত হলেও, আমি আজ আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই সেই একুশের স্মৃতিকে যার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার এতদূর বিশ্বজনীন মর্যাদা। তিনি বলেন, ১৯১৩ সালের বিশ্বসাহিত্য জগতে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব। ১৯৫২ সালে ঢাকা শহরে একুশে আন্দোলন। ১৯৭১ সালে নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে সেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বজগতে স্বীকৃতি। আমার কাছে আশা করি আরও অনেকের কাছে এই চারটি মুহূর্ত হলো আমাদের ভাষার জন্যে এক জয়গর্বের মুহূর্ত। শেষ করেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার চরণ দিয়ে। বিখ্যাত কবিতাটিকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, এ পারে যে বাংলাদেশ/ ও পারেও সেই বাংলা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আরেক বিদেশী অতিথি মোহসেন আল-আরিশি। মিসরের লেখক সাংবাদিক বাংলাদেশের পাঠকের কাছে অতো পরিচিত নন। তবে তিনি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সম্পর্কে ভাল জানেন। গবেষণা করেছেন। লিখেছেন একটি বইও। বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। মেলা মঞ্চে বইটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এর আগে বক্তব্য রাখতে এসে আরিশি বলেন, এ গ্রন্থমেলা উগ্রতা এবং অন্ধতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের লড়াইয়ের প্রতীক। যে লড়াইয়ের প্রতীক বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাও। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত নির্মাণে শেখ হাসিনা যেভাবে লড়াই করছেন, তার সে লড়াইয়ে সারাবিশ্বের গ্রন্থপ্রেমী সকল উদার মানুষের সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুব সুন্দর একটি দেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়। তিনি জাতির পিতা। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, পঁচাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধীরা তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার নাম মুছে দিতে চায়। এ পর্যায়ে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, পিতা মাতা ও স্বজন হত্যার বিচার তিনি নিজের হাতে তুলে নেননি। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের ব্যবস্থা করেননি। বরং প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছেন। পিতার স্বপ্ন এগিয়ে নিতে এখনও কাজ করে চলায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। দুই বিদেশী লেখক ও কবির বক্তব্য অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
×