ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট

বাকস্বাধীনতার অবনতি

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাকস্বাধীনতার অবনতি

মিয়ানমারে বাকস্বাধীনতা নতুন সরকারের অধীনে দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। রয়টার্সের দুই সাংবাদিক কিয়াও সোয়েও এবং ওয়ালোনের কারাদন্ড আটকাতে ব্যর্থতার জন্য আউং সান সুচির বিরুদ্ধে সমালোচনা হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক নতুন রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। রিপোর্টে কিয়াও সোয়েও এবং ওয়ালোনের কারাদ-ের উল্লেখ করে বলা হয়, ওয়ালোনের কারাদন্ডের উল্লেখ করে বলা হয়, তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য মামলায় সামরিক বাহিনীর ইচ্ছা কাজ করেছে। কারণ, এ দুই সাংবাদিক রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণ তদন্ত করছিলেন এবং এ সংক্রান্ত সামরিক বাহিনীর গোপন তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছিলেন। ‘ড্যাশড হোপস-দ্য ক্রিমিনালাইজেশন অব পিসফুল এক্সপ্রেশন ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক রিপোর্টটি শুক্রবার প্রকাশিত হয় এবং এতে ২০১৬-এ ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ক্ষমতায় যাবার পর থেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি বিশ্লেষণ করা হয়। অনুসন্ধিৎসু ম্যাগাজিন মাওকুনের সম্পাদক ও মিয়ানমার জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের নির্বাহী সদস্য জায়ার হ্যালেইং রিপোর্টে বলেছেন, এনএলডি ২০১৫ য়ের নির্বাচনের আগে বলেছে, দল সংবাদ মাধ্যমকে রক্ষা করবে এবং এর স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে। কিন্তু দু’বছর পর সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশীয় আইন উপদেষ্টা ও এ রিপোর্টের লেখক লিন্ডা লাখধির বলেন, আউং সান সুচি ও ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি এক নতুন গণতান্ত্রিক মিয়ানমার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ সরকার এখনও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও বক্তৃতা-বিবৃতির বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে এবং পুরনো নিবর্তনমূলক আইন সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার গ্রুপ বলেছে, নতুন সরকার মানহানির অস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদানের মাধ্যমে সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে টেলিকমিউনিকেশন্স ল’য়ের সেকশন ৬৬ (ডি) ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক নিরপেক্ষ উপদেষ্টা হান্টার মারস্টোন প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেছেন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। উপরন্তু, সমালোচনা দমনে আইনের ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের কার্যত নেতা বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন। স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি রয়টার্সের রিপোর্টার কিয়াও সোয়েও এবং ওয়ালোনের বিরুদ্ধে অন্যায় অভিযোগ ও কারাদ-ের বিরুদ্ধে তার কর্তৃত্ব ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন। তিনি বলেন, বহুল আলোচিত এ মামলা মিয়ানমারের সাংবাদিক সম্প্রদায়ের ওপর কালো যবনিকা টেনে দিয়েছে। এ সাংবাদিকরা কষ্টসাধ্য সংবাদ উপস্থাপনের জন্য দমনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা অব্যাহত রেখেছেন, জাতিগত সংখ্যালঘু রাজ্যগুলোতে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন এবং এনএলডির রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি জনসমক্ষে তুলে ধরছেন। নিরপেক্ষ গবেষক কিম জলিফি বলেন, কিয়াও সোয়েও এবং ওয়ালোনকে কারাদ- প্রদানের সঙ্গে ভীতি প্রদর্শন আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় পত্রিকাগুলোর কিছুটা সিনিয়র সাংবাদিকদের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই নিয়মিত আটক করা হচ্ছে এবং দায়িত্ব পালন অবস্থায় তাদের ওপর সহিংস হামলা চালানো হচ্ছে। তরুণীসহ অসংখ্য সাংবাদিককে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্যিক উদ্যোগ বা রাজ্য সম্পৃক্ত অর্থনৈতিক প্রকল্পের ওপর রিপোর্ট গ্রহণকালে প্রহার বা হত্যা করা হয়েছে। তিনি এখানে কেবল এমন কয়েকজনের বিষয়ে বললেন যারা বৈশ্বিক মিডিয়া কর্পোরেশনে কাজ করেন। জলিফি বলেন, এ্যামিটেন্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলেছে, মোট ৩৫ রাজনৈতিক বন্দী কারাগারে রয়েছেন এবং আরও ৫৬ জন বিচারপূর্ব আটক অবস্থায় আছেন যাদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। এ অবস্থায় রয়েছেন কারাগারের বাইরে ২শ’ জনের বেশি। এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ুন্তুকে কোন মন্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি।
×