ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নূপুরের ছন্দে ছায়ানটের নৃত্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 নূপুরের ছন্দে  ছায়ানটের  নৃত্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৃত্যপ্রেমীদের জন্য সন্ধ্যাটি ছিল মনোরম। পুরো ভবনজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে নূপুরের ছন্দ। মণিপুরী, কত্থক, ভরতনাট্যম, ওড়িশিসহ একেরপর এক দৃষ্টিনন্দন নৃত্যে দর্শক মুগ্ধ। যানজট উপেক্ষা করে নৃত্যের ছন্দে নিজেকে প্রাণিত করতে শুক্রবার সন্ধ্যায় অগণিত দর্শকের সমাগম ঘটে ছায়ানটের প্রধান মিলনায়তনে। প্রধান প্রবেশ দ্বার থেকে শুরু করে পুরো ভবনটিকে সাজানো হয়েছে উৎসবের সাজে। ছায়ানট আয়োজিত নৃত্যোৎসব ১৪২৫ উৎসর্গ করা হয়েছে নৃত্যাচার্য বুলবুল চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। এরপর বুলবুল চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সৃষ্টি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের উপদেষ্টা মফিদুল হক। তিনি বলেন, প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় পর্যায়ে নৃত্যচর্চায় বিশেষ অবদানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার সমান খ্যাতি রয়েছে। নাচের সঙ্গে অভিনয় যোগ করে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরাই ছিল তার নৃত্যনাট্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার নৃত্যনাট্যের বিষয়বস্তু ছিল বিচিত্র ধরনের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ৭০টি নৃত্যনাট্য রচনা এবং সফলভাবে পরিবেশন করেন। ১৯৫৪ সালের ১৭ মে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। নৃত্যশিল্পে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তার নামে ১৯৫৫ সালের ১৭ মে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমি। বুলবুল চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ছায়ানট আয়োজন করেছে এ নৃত্যোৎসব। সে কারণেই উৎসবটিকে তার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। বুলবুল চৌধুরী আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার নৃত্য ঘরানা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছে। তার সৃষ্টির মধ্যেই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। এরপর শুরু হয় একক ও দলীয় নৃত্য। ছায়ানটের শিল্পীরা দলীয়ভাবে পরিবেশন করে মণিপুরী নৃত্য। মাইবি জাগোই দিয়ে দিয়ে শুরু করে তাদের দলীয় পরিবেশনা। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শিল্পী শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়। পরে একক নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী মনোমি তানজানা অর্থী। তিনি পরিবেশন করেন তা-বলাস্য। শিল্পী ওয়ার্দা রিহাব পরিবেশন করেন মৃদু উদ্ধত কৃঞ্চনর্তন। নৃত্য সংগঠন ভাবনার পরিবেশনায় ছিল এক গোপী এক শ্যাম। সুইটি দাস পরিবেশন করেন রথমঙ্গল। মণিপুরী নৃত্যের শেষ পরিবেশনা ছিল নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনা। তারা দলীয়ভাবে পরিবেশন করে পুংলোলজাগোই। এরপর শুরু হয় ওড়িশি নৃত্য। আফিয়া ইবনাত হালিম পরিবেশন করেন বটুনৃত্য। নৃত্যছন্দের দলীয় পরিবেশনায় শেষ হয় ওড়িশি নৃত্য। তারা পরিবেশন করেন বসন্তপল্লবী। পরে শুরু হয় ভরতনাট্যম। শুরুতে ছায়ানটের শিল্পীরা দলীয়ভাবে পরিবেশন করে পুষ্পাঞ্জলি। দলীয়ভাবে যতিস্মরম পরিবেশন করে জাগো আর্ট সেন্টারের শিল্পীরা। শিল্পী অমিত চৌধুরী ও মারিয়া ফারিহ উপমার একক পরিবেশনায় ছিল পদম। প্রান্তিক দেব পরিবেশন করেন বোশাম্ভু কীর্তনাম। মিতা সেনগুপ্ত পরিবেশন করেন প্রাদোশা সামায়াতি কীর্তনাম। ভরতনাট্যমের শেষ পরিবেশনা ছিল সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা। তারা পরিবেশন করে তিলানা। উৎসবের শেষ পরিবেশনায় ছিল কত্থক নৃত্য। শিল্পী ফিফা চাকমার গণেশ বন্দনা দিয়ে শুরু হয় এ নৃত্য। শিল্পী এস এম হাসান, ইশতিয়াক ইমরান ও মৌমিতা রায় পরিবেশন করেন তারানা। শিল্পী মনিরা পারভীন হ্যাপি এককভাবে পরিবেশন করেন শুদ্ধনৃত্য। রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা ঠুমরী ও তারানার মধ্যদিয়ে শেষ হয় কত্থক নৃত্য। সব শেষে জাতীয় সঙ্গীদের মধ্যদিয়ে শেষ হয় ছায়ানট আয়োজিত নবম নৃত্যোৎসব।
×