ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খোকন ভূঁইয়া

বছর শুরুতে নেই নতুন ছবি

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

বছর শুরুতে নেই নতুন ছবি

প্রতি নতুন বছর শুরু হয় ভাল থাকার প্রত্যাশা নিয়ে। আর তাই আমাদের দেশের সিনেমাপ্রেমীরা আশায় বুক বাঁধে নতুন বছর নতুন ছবির। কিন্তু আমাদের ঢাকাই চলচ্চিত্রের নতুন বছর হতাশা দিয়েই শুরু হলো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ যেন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প। কিছুতেই বিপযর্য় কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের সবচেয়ে বড় এই বিনোদন মাধ্যমটি। অনেক দিন ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রের অবস্থা ভাল যাচ্ছে না। প্রেক্ষাগৃহ কমার পাশাপাশি কমছে নতুন সিনেমা মুক্তির সংখ্যাও। গত তিন বছরে সিনেমার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০১৫ সালে মোট ৬৭টি সিনেমা মুক্তি পায়। এরপর ২০১৬-১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ছিল ৫৬। ২০১৮ সালে দেশীয় ছবি মুক্তির সংখ্যা ৪৮টি। অবিশ্বাস্য খবর হচ্ছে, নতুন বছর শুরু হয়ে আজ ৩০ দিন পার হয়ে আগামীকাল শুক্রবার ৩১ দিন হবে। দেখতে দেখতে শেষ হতে চলছে মাস। অথচ প্রেক্ষাগৃহে প্রথম মাসে দেশীয় একটি ছবিও মুক্তি পায়নি। যা কিনা চলচ্চিত্রের জন্য অশনিসঙ্কেত। আর নতুন বছর পুরনো ছবিই ছিল হল মালিকদের ভরসা। তাই বলা যেতে পারে ছবি সঙ্কটে ঢালিউড চলচ্চিত্র। তবে একটা বিষয় যোগ করছি যে, গত ৪ জানুয়ারি আমদানি করা ছবি দিয়ে শুরু হয় ঢাকাই ছবির নতুন বছর। জয়া আহসান অভিনীত কলকাতার কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত ‘বিসর্জন’ ছবিটি। একই দিনে মুক্তি পায় ছবি ‘আই এ্যাম রাজ’। আর ছবিটির মানের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রয়েছে অশ্লীলতার অভিযোগ। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা কি ভাবছেন! পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় নতুন বছর শুরু হয়ে একটি মাস শেষ হতে চলছে অথচ প্রেক্ষাগৃহে দেশীয় নতুন কোন ছবি মুক্তি পায়নি। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি? জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় সিনেমা থাকে না বলে রিলিজ করতে পারে না। আবার এমনও দেখা যায় এক দিনে তিন চারটি ছবিও রিলিজ হয়। একেক সময় একেক রকম যায়। তবে আগামী মাসে মুক্তির জন্য অনেক ছবি প্রস্তুত আছে। বিপিএল খেলার সময় কেউ ছবি রিলিজ দিতে চায় না। সবাই বিপিএল খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যার কারণে বছরের শুরুতে নতুন কোন ছবি নেই। এই সময় ছবি রিলিজ হলে আর্থিকভাবে প্রযোজক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে বিবেচনায় ছবি মুক্তি দেয়নি কেউ। আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে। এখন যারা দিচ্ছে না তারা ভাল বলতে পারবে কেন দিচ্ছে না। তবে এ সমস্যা সাময়িক ব্যাপার। আগামী মাসে এটা থাকবে না। সবাই চায় বিনোদন। তবে নতুন বছরের আনন্দ দিগুণ করার জন্য প্রেক্ষাগৃহে ছিল না নতুন কোন ছবি। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দেখার কিছু নেই। বিসর্জন রিলিজ হয়েছে এটা তো পুরনো ছবি নয়! তার ভাষ্য মতে আমদানি করা পুরনো ছবি রিলিজ হলেও সেটি নতুন ছবি এবং তার দাবি মতে, বিসর্জন দেশীয় ছবি। প্রশ্নটি এড়িয়ে তিনি বলেন, সব সপ্তাহের ছবি প্রস্তুত আছে। রেডি ছবির অভাব নেই। ফেব্রুয়ারিতে বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে তিনি এটা স্বীকার করতে রাজি যে, বিসর্জন দর্শকদের মনমত হয়নি তাই হলে গিয়ে ছবিটি কেউ দেখেনি। যারা ছবি নির্মাণ করেন তাদের দর্শক হলে নেয়ার চিন্তা-ভাবনাটা থাকতে হবে বলে মনে করছেন বদিউল আলম খোকন। তিনি আরও বলেন, প্রতি সপ্তাহে ছবি রিলিজ হবে না। এখন বিভিন্ন ধরনের পরিচালক মার্কেটে রয়েছে তারা ছবি নির্মাণ করবে। তাদেরও সুযোগ দিতে হবে। সব মিলিয়েই এগিয়ে যাবে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। সুপারস্টার পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, শাহ আলম কিরণ তাদের নিয়ে ভাল ছবি নির্মাণের চেষ্টা চলছে গত দুই বছর যাবত যোগ করেন বদিউল আলম খোকন। বাংলাদেশ ফিল্ম এ্যান্ড মিডিয়া সোসাইটির সভাপতি ও পরিচালক-প্রযোজক হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, সৎ এবং দেশপ্রেমিক হয়ে দেশের সিনেমার প্রতি আন্তরিক হতে হবে। কানে কানে কথা বলে দেশের সিনেমার প্রসার সম্ভব হবে না। একজনের ছবি মুক্তির দিলে অন্য জন টানাটানি করলে ভাল কাজ হবে না। সবাই সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আমাদের সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ আমাদের দেশের পরিচালক প্রযোজক সবাই প্রতিভাবান। আর নতুন যারা দেশের সিনেমায় আসছেন তারা দারুণ প্রতিশ্রুতিশীল। নতুন বছর দেশের নতুন সিনেমা দিয়ে শুরু হলো না এটা একটি বিপদ সঙ্কেত বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তাই সবাই মিলেমিশে এক সুরে এক সঙ্গে দেশের সিনেমার উন্নয়নে এবং সকল সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসলে ভাল হয়। নতুন এই বছরে নতুন নতুন নানা প্রেক্ষাপটের গল্পে নতুন নতুন সিনেমার মুক্তির প্রয়োজন। প্রথাগত ডিজাইনের বাইরে সিনেমা হতে হবে। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সকল সংগঠনের নেতানেত্রীদের ছাড় দিতে হবে। লিডার সেজে কেবল নিজেই ফিডার খেলে চলবে না। দেশের সিনেমার জন্য সুসংবাদদাতা হিসেবে আমাদের সবাইকে এক জোট হয়ে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষকে সিনেমা হলমুখী করার জন্য নানা রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশে সভা সেমিনার র‌্যালি করতে হবে। খালি নিজেরা নিজেদের মধ্যে একজন অন্য জনকে ফুল দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে মনে মনে বেহুদা শান্তি লাভ করলে হবে না। একটি কথা আমাদের মনে রাখতেই হবে আমাদের দেশের মানুষ নিজের দেশের সিনেমাই দেখতে চায়। কোন বিদেশী ছবি নিজের দেশের সিনেমা হলে গিয়ে কেউ দেখতে চায় না।
×