ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাইকে কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 বাইকে কর্মসংস্থান

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন নজরকাড়া। জনসংখ্যা বাড়ছে যে তুলনায় কর্মক্ষেত্রের সংখ্যা সেভাবে বৃদ্ধিও পায় না, ফলে আর্থ-সামাজিক অনেক সঙ্কট মোকাবেলা করেও নতুন সমস্যা তৈরি হতেও সময় লাগে না। এক্ষেত্রে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ অবারিত হওয়া সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে মোবাইল এ্যাপভিত্তিক ছোট ও মাঝারি আকারের যন্ত্রযান নতুন কর্মক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেখানে শুধু বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে এমনটা নয়, যাত্রী সেবায়ও এসেছে যুগোপযোগী সংযোজন। বৃহদাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা বর্তমানে জনসংখ্যার তুলনায় যেমন অপ্রতুল একইভাবে যাত্রী সেবার মানও ততটা আশানুরূপ নয়। তীব্র যানজটের কবলে জর্জরিত গণপরিবহনের যে অসহনীয় দুর্ভোগ সেখানে ক্ষুদ্র মোটরসাইকেল শুধু যাত্রী সেবার মান বাড়িয়েই দেয় না অসংখ্য উদীয়মান প্রজন্মের জীবনও জীবিকার অন্যতম নির্ধারকও হয়ে যায়। সারাদিন অথবা খন্ডকালীন সময়ে এমন অনলাইনভিত্তিক সেবার সঙ্গে জড়িত হয়ে অনেকেই মাসে কমিশন ফি দিয়েও ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করে। সড়ক মহাসড়কে তীব্র যানজটের ফাঁক ফোকরে এসব ক্ষুদ্র যান তাদের গন্তব্যে পৌঁছতেও বেশি সময় নেয় না। ফলে যাত্রাপথের অনেক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেয়ে যাত্রীরা তাদের কর্মস্থলে সঠিক সময়ে পৌঁছেও যায়। এমন ধরনের ছোট্ট পরিবহন সেবা শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের লাগে একটি বৈধ মোটরবাইক, সঙ্গে আইনানুগ কিছু কাগজপত্র। দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বাইকে যাত্রী বহন করে চালক যে টাকা আয় করে তা খুব সামান্যও নয়। মূলত রাজধানী ঢাকা শহর থেকে শুরু হওয়া এই পরিবহন সেবাটি বন্দর নগরী চট্টগ্রাম এবং সিলেটেও এর পরিধি সম্প্রসারিত করে বলে বিআরটিএর সূত্রে জানা যায়। ঢাকায় নিবন্ধিত এমন বাইকের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০টি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও এর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ হাজার। পাঠাও, উবার ও সহজের মতো ক্ষুদ্র যন্ত্রযানে এ্যাপভিত্তিক মোবাইল সেবা সংস্থার যে চুক্তিভিত্তিক লেনদেন তা সামাল দিয়েও বাইক চালকরা তাদের আর্থিক সচ্ছলতায় মোটামুটি খুশি। বৃহত্তর রাজধানী শহরে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজতে আসা অনেক নতুন প্রজন্ম পছন্দসই চাকরি না পেয়ে মোবাইল এ্যাপভিত্তিক এই যন্ত্রযান সেবার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করে নেয়। এটি একটি স্বাধীন পেশাই শুধু নয়, কর্মঘণ্টা হিসাব করেও চলতে হয় না বলে কোন বাড়তি চাপও থাকে না। কর্মোদ্যোগী, স্বাধীনচেতা, আত্মপ্রত্যয়ী অনেক সচেতন যুবক বর্তমানে এমন পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। শুধু তাই নয়, এর ব্যাপক সম্প্রসারণ আরও কর্মক্ষেত্র তৈরি এবং যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। প্রথমত সড়ক পরিবহনের আইনশৃঙ্খলা ও বিধিনিষেধ মানা প্রত্যেক সচেতন চালকের নৈতিক দায়িত্ব। তাই এমন কর্মসংস্থান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম মাফিক নিরাপদ সড়ক আইন মানাও বিশেষ দায়বদ্ধতা। কারণ যন্ত্রযান বৃহৎ কিংবা ক্ষুদ্র হোক না কেন সড়ক পরিবহনের বিধিবদ্ধ শৃঙ্খলা লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে নতুন শুরু হওয়া এই মোটরবাইকের সড়কের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখাও অত্যন্ত জরুরী। কারণ সড়কের যাত্রাপথ হুমকি কিংবা বিপন্ন অবস্থায় পড়লে চালক কিংবা যাত্রী কারও জন্যই মঙ্গল হবে না। অনুযোগ রয়েছে বিশেষ করে অফিস সময়ে বাইক চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে থাকে। এমন অবস্থাও যাত্রী সেবার অনুকূলে যায় না। সবদিক বিবেচনায় এনে এই কর্মসংস্থানটিকে জনস্বার্থেই নিবেদন করতে হবে।
×