ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ পেলে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ পেলে কঠোর ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ১১তম এশিয়া ফার্মা ও এশিয়া ল্যাব এক্সপো। বৃহস্পতিবার ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বা ওষুধ শিল্পের এই প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। তিন দিনব্যাপী এই মেলায় বিশ্বের ৫০টি দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল প্ল্যান্ট নির্মাণে সহায়তাকারী ৬৫০ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। রয়েছে দেশীয় সব নামী-দামী ওষুধ কোম্পানি। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি এ মেলার আয়োজন করে আসছে। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাজারে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। ওষুধের গুণগত মান রক্ষায় সরকার কয়েক বছর ধরে কারখানা ও ফার্মেসিগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ওষুধ শিল্পের সার্বিক সুনাম যেন ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য ওষুধ শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সমিতির সভাপতি সংসদ সদস্য নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মে. জে. মোস্তাফিজুর রহমান, সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান বক্তব্য রাখেন। দূর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ঘোষণার পূর্ণ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কঠোর নজরদারি বাড়াচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের দুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। হাসপাতালে এসে যদি রোগী চিকিৎসক বা নার্স না পায়, মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। চিকিৎসক, নার্স উপস্থিতিসহ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার নিয়মিত কঠোর নজরদারিতে তিন স্তরের মনিটরিং সেল তৈরি করা হচ্ছে। এ সময় চিকিৎসক সমাজের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কতিপয় চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলার জন্য পুরো সমাজের মান ক্ষুণ্ণ হয়। তাই উপজেলায় পদায়নকৃত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রাখার জন্য সকলকে তৎপর থাকতে হবে। কর্মস্থলে চিকিৎসক ও নার্স না থাকলে সরকার আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে কোন ছাড় না দেয়ার ঘোষণা পূর্ণব্যক্ত করেন মন্ত্রী। আগামীতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প সব শিল্পের উর্ধে উঠে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখবে, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি শিল্পবান্ধব ব্যক্তি, দেশের ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাব’। তিনি বলেন, আমাদের ওষুধের গুণগত মান আজ আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। নতুন নতুন দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ আমদানি করার জন্য। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করছে, মন্তব্য করে দেশের ওষুধ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দেশী উদ্যোক্তার পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তাদের প্রতিও আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এক্সপো ঘুরে দেখা যায়, ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল (এপিআই), প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, কারখানা ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামাদি ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরির উপাদানের সমাহার। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসেছে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসকেটের চাইনিজ কোম্পানি হোমেন। কোম্পানিটির বৈদেশিক বিক্রির ব্যবস্থাপক ড্যান সং জানান, আমাদের রাবারের তৈরি গ্যাসকেটগুলো নিয়ে আমরা বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এসেছি। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে উন্নতি করেছে বলেই আমরা ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়েছি। আমাদের পণ্যগুলোর ম্যানুফেকচারিং অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। ভারত থেকে এসেছে এ্যাডভেন্ট কেমবায়ো প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির দাবি তারাই একেবারে নতুন প্রযুক্তিতে কেমিক্যাল উৎপন্ন করছে যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র। এ্যাডভেন্টের আঞ্চলিক বিক্রির ব্যবস্থাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের সোডিয়াম লরেল সালফেট (৯৯ শতাংশ) পণ্যটি যেভাবে উৎপাদন করি সেভাবে আর কেউ এখনও করে না। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরাই প্রথম যেটা হাই পারফর্মেন্স লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফির (এইচপিএলসি) জন্য অধিকতর উপযোগী। এছাড়া এনএন-ডাইমিথাইলডোডেক্ল্যামিন এন-অক্সাইড (৯৯ শতাংশ, ডিডিএও) এ ধরনের একটি পণ্য, যা উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরাই একমাত্র। আমরা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। এদিকে তুরস্ক থেকে এয়ারকে নামে কোম্পানি এসেছে রক্ষণাবেক্ষণ প্যাকেজসহ উন্নতমানের কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ও ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানার যন্ত্রপাতি নিয়ে। এভাবে ওষুধ শিল্পে প্রয়োজনীয় সব অত্যাধুনিক সব পণ্যের সমাহারে জমে উঠেছে এক্সপো। যেখানে দর্শনার্থী হিসেবে উপস্থিত হচ্ছে বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানির প্রতিনিধি মালিক ও এ বিষয়ক শিক্ষার্থীরা।
×