ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চার জঙ্গী গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য

এক সম্পাদককে হত্যার টার্গেট ছিল আনসারুল্লাহর

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 এক সম্পাদককে হত্যার টার্গেট ছিল আনসারুল্লাহর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা থেকে সরে যায়নি। তাদের হত্যার টার্গেটের মধ্যে রয়েছে কথিত অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টরা। র‌্যাবের হাতে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনটি চার সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেফতারকৃতরা দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার টার্গেট করেছিল। হত্যার মিশন সফল করার আগেই গ্রুপটি ধরা পড়ে যায়। গ্রেফতার হওয়া গ্রুপটি ছদ্মবেশে অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের গ্রুপে ঢুকে তাদের উপর নজরদারি করতো। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলছিলেন, গত ২৮ জানুয়ারি সাভারের আশুলিয়া এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিব র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হাবিব এবিটির নানা পরিকল্পনা সর্ম্পকে তথ্য দেয়। সেই তথ্য মোতাবেক র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেমের সার্বিক তদারকিতে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান চলতে থাকে। অভিযানের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত দু’টার দিকে ঢাকার উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এবিটির চার জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোঃ শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মোঃ আম্মার হোসেন (২০)। পিতা- মোঃ রেজাউল করিম। বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট থানাধীন চরমুখশিয়া গ্রামে। একই দলের সদস্য মোঃ রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪)। পিতা- মোঃ ইসমাইল। বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানাধীন ফুলকাছিয়া গ্রামে। মোঃ রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪)। পিতা- মোঃ রেজাউল করিম। রবিউল ও নাফিস একই গ্রামের বাসিন্দা। মোঃ আব্দুল মালেক (৩১)। পিতা- মৃত মোঃ আবুল কালাম সর্দার। বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের হাছানগঞ্জ গ্রামে। তাদের কাছ থেকে জিহাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে নাফিস সপ্তম শ্রেণী পাশ। দু’বছর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর আবার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছিল। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমানের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রধরে এবিটিতে যোগ দেয়। আমান তাকে নিয়ন্ত্রণ করতো। তার নির্দেশনায় নাফিস ৪/৫টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার চালাতো। পাশাপাশি জঙ্গী সদস্য সংগ্রহ করতো। তার মাধ্যমে অন্তত ৮ জন এবিটিতে যোগ দিয়েছে। সে এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন এ্যাক্টিভিস্টদের ওপর নজরদারি করছিল। সে ছদ্মবেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গীদের ভাষায় নাস্তি¡ক গ্রুপে ঢুকে পড়েছিল। ওই গ্রুপের সদস্যদের ওপর নজরদারি করছিল। যার মধ্যে একজনকে হত্যার টার্গেট করেছিল তারা। ওই এ্যাক্টিভিস্টকে হত্যার জন্য সে গ্রেফতারকৃত অপর তিন জঙ্গীকে দায়িত্ব দিয়েছিল। হত্যার জন্য গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং অপর জঙ্গী বরগুনা থেকে বগুড়া গিয়েছিল। বগুড়া যাওয়ার সময় তারা ওই অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টকে ফোন করে জরুরী কথা আছে বলে জানায়। তাকে জঙ্গীকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জরুরী কথা থাকার অজুহাতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু ওই এ্যাক্টিভিস্ট সাক্ষাত না করায় জঙ্গীরা ওই এ্যাক্টিভিস্টকে হত্যা করতে পারেনি। আর সাজেদুল ইসলাম গিফারী ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করে। একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সঙ্গে জঙ্গীবাদের বিষয়ে আলোচনা করতো। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময় ফেসবুকে এ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশে ঢুকে অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের ওপর নজরদারি করতো। ছদ্মনামে একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো সে। সাজেদুল এবিটির এই অংশের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করতো। সে দলের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের কাছ থেকে অর্থ জোগাড় ও সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো। রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে। বগুড়া পলিটেকনিক্যাল থেকে ২০১৫ সালে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে। ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে সে জঙ্গী সংগঠনে যোগদান করে। আর আব্দুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান বলছিলেন, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি এ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশে যুক্ত হয়ে কথিত ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ এ্যাক্টিভিস্টদের ওপর নজরদারি করছিল। তারা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও বিরূপ মন্তব্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা করেছিল। একজনকে হত্যার জন্য চেষ্টাও করেছিল। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারকৃতরা দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার টার্গেট করেছিল। ওই দৈনিক পত্রিকাটি বিয়ে সংক্রান্ত একটি হাদিস ছাপিয়েছিল। যা ইসলাম বিদ্বেষী বলে গ্রেফতারকৃতরা মনে করে। এজন্যই গ্রেফতারকৃতরা ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার টার্গেট করেছিল। তদন্তের স্বার্থে ওই সম্পাদকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলছেন, ওই সম্পাদককে কতদিন যাবত হত্যার টার্গেট নিয়ে গ্রেফতারকৃতরা প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সে সর্ম্পকেও বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না। তিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক কৌশলগত কারণে তাও জানানো যাচ্ছে না। গ্রেফতারকৃতরা গোপনে সংগঠনকে সক্রিয় করার কাজ করছিল। এবিটির অন্যতম পরিকল্পনার মধ্যে আছে, সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে বলে জানিয়েছে। জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার জন্য তারা ইতোমধ্যেই অর্থ সংগ্রহ করেছে।
×