ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুরের মূর্ছনায় মাতল রাতের ঢাকা

প্রকাশিত: ১৩:০০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

সুরের মূর্ছনায় মাতল রাতের ঢাকা

সঙ্গীত আমাদের শুদ্ধ পথে চলতে সাহায্য করে। মনের কালো দূরীভূত করে সেখানে আলোর স্পর্শ আনে। সঙ্গীতের এ প্রভাব তাত্ত্বিকভাবেই স্বীকৃত। সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, মনের কালো দূরীভূত করে আলোতে আনতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ‘সঙ্গীত উৎসব-২০১৮’। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীরা অংশ নেন এই উৎসবে। রোববার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। শুরুতে সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘জয় হোক, শান্তির জয় হোক’ এবং ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ গান দুটি। এরপর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানসহ অন্য অতিথিরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান টুম্পা সমদ্দার। তিনি বলেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আমাদের মনের কালিমা দূর করে সামনে এগোনোর প্রেরণা জোগায়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এমন একটি মাধ্যম, যা আমাদের খারাপ থেকে দূরে টেনে এনে শুভ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। উদ্বোধনী বক্তব্যে আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছর আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এমন উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এ আয়োজন এবারই প্রথম। এছাড়া এবারের উৎসবে নতুন রং আছে, নতুন সুর আছে। তিনি বলেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আদি অকৃত্রিম। আর এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা আশা করি তা আরও ফলপ্রসূ হবে। বাংলার মানুষ অনেক উদার ও মানবিক। কারণ তাদের মধ্যে সুর আছে। যাদের মাঝে সুর থাকে, রং থাকে, তারা মানবিক হয়। সুরের ধারা যত বহমান হবে জাতি এগিয়ে যাবে। ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. নীপা চৌধুরী বলেন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ অবদান আছে এবং তারা এক্ষেত্রে কাজ করে চলেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আজকের যে সংযোগ, তা অনন্য। উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চে সম্মেলক সঙ্গীত নিয়ে হাজির হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রিয়াঙ্কা গোপের পরিচালনায় রাগ পটদীপ ও স্বরূপ হোসেনের পরিচালনায় সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দের পরিবেশনার মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের শুরু হয়। চট্টগ্রামের স্বর্ণময় চক্রবর্তীর কণ্ঠ সঙ্গীতের পর তবলা বাদনে মাতিয়ে দেন ভারতের বিশ্বজিৎ সাহু। এরপর একে একে মঞ্চে উঠে আসেন অসিত রায়, ফিরোজ খান। শ্রীলঙ্কা থেকে আগত চিন্তক প্রগীত মেড্ডেগোডা পরিবেশন করেন রাগ শ্রী, খাম্বাজ ঠুমরী। সেদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় অসিত দে, স্বাগতা মুখার্জি (ভারত) ও ড. ঋতুপর্ণা চক্রবর্তীর ধ্রুপদ রাগ কামোদ পরিবেশনের মাধ্যমে। দ্বিতীয় দিন ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যার শুরুতে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচালনায় সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন রাগ দরবারি। এরপর বাঁশি হাতে মঞ্চে আসেন মুর্তজা কবির খান। স্বরূপ হোসেনের তবলা সঙ্গতে রাগ হংসধ্বনিতে তিনি শ্রোতাদের নিয়ে যান অন্য ভুবনে। প্রিয়াঙ্কা গোপের রাগ সরঃস্বতীর পর মঞ্চে আসেন বাদ্যযন্ত্র হিসেবে এ¯্রাজকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া ভারতের শুভায়ু সেন মজুমদার। পরিবেশন করেন ঝিঁঝিটি, পিলো। তার এ¯্রাজে তুমি রবে নীরবের সুরে- নীরব, স্তব্ধ শ্রোতা। সারোদে ইউসুফ আলী খান, বেহালায় শিউলি ভট্টাচার্য, অনীল কুমার সাহা সুরের জাদুতে মাতিয়েছেন দর্শকদের। মালকোষ রাগে দর্শকদের সুরের পিপাসা মিটিয়েছেন সঙ্গীতাচার্য রেজওয়ান আলী। তীব্র শীত উপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা শ্রোতা ফিরে গেছেন তৃপ্ত হৃদয়ে।
×