ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলা, কবিতা উৎসব

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গ্রন্থমেলা, কবিতা উৎসব

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন রাজধানীতে দুটি উৎসবের সূচনা ঘটে- মহান একুশে গ্রন্থমেলা ও জাতীয় কবিতা উৎসব। বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় গ্রন্থমেলা। আর কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার সংলগ্ন মাঠে। গ্রন্থমেলা আয়োজিত হয়ে থাকে মাসব্যাপী এবং কবিতা উৎসব হয়ে থাকে দু’দিনব্যাপী। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৮৭ সালে দেশের প্রগতিশীল কবিবৃন্দ যখন জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করেন, সে সময় উৎসবের দিন নির্ধারণ করা হয় ভাষার মাসের সূচনা দিবসটি স্মরণে রেখে। এবারের ৩৩তম জাতীয় কবিতা দিবসের আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘শুভ’ শক্তির জয় হয়েছে। অশুভ শক্তির পরাজয় হয়েছে। যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে ধারাবাহিকতা চলছে তা অক্ষুণ্ণ রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখবে। সে প্রেক্ষিতে এবারের উৎসবের মূলমন্ত্র- ‘জয় বাঙালীর জয় কবিতার’ নামকরণ যথার্থ হয়েছে। কবিতাপ্রেমীদের প্রত্যাশা শুভ শক্তির পক্ষে বিজয় গাথা এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণের পাশাপাশি সাহিত্যগুণসম্পন্ন নান্দনিক মানসম্পন্ন কবিতা যেন শুনতে পাওয়া যায়। ১ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় কবিতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পরিষদ। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাসই নয়, মাসটি মাতৃভাষার প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসে। বাঙালীর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেজন্য বিশেষ গৌরব করার কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু যে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাহান্নোতে মাতৃভূমির অকুতোভয় সন্তানরা আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন, সে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষায় ব্যর্থ হলে পরম গৌরবময় সেই আত্মদান বৃথা যাবে। তাই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো বাংলা ভাষার স্বাতন্ত্র্য, মান এবং সৌন্দর্য যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সে লক্ষ্যে সক্রিয় থাকা। মাতৃভাষা সহজাতভাবেই মানুষ আয়ত্ত করে থাকে বটে, যদিও তার চর্চা বা প্রয়োগে সচেতন না হলে সে ভাষার সুস্থতা ও বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। ভাষা ব্যবহারে হেলাফেলা ও অসতর্কতার কারণে রুদ্ধ ও দূষিত হয়ে উঠতে পারে প্রাণের ভাষাÑ এটা মনে রাখা কর্তব্য। ভাষার মাস তাই ভাষার প্রতি ভালবাসা প্রকাশের পাশাপাশি দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতনতার মাসও। ভাষার মাসে বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের ভালবাসা জাগিয়ে তোলা এবং ভাষা-সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটি তাৎপর্যপূর্ণভাবে শুরু করা এবং বছরভর তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়োজন। নবীন-তরুণ শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, আকাক্সক্ষা আর স্বপ্নের আদান-প্রদান মাতৃভাষার মাধ্যমেই সবচেয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হতে পারে। আর এটাও অনস্বীকার্য যে, ভাষার প্রতি ভালবাসা লালনের মধ্য দিয়ে নিজস্ব ভাষাভাষী মানুষের প্রতি প্রেম ও মমতা তৈরি হয়, যা সুখে-দুঃখে, দুর্যোগে-সুযোগে একে অন্যকে পাশে রাখে। আশঙ্কার বিষয় হলো বাংলা ভাষায় ইংরেজীর প্রবল অনুপ্রবেশ ঘটছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী। লক্ষ্য রাখতে হবে পরিচর্যার অভাবে যেন বাংলা ভাষা রুগ্ন না হয়ে যায়। গ্রন্থমেলায় আগত লেখক-পাঠকদের মিলনমেলায় এসব বিষয় উঠে আসুক। অমর একুশে গ্রন্থমেলা দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক ঘটনা। বছরের এই একটি মাসের জন্য লেখক-পাঠক-পুস্তক ব্যবসায়ীরা আগ্রহভরে প্রতীক্ষায় থাকেন। ভাষার প্রতি ভালবাসা ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ এবং ভাষাকেন্দ্রিক সৃষ্টিশীল কর্মকা-ের প্রাণোচ্ছলতা ঝুঁকি, শঙ্কা বা কোন ধরনের নাশকতায় যেন স্তিমিত না হয়ে পড়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের ওপরই ভরসা করে আছে দেশের মানুষ।
×