ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শুরু হলো ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাসের প্রথম দিন আজ। দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন সফল পরিণতি পেয়েছিল এই মাসে। ‘মাগো ওরা বলে/সবার কথা কেড়ে নেবে।/তোমার কোলে শুয়ে/গল্প শুনতে দেবে না।/বলো, মা/তাই কি হয়?’ হয় না। জব্বার রফিক শফিক বরকতরা তা হতে দেয়নি। মায়ের ভাষায় সম্মান রক্ষা করতে নিজেদের প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছিল তারা। সেই তরুণ তাজা প্রাণের বিনিময়ে উজ্জীবন ঘটে বাংলা ভাষার। আজকের বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি মানে ভাষা দিবস। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদার লেগুয়েজ ডে। একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বাঙালী মাত্রই একুশ নিয়ে গর্ব করে। অন্য ভাষাভাষীরাও এ সম্পর্কে জেনে আপ্লুত হন। হ্যাঁ, বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাতেই রচিত হয়েছিল গৌরবোজ্জ্বল এই ইতিহাস। আজ থেকে নানা আয়োজনে ইতিহাসটি স্মরণ করবে বাঙালী। অমর একুশের দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। ভাষার প্রতি ভালবাসা জানানোর মাসে নতুন করে শপথ নেবে আগামী প্রজন্ম। একুশের চেতনা, একাত্তরের অর্জন ধরে রাখতে কাজ করবে তারা- আজকের দিনে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রসঙ্গে আসা যাক। বই নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ মেলাটি আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। মাসব্যাপী আয়োজনে মুখরিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু প্রস্তুতি আর শেষ হয় না। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, সেই চেনা ছবি। দূর থেকে কানে আসছিল পেরেক ঠুকার শব্দ। করাত চালাচ্ছিলেন মিস্ত্রিরা। চলছিল রং করার কাজ। এমনকি অন্যপ্রকাশের মতো বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি। একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছিল। দেখে বেশ অবাক হতে হয়। পাশেই অ্যাডর্নের স্টল। এটিরও কাজ চলছে। কেন? এবার তো একদিন আগে সব কাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল। হলো না কেন? জানতে চাইলে অ্যাডর্নের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসেন বিশেষ কোন কারণ দেখাতে পারলেন না। বললেন, লটারি করতে দেরি হয়েছে। আমরা সময় পেয়েছি কম। তাই কাজ শেষ করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে কথা হয় মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদের সঙ্গেও। তিনি বলেন, যারা আন্তরিক তারা অল্প সময়েরও মধ্যে স্টল সাজানোর কাজ শেষ করেছেন। অন্যরা আসলে দেরি করেই অভ্যস্ত। অভ্যাসের কারণেই পারেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে আজ মেলা শুরুর আগে আগে সব প্রস্তুতি শেষ করতে তারা বাধ্য বলে জানান তিনি। এদিকে মেলায় আসা যাওয়ার পথগুলোও ঠিক করা হয়নি। ময়লা আবর্জনার ভাগাড় পেরিয়ে মেলায় যেতে হবে। আসতে হবে। এ নিয়েও আশাবাদের কথা জানালেন একাডেমির সচিব মোঃ ইলিয়াস। বললেন, সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় কাজগুলো হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই হবে বলে জানান তিনি। আজ ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় কবিতা উৎসবও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে সকালে উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। উৎসবে সারাদেশ থেকে আগত কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করবেন। যোগ দেবেন বিদেশ থেকে আসা কয়েকজন কবি। দুদিনের আয়োজন আগামীকাল শনিবার শেষ হবে। সব মিলিয়ে উৎসব অনুষ্ঠানে জমজমাট থাকবে এ সপ্তাহের ঢাকা।
×