ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নবায়নযোগ্য জ্বালানি

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নবায়নযোগ্য জ্বালানি

বিদ্যুত সেক্টরে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর সরকার এবার সবিশেষ জোর দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। যার মধ্যে অন্যতম জলবিদ্যুত, সৌর ও বায়ুবিদ্যুত। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে তা দেশে এনে ব্যবহারের ওপর। ভারত ইতোমধ্যে নিজেদের জমি ব্যবহারের শর্ত শিথিল তথা তুলে নেয়ায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনেও আর প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। এতে সাশ্রয়ী দামে যেমন জলবিদ্যুত পাওয়া যাবে, তেমনি তা হবে পরিবেশবান্ধব। সরকার ইতোমধ্যে ভূগর্ভে পানির স্তর ঠিক রাখার জন্য উত্তরাঞ্চলে আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষি কাজের নিমিত্ত ভূগর্ভের জলাধার ঠিক রাখতে সরকার কুড়িগ্রামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও বাতিল করে দিয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে, যা প্রধানত আসবে নেপাল ও ভুটানে যৌথ বিনিয়োগে উৎপাদিত জলবিদ্যুত থেকে। এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে চরাঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলে সবিশেষ জোর দেয়া হবে সৌর ও বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনে। দেশে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বিশাল বিনিয়োগের পর বাংলাদেশ এবার ঝুঁকেছে নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে যৌথ বিনিয়োগের দিকে। হিমালয় পর্বতমালার সুউচ্চে অবস্থান বিধায় এই দুটো দেশে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুত উৎপাদনের সমুজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে বিদেশী ঋণ ও প্রযুক্তি পাওয়াও অপেক্ষাকৃত সহজ। আর তাই বাংলাদেশ সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশ দুটোতে জলবিদ্যুত উৎপাদনে বিনিয়োগসহ উৎপাদিত বিদ্যুত দেশে আমদানি করতে ইচ্ছুক। এ নিয়ে নেপালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর পাশাপাশি নেপালের আপার কারনালি জলবিদ্যুত প্রকল্প থেকে আপাতত ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত আমদানি নিয়েও হয়েছে ফলপ্রসূ আলোচনা। এর মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে নিশ্চিতভাবে। সে দেশে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিসহ বিনিয়োগের পথও প্রশস্ত হবে। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে এবং আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। উল্লেখ্য, ২০৪০ সাল নাগাদ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি দেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে মাত্র সাত দিনের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বর্তমানে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দিতে লাগে ২৮ দিন। উল্লেখ্য, দেশ এখন বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মংলা, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে তৈরি হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। সেই হিসেবে বর্তমান ২১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নতুন ৪২টি ইপিজেডে স্বল্প সময়ে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া অসম্ভব হবে না। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে এসব ইপিজেডে শতভাগ শিল্পায়ন ঘটবে। ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগসহ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কয়েকটি শিল্প পার্কসহ নতুন এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। নেপাল ও ভুটানের পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুত কেন্দ্র এই উন্নয়নে সহায়ক হবে নিশ্চয়ই।
×