ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জুয়েনা আক্তার

ঝুঁকিময় কৈশোর প্রেম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

ঝুঁকিময় কৈশোর প্রেম

টিনএজ বা বয়ঃসন্ধিকাল সময়টা হচ্ছে শৈশব ও সাবালকত্বের মধ্যবর্তী মানসিক ও সামাজিক ক্রান্তিকাল। এসময়ে বিভিন্ন ধরনের হরমোন উৎপাদন হয় দেহে এবং শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তবে শারীরিক পরিবর্তনের চেয়ে সেই সময়ের মনোসামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং আচার-আচরণের বিকাশকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রথম যৌবনাগমন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এক প্রক্ষোভময় আলোড়ন সৃষ্টি করে। শৈশবের নির্ভেজাল সময় পেরিয়ে হঠাৎ এই শারীরিক পরিবর্তন মোকাবেলার মানসিক শক্তি অর্জন করা টিনএজদের জন্য দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে যদি সমাজ ব্যবস্থাও হয় রক্ষণশীল, তবে তা যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’ আসলে কৈশোর বয়সটা অন্যরকম। স্বপ্ন দেখার বয়স, স্বপ্নে ওড়ার বয়স, ভুল করার বয়স আর ঠেকে ঠেকে শেখার বয়স। তবে এ সময়ে করা কিছু ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার আগেই জীবন কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ সময়ে অভিজ্ঞতার অভাবে স্বপ্নগুলোও হয় খুব আনাড়ি। এ বয়সে অল্পতেই কাউকে ভাল লাগে। আর ভাললাগাকে ভালবাসা ভেবে তারা ভুল করে। জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। এই আনাড়ি সম্পর্ক বিভিন্ন সমস্যার দুয়ারে ঠেলে দেয় তাদেরকে। টিনএজ প্রেমের কিছু বাস্তব কুফল নিম্নরূপ : মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব : টিনএজ প্রেমের ক্ষেত্রে এটা খুব লক্ষণীয়। কেননা এ বয়সে তারা বাবা-মা থেকে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। বাবা-মাকে শত্রু ভাবতে শুরু করে। শারীরিক সম্পর্ক : অতিরিক্ত আবেগ ও অপরিণত বয়সের ফলে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে অকালে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের শিকার হয়। ফলে তারা শারীরিকভাবে ও অসুস্থতায় ভোগে এবং অবর্ণনীয় সামাজিক হেনস্তার মধ্যে পড়ে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী : কিশোর-কিশোরীরা যখন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরে তখন একে-অপরের প্রতি এত বেশি আবেগতাড়িত হয় যে, লেখাপড়ায় তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্ল্যাকমেলের শিকার : বর্তমানে অনেক কিশোরী টিনএজ প্রেমের ফলশ্রুতিতে ব্ল্যাকমেলের শিকার হচ্ছে। অনেক সময় আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে কিশোরীদের হেনস্তা করা হয়। ফলে তাদের আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ : গ্রাম্যসমাজে বড় হওয়া কোন মেয়ে যখন এ ধরনের সম্পর্কে জড়ায় তখন বাবা-মা এই বিষয়ে অবহিত হলে মানসম্মানের ভয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়। ফলে বাল্যবিবাহ ওই কিশোরীর জীবন প্রদীপকে আরও ক্ষীণ করে দেয়। সামাজিক হেনস্তা : কিশোর-কিশোরীদের প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হলে আত্মীয়-স্বজনের কাছে ও সামাজিকভাবেও হেনস্তার স্বীকার হতে হয় বাবা-মাকে। যা খুবই দুঃখজনক। অতএব, একটি ক্ষতিকর কীট যেমন সুন্দর পুষ্পকে শ্রীহীন করতে পারে, তেমনি টিনএজ প্রেম কিশোর-কিশোরীদের সুন্দর জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। তাই টিনএজ প্রেমের ফাঁদ থেকে সন্তানকে নিরাপদ রাখতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বাবা-মা। যৌনারম্ভে যে দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে সে বিষয়ে সন্তানকে আগেই অবহিত করতে হবে। শঙ্কাহীন চিত্তে পিতামাতাকে সন্তানের বিষয়গুলো বুঝতে হবে, সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×